২৭ আগস্ট ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:২২

করোনাভাইরাস

মৃত্যু না কমায় উদ্বেগ বাড়ছে

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে এখনো সংশয় দূর হয়নি। অন্যদিকে মৃত্যু না কমায় উদ্বেগ বাড়ছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।

করোনা পরীক্ষা পর্যাপ্ত হচ্ছে না। শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছে বহু মানুষ। পরীক্ষার ফলাফল কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল—তা নিয়েও সংশয়ে সবাই। জুনের শুরু থেকে প্রায় তিন মাস ধরে শনাক্ত ও মৃত্যুর তথ্যরেখা নিচে নামানো যাচ্ছে না। কখনো শনাক্ত কিছুটা কমে। তখন বলা হয় সংক্রমণ কমেছে। আবার দুই-এক দিন পরেই যখন ঘুরেফিরে তা আগের সংখ্যায় উঠে যায় তখন সংক্রমণ বেড়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ জানান।

দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি আসলে কোন পর্যায়ে আছে তা নির্ধারণে এখন শনাক্ত বা আক্রান্তের দিকে না তাকিয়ে মৃত্যুকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মৃত্যুর সংখ্যা কেন কমছে না তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

চলতি সপ্তাহে সংক্রমণ কমেছে বলে যখনই তথ্য আসছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে, তখন বিশেষজ্ঞরা মৃত্যুর তথ্য কী এসেছে সেটা দেখতে বলছেন।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সংক্রমণ নিয়ে এক ধরনের সংশয় থাকতে পারে, কিন্তু মৃত্যু যে কমছে না সেটাই আমাদের কাছে বড় চিন্তার ব্যাপার। বরং মাঝে কিছুদিন পরীক্ষা কম হওয়ায় শনাক্ত যেহেতু কম ছিল, তাই মনে হচ্ছিল সংক্রমণ কমেছে। কিন্তু সেটা তো একটানা কমছে না। আবার তো বেড়ে যাচ্ছে। তাই মৃত্যুর কী অবস্থা সেটা ধরে সবার সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কার্যকর ব্যবস্থা বলবৎ রাখতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যেই দেখা যায়, তিন মাস ধরেই প্রতি মাসে মৃত্যু হাজারের ওপরে থাকছে। এমনকি এর মধ্যে গত মাসে ছিল সর্বোচ্চ এক হাজার ২১৪ জন, জুন মাসে ওই সংখ্যা ছিল এক হাজার ১৯৭ জন। অন্যদিকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত চলতি মাসে মৃত্যু হয়েছে ৯৭১ জনের। গত কয়েক দিনের মৃত্যুর সংখ্যাকে বিবেচনায় নিয়ে অনেকেই আশঙ্কা করছেন মাসের বাকি চার দিনের হিসাব যোগ হলে মাস বিবেচনায় আগস্টেও মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, চলতি মাসের গত তিন সপ্তাহের মধ্যে শেষ সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। আবার যদি গত ২৬ জুলাই থেকে এক মাসের হিসাবের তুলনা করা হয়, সেখানেও দেখা যাচ্ছে মাত্র পাঁচ দিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল দৈনিক ২১-৩০ জনের মধ্যে। বাকি পুরো সময়টা মৃত্যু ওঠানামা করেছে ৩০ থেকে ৫৪ জনের মধ্যে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৪ দিন ছিল ৩০-৪০ জনের মধ্যে। ১১ দিন ছিল ৪০-৫০ জনের মধ্যে। এক দিন (গতকাল) ৫০ জনের ওপরে উঠে গেছে।

যদিও এ বিষয়ে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলছেন, মৃত্যুর সংখ্যা যেমন একটানা কমছে না, আবার একটানা বাড়ছেও না। ফলে অন্য সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশ মৃত্যুর দিক থেকে অনেকটাই ভালো অবস্থায় আছে। কারণ এখন পর্যন্ত মৃত্যু ২৪ ঘণ্টার হিসাবে ৬৪ ছাড়িয়ে যায়নি। তাও এক দিন শুধু ৬৪ জন ছিল, আর সাত দিন ছিল ৫০ জনের ওপরে। বাকি সময় মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ জনের নিচেই থাকছে।

অন্যদিকে যারা মারা যাচ্ছে তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রায় ৮০ শতাংশের বয়সই ৫০ বছরের ওপরে। যাদের প্রায় সবার আগে থেকেই কোনো না কোনো স্বাস্থ্যগত জটিলতা ছিল। তবু মৃত্যু যত দ্রুত কমিয়ে আনা যাবে ততই সংক্রমণ পরিস্থিতি আরো স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ।

এ নিয়ে এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে। গতকাল অধিদপ্তরের এক অনুষ্ঠানে মহাপরিচালকের পাশে বসেই অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘তথ্য যা আসছে তাতে তো আমরা দেখছি সংক্রমণ কিছুটা কমের দিকেই আছে। তবে আমাদের এখন চিন্তাটা হচ্ছে মৃত্যু কেন বেশি হচ্ছে সেটা নিয়ে।’

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমি মনে করছি, যারা মারা যাচ্ছে তারা শেষ সময়ে হাসপাতালে আসছে। আবার কেউ কেউ হাসপাতালে আসেও না। এ ক্ষেত্রে আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যাদের কোনো ধরনের কোমরবিডিটি আছে তাদের মধ্যে করোনার কোনো উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তাদের বাসায় রাখা যাবে না। এ বিষয়ে পরিবারের লোকজনকে সচেতন থাকতে হবে। পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকার দরকার নেই। কারণ যাদের কোমরবিডিটি আছে তাদের ঝুঁকি অনেক বেশি। তারা বাসায় থাকলে দ্রুত অবস্থার অবনতি হয়, এরপর যখন হাসপাতালে আসে তখন কিছু করার থাকে না অনেক ক্ষেত্রেই।’

মহাপরিচালকের আরেক পাশে বসা নবনিযুক্ত অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও আইইডিসিআরের সদ্য সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘আমরা যতটুকু পর্যবেক্ষণে পেয়েছি তাতে বলতে পারি দেশে করোনার সংক্রমণ কমেছে। তাই বলে আবার যে এটা বেড়ে যাবে না তা কিন্তু বলতে পারছি না। কারণ অনেক দেশেই আবার বাড়তে দেখা যাচ্ছে।’

এ সময় মহাপরিচালক বলেন, দেশেও বেশ কয়েকজনের মধ্যে দ্বিতীয়বার সংক্রমণের ঘটনা জানা গেছে। ফলে সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে। আর বয়স্কদের ব্যাপারে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2020/08/27/949457