২৬ আগস্ট ২০২০, বুধবার, ৯:২২

স্বাস্থ্যখাতে নৈরাজ্য

ইবনে নূরুল হুদা : গণমানুষের মৌলিক সমস্যা সমাধানের জন্য রাষ্ট্রীয় ধারণার ব্যুৎপত্তি ঘটেছে। নাগরিকরা সেবা প্রাপ্তির বিনিময়ে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ও ব্যয় নির্বাহের জন্য রাষ্ট্রের অনুকূলে কর প্রদান করে থাকে। সঙ্গত কারণেই আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাষ্ট্র ও নাগরিকের সম্পর্ক খুবই নিবির। তাই রাষ্ট্রকে সফল ও স¦ার্থক করে তুলতে হলে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক।

অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা ও বাসস্থানের মত সুচিকিৎসাও মানুষের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫(ক) ও ১৮(১)-এ চিকিৎসাসেবা ও জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের ভূ-রাজনৈতিক প্রক্ষাপটে রাষ্ট্র গণমানুষের জন্য সুচিকিৎসার নিশ্চিয়তা প্রদান করতে পারেনি বরং চিকিৎসা নামক এই মৌলিক চাহিদাটি পূরণ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। যা আধুনিক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।

আমাদের দেশে চিকিৎসাক্ষেত্রে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতি নতুন কিছু নয়। এমনকি স্বাস্থ্য সেবার নামে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণার অভিযোগ সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে। রয়েছে বড় ধরনের দুর্নীতি ও গণলুটপাটের অভিযোগও। যা দেশের স্বাস্থ্যখাতে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্তে অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং কতিপয় অসাধুচক্র যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করেই বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন কার্যালয়ে কিছু সংখ্যক অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে দুর্নীতির শক্তিশালী বলয় গড়ে ওঠেছে। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ‘সিন্ডিকেট’ গঠন করে স্বাস্থ্যখাতে জনসাধারণের জন্য বরাদ্দ সরকারি অর্থের বড় একটি অংশ লোপাটের অভিযোগ ওঠেছে।

ফলে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বরাবরই। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যখাতে কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি, ওষুধ সরবরাহসহ ১১টি খাতে দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে সংসদেও প্রশ্ন উঠেছে বারবার। প্রধানমন্ত্রী বরাবরই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিলেও বিভীষণদের কারণেই তার সেই ঘোষণা বাস্তবরূপ লাভ করেনি। ফলে দেশের স্বাস্থ্যখাতকে নৈরাজ্যমুক্তও করা যায়নি বরং এর পরিসর আরও বেড়েছে।

সম্প্রতি বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই ভাইরাসে দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ মানুষ আক্রান্ত এবং প্রায় ৪ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। জাতীয় অর্থনীতিতেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব। সঙ্গত কারণেই অতিদরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাঁটাচ্ছেন। দেশের এই ভয়াবহ ক্রান্তিকালে মানুষ যখন নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে তখন এক শ্রেণির বিবেকবিবর্জিত মানুষ নিজেদের আখের গোছানোর বড় সুযোগ হিসেবে এই সময়কে বেছে নিয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, এসব সুবিধাবাদীরা নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে স্বল্প সময়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্বাস্থ্য খাতের এমন অনিয়ম রোধ করার দায়িত্ব যাদের, তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মে জড়িত থাকার অনেক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে দেশের জনস্বাস্থ্যই এখন হুমকীর মুখোমুখি হয়েছে।

করোনার নেতিবাচক প্রভাবে জনজীবন যখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, তখন একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি কথিত স্বাস্থ্যসেবার নামে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে অবৈধ উপার্জনের মোক্ষম হাতিয়ার বানিয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে মতে, করোনা পরীক্ষার কিট আমদানি ও সরবরাহ নিয়ে বড় ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। আরটি-পিসিআর প্রযুক্তির পরীক্ষায় ব্যবহৃত প্রতি সেট কিটের বেসরকারি বাজারমূল্য যেখানে এক হাজার ৪শ থেকে এক হাজার ৬শ টাকা, সেখানে এতদিন তা সরকারিভাবে কেনা হয়েছে দুই হাজার ৭শ টাকা দরে। ফলে প্রতি সেটে এক হাজার ১শ থেকে এক হাজার ৩শ টাকা বেশি দিতে হয়েছে। এরই মধ্যে ১০টি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এই দামে প্রায় ১৫ লাখ কিট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সরবরাহও করেছে বলে জানা গেছে। এক হাজার ১শ টাকা অতিরিক্ত ধরলেও এর জন্য সরকারকে ব্যয় করতে হয়েছে অতিরিক্ত ১৬৫ কোটি টাকা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের পরিচালক জানিয়েছেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বিষয়টি তার গোচরীভূত হয়েছে এবং তিনি প্রতি সেট কিটের দাম ৫শ টাকা কমিয়ে দুই হাজার ২শ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এই ব্যবস্থা নেয়ার পর অনেক সরবরাহকারী কিট সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে কিটের সাময়িক সঙ্কটও দেখা দিয়েছিল। শুধু কিট সরবরাহ নয়, করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া নিয়েও রয়েছে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ। জানা গেছে, এমন অনেক হাসপাতাল বা ক্লিনিককে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যাদের করোনা ভাইরাসের আরটি-পিসিআর পরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য দক্ষ জনবল নেই। আবার আরটি-পিসিআর পরীক্ষার নামে কারা কী করছে, তা মনিটরিংয়েরও ব্যবস্থা নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। ফলে অনুমতিপ্রাপ্ত অনেক প্রতিষ্ঠান করোনামুক্ত থাকার ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রি করে প্রভূত পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। আর এই অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর আগেও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছে। ফলে দেশের স্বাস্থ্যখাত যে একটি অশুভচক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

অনেকটা বাধ্য হয়েই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে নামতে হয়েছে। কমিশন এ খাতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে শনাক্ত করেছে। জাতির এই দুর্দিনে যারা জনস্বাস্থ্য নিয়ে দুর্নীতিতে মেতেছে, তাদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় নেয়ার দাবি উঠেছে সর্বমহল থেকেই। কিন্তু এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন দৃশ্যমান অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি।

আমরা যখন করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছি, তখনই স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর একের পর এক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। দেশের স্বাস্থ্য খাতের এই দুর্নীতি বহির্বিশ্বে আমাদের ভাবমর্যাদা নষ্ট করেছে। ভুয়া করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট, লাইসেন্স ছাড়াই হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার অনুমতি এবং সেখান থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া, যাদের কোনো অনুমতিই নেই, তাদের দিয়ে করোনা টেস্টের নামে ‘বুথ’ তৈরি করে নমুনা সংগ্রহ করা, সবকিছু স্বাস্থ্যখাতের নানা অনিয়ম, অদক্ষতা আর দুর্নীতির চিত্রকে সামনে নিয়ে এসেছে। ফলে কোন ভাবেই স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম আর দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। রিজেন্ট হাসপাতাল আর জেকেজি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সনদ-কান্ড নিয়ে মিডিয়া যখন সোচ্চার, তখন সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে একটি অতি উদ্বেগজনক সংবাদ।

প্রকাশিত সংবাদে বলা হযেছে, স্বাস্থ্যখাতে পাঁচ বছরে সরকারের গচ্চা দুই হাজার কোটি টাকা। চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার নামে এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। সাহেদ, সাবরিনা-আরিফ ‘কাহিনী’ এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। স্বাস্থ্য খাতে কথিত ‘গডফাদাররা’ এতই শক্তিশালী যে, এদের অনেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। গুরতর অভিযোগে সাহেদ, সাবরিনা আর আরিফ গ্রেপ্তার হলেও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে ইতোমধ্যেই। বিষয়টি নিয়ে দুদক তৎপরতা দেখালেও যাদের তৎপর হওয়ার কথা, তাদের নিষ্ক্রিয়তা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে। যা স্বাস্থ্যখাতে নতুন সঙ্কট তৈরি করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য খাতের এই সাগরচুরির ঘটনা একেবারে অভিনব নয়। নিকট অতীতে ৩৭ হাজার টাকায় পর্দা, পাঁচ হাজার টাকায় একটি করে বালিশ কেনার কাহিনীও আমাদেরকে হজম করতে হয়েছে। কোটি কোটি টাকায় কেনা চিকিৎসা সরঞ্জাম বছরের পর বছর বাক্সবন্দি থেকে নষ্ট হয়ে গেছে এ ধরনের একাধিক ঘটনার সংবাদও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এসব অপকর্মের সাথে যারা জড়িত, তাদের কোন শাস্তি হয়েছে বলে জানা যায়নি। আগামী দিনে হবে এমন সম্ভবনারও সৃষ্টি হয়নি।

সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত নিয়ে ধারাবাহিক সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। যা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট করেছে। গত ১০ জুলাইয়ের খবর ছিল, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইতালি ও কোরিয়া। সঙ্গত কারণেই এসব দেশে বাংলাদেশিরা যাওয়ার পথ আপাতত রুদ্ধ হয়েছে। কারণ, ওইসব দেশে যেসব বাংলাদেশি অবস্থান করছিলেন, তারা যখন ফিরে যান, তখন তাদের শরীরে করোনা ‘পজিটিভ’ ধরা পড়েছিল। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইতালি নাগরিকরা করোনা ‘নেগেটিভ’ সার্টিফিকেট নিয়ে রোম বিমানবন্দরে অবতরণ করলে তাদের শরীরে করোনা ‘পজিটিভ’ ধরা পড়ে।

ফলে তাদের আর ইতালি প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। ইতিমধ্যে ইতালি আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে আসা সব ফ্লাইটে বন্ধ করে দিয়েছে। ইতালির পর তুরস্কও ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। এমনকি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশও বাংলাদেশিদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। চীনের চায়না সাউদার্নও ঢাকায় ফ্লাইট চালাচ্ছে না। বাংলাদেশি যাত্রীদের কাছে ভুয়া করোনা ‘নেগেটিভ’ সনদ এর একমাত্র কারণ। এদের অনেকেই করোনা ‘পজিটিভ’ ছিল কিন্তু তারা ভুয়া করোনা ‘নেগেটিভ’ সনদ সংগ্রহ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

র‌্যাব সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানে প্রমাণ পাওয়া গেছে, কথিত হাসপাতালটি কোনো পরীক্ষা না করেই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে করোনা ‘নেগেটিভ’ রিপোর্ট দিয়েছে। এভাবেই অনুমোদন নবায়নহীন হাসপাতালটি প্রায় কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ইতালিতে ঢুকতে না দেওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইতালিয়ান নাগরিকদের অনেকেই ওই হাসপাতাল থেকে ভুয়া রিপোর্ট সংগ্রহ করেছিলেন বলে জানা গেছে।

বিষয়টি শুধু বহির্বিশ্বে আমাদেরকে ইমেজ সঙ্কটে ফেলেনি বরং বৈদেশিক শ্রমবাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এমনতিতেই করোনা ভাইরাসের প্রভাবে আমাদের শ্রমবাজার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তার ওপর করোনার ভূয়া সনদ নতুন সঙ্কটের জন্ম দিয়েছে। কারণ, আমাদের দেশ থেকে লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষ বিদেশে যান, কাজ করেন, বিদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে অনেকে বিদেশে বসবাস করেন।

ইউরোপ আর যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন। এমতাবস্থায় বাংলাদেশি প্রবাসীরা এখন নানা জটিলতায় জড়িয়ে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশনের কড়া নজরদারিতে এখন বাংলাদেশীরা। তারা বাংলাদেশের কোনো রিপোর্ঁকেই গ্রহণ করতে রাজী হচ্ছে না। ফলে নতুন নতুন আইন, বিধিনিষেধ আর ডিপোর্টের মুখোমুখি হবেন প্রবাসীরা। যা প্রবাসীদের নতুন সঙ্কটে ফেলে দেবে।

করোনার ভুয়া রিপোর্টের খবর যখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছে, তখন আরেকটি সংবাদও আমাদেরকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক ‘নো ভারবাল’-এ বহুল আলোচিত ও সমালোচিত রিজেন্ট হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসার জন্য বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য ‘ডেজিগনেটেড’ বা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল (মানবজমিন, ১৪ জুলাই)। অথচ সেই কথিত হাসপাতালে আইসিইউ ও অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা মানসম্মত ছিল না। সেখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই হাসপাতালে বিদেশি কূটনীতিকদের চিকিৎসার কথা বলে আমাদের পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থার দৈন্যতায় আন্তর্জাতিক মহলের কাছে প্রকাশ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বহীনতা, কর্মকর্তাদের অদক্ষতা ও দুর্নীতি, মন্ত্রী মহোদয়ের অসংলগ্ন কথাবার্তা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট করার জন্য সহায়ক হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আমাদের দেশের স্বাস্থ্যখাতে নৈরাজ্য দীর্ঘ দিনের প্রবণতা হলেও করোনা-সংকট আমাদের চোখ খুলে দিতে অনেকটাই সহায়ক হয়েছে। দেশ ও জাতির সঙ্কটকালে যারা জনগণের স্বাস্থ্য সেবার নামে নিজের আখের গোছাতে জনস্বাস্থ্যকে হুমকীর মুখে ঠেলে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার সময় এসেছে। অন্যথায় জাতীয় বিপর্যয় কোন ভাবেই ঠেকানো যাবে না। প্রশ্নবিদ্ধ হবে রাষ্ট্রের কার্যকারিতাও।

https://dailysangram.com/post/425277