২৫ আগস্ট ২০২০, মঙ্গলবার, ১১:৪৫

বিশেষ সুবিধার পরও খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬০০ কোটি টাকা

বিভিন্ন সুবিধা দেয়ার পরও জুন শেষে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। এসব সুবিধার মধ্যে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ গ্রাহককে আগামী ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত না করা ও বিদ্যমান নীতিমালার আওতায় খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলে বিশেষ ছাড় বিদ্যমান রয়েছে। এর পরেও ব্যাংক খাতে মার্চ থেকে জুন প্রান্তিকে ৩ হাজার ৬০৬ কোটি খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়ে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯.১৬ শতাংশ।

ব্যাংকাররা জানান, আগে থেকেই বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ রয়েছে। করোনাকালে নতুন করে কেউ খেলাপি না হলেও আগের খেলাপি ঋণ এই সময়ে আদায় হয়নি বললেই চলে। বিশেষ সুবিধা না থাকলে হয় তো খেলাপি ঋণ অনেক বেড়ে যেত।

বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯.১৬ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯.০৩ শতাংশ।
এ হিসাবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ছিল ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বা ৯.৩২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১১.৬৯ শতাংশ। সেই হিসাবে গত বছরের জুনের তুলনায় এ বছর জুনে অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ কমেছে ১৬ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, এপ্রিল ও মে মাসে সাধারণ ছুটি সহ নানা কারণে গত প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ হয়েছে কম। তবে শিল্প ও সেবা খাতের প্রণোদনার ৩৩ হাজার কোটি টাকা ঋণের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এরই মধ্যে বিতরণ শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ঋণস্থিতি অনেক বাড়বে বলে আশা করা যায়।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাস চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে আঘাত হানে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। এ সংকটকালে ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দেয় সরকার; আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিস্তি না দিলেও খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে না। এর আগে করোনাভাইরাসের কারণে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঋণ শ্রেণিকরণে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মহামারির প্রকোপ দীর্ঘায়িত হওয়ায় আরো তিন মাস বর্ধিত করে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। অর্থাৎ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোনো ঋণের শ্রেণিমান পরিবর্তন করা যাবে না। যে ঋণ যে শ্রেণিতে আছে, সে অবস্থাতেই থাকবে। এর আগে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমাতে সরকারের নির্দেশনায় পুনঃতফসিলে গণছাড় দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড সহ ১০ বছরে ঋণ পরিশোধের সুযোগ পেয়েছে ঋণ খেলাপিরা। ২০১৯ সালের ১৬ই মে নীতিমালায় এ ছাড় দেয়ার পর থেকে বিশেষ বিবেচনা সহ গেল বছর পুনঃতফসিল হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ। এতো সব সুবিধা নেয়ার পরেও ব্যাংক খাতে কমছে না খেলাপি ঋণের পরিমাণ। একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার ফলে নতুন করে কোনো ঋণ আর খেলাপি করা হচ্ছে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরনো কিছু ঋণ খেলাপি করে দেয়ায় জুনে সামান্য বেড়েছে। কিস্তি না দিলেও খেলাপি না করার এই নির্দেশনা তুলে নিলে দেখা যাবে খেলাপি ঋণ অনেক বেড়ে গেছে। অবশ্য ব্যাংকগুলো সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন থেকে সতর্কতা অবলম্বন করছে।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=240230&cat=2