২৬ আগস্ট ২০২০, বুধবার, ৯:৪২

মসিকের সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প

ভিন্ন নাম দিয়ে চলছে গাড়ি কেনা

সড়ক অবকাঠামোয় কিলোমিটারে খরচ ৪.৩৫ কোটি টাকা; ব্রিজে কিলোমিটারে খরচ প্রাক্কলন ৩৪.৪২ কোটি টাকা

সরকারি ও উন্নয়ন কার্যক্রমে ব্যয়ের ক্ষেত্রে সংযত হওয়ার জন্য সকল পর্যায়ে অফিসিয়ালি নির্দেশনা থাকলেও সেটি মানা হচ্ছে না। করোনার কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত। তাই উন্নয়ন প্রকল্পে অহেতুক গাড়ি ও যানবাহন কেনা এবং বিদেশ সফর বা প্রশিক্ষণ থেকে বিরত থাকার জন্যও নির্দেশনা রয়েছে। তার পরও গাড়ি কেনা থামছে না। এখন কৌশল হিসেবে নাম পরিবর্তন করে ফিল্ড সুপারভিশন পিকআপ ও মনিটরিং জিপ মিলে সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে পাঁচটি গাড়ি কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) সড়ক উন্নয়ন ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক নামক প্রকল্পে। ড্রেন, সড়ক ও ফুটপাথ মিলে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে গড়ে ৪.৩৫ কোটি টাকা। আর ব্রিজে কিলোমিটারে ৩৪.৪২ কোটি টাকা খরচ হবে বলে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রস্তাবনার প্রকল্পের ব্যয় বিভাজন থেকে দেখা যায়, ফিল্ড সুপারভিশনের জন্য তিনটি পিকআপ কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। আর এই তিনটি পিকআপের জন্য ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালকের জন্য প্রতিটি প্রকল্পে জিপ কেনা হতো। এবার নামটি পরিবর্তন করে বলা হয়েছে ২টি মনিটরিং জিপ; যার জন্য খরচ প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় (পৃষ্ঠা-৩২৬-৩২৭) বলা হয়েছে, বর্তমানে এই সিটি করপোরেশনে একটি জিপ, ২টি পিকআপ, ২টি কার, ১৮টি মোটরসাইকেল রয়েছে। সেখানে পরিকল্পনা কমিশন নতুন করে এত যান ক্রয়ের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে। একই সাথে সংস্থাটি পরামর্শ দিয়েছে এই খাতে জ্বালানির জন্যও এক কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা কমিয়ে আনা দরকার।

অন্যান্য অবকাঠামো খাতে ব্যয়ের মধ্যে প্রতি কিলোমিটারে সড়ক কার্পেটিং করতে ১ কোটি ৫২ লাখ ২৪ হাজার টাকা, আরসিসি রোড করতে ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, সিসি রোড করতে ৯৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, ড্রেন করতে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, শুধু ফুটপাথে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা খরচ পড়ছে। আরসিসি পাইপ ড্রেন করতে কিলোমিটারে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকার বেশি। আর পাইপ ড্রেনসহ ফুটপাথ করতে খরচ ধরা হয়েছে প্রতি কিলোমিটারে ২ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা; যা রাজধানী ঢাকার চলমান সড়ক উন্নয়ন খাতে খরচের চেয়ে বেশি। প্রকল্পে পরামর্শক খাতে একটি ফার্মের জন্য প্রাক্কলন করা হয়েছে এক কোটি টাকা যে বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি রয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে, ১৮৬৯ সালে স্থাপিত ময়মনসিংহ পৌরসভাটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী। ১৯৭৭ সালে সেটি মিউনিসিপ্যাল কমিটিতে উন্নীত করা হয়। ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল এটিকে সিটি করপোরেশন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সিটি করপোরেশনটিতে কাজ করার মতো বিভিন্ন ধরনের মেশিনারিজ ও যন্ত্রপাতির সঙ্কট রয়েছে। বতর্মানে ৫টি রোড রোলার, একটি বিম লিফটার, একটি পে-লোডার, একটি এক্সাভেটর আছে। অপ্রতুল জিনিস দিয়ে করপোরেশনটি কাজ করতে পারছে না। সিটি করপোরেশনটির জন্য এক হাজার ৫৯৭ কোটি ৫১ লাখ ৯২ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে; যা তিন বছরে সম্পন্ন করা হবে।

প্রকল্পের কাজগুলো হলোÑ ৪৭৪.১৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, ড্রেন নির্মাণ ৩৪৫.৫৩ কিলোমিটার, ফুটপাথ নির্মাণ ১০ কিলোমিটার, ওয়াল নির্মাণ ৩৭.৫৯ কিলোমিটার, ১৩৮ মিটার ব্রিজ নির্মাণ, ২৪২ মিটার কালভার্ট নির্মাণ, ৮টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ এবং বিভিন্ন ধরনের ৩৬টি মেশিনারিজ ও যন্ত্রপাতি কেনা।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, শুধু জলাবদ্ধতা প্রবণ রাস্তাগুলো আরসিসি করার সংস্থান রেখে বাকি রাস্তা কার্পেটিং করা যেতে পারে। স্থানীয় সম্পদের স্বল্পতার কারণে রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণের সংখ্যা ও পরিমাণ কমিয়ে আনা উচিত। প্রকল্পটি হলো সড়ক ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক উন্নয়নের জন্য। কিন্তু এখানে অনেক যন্ত্রপাতি কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রকল্প থেকে এসব বাদ দিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা প্রকল্পে এসব সংস্থান রাখা যেতে পারে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/524076