২৪ আগস্ট ২০২০, সোমবার, ১১:১০

লাইসেন্স নবায়নের সময় শেষ

বন্ধের পথে ৩৫শ’ হাসপাতাল

আবেদন জমা পড়েছে ১২ হাজার ১২৭টি, নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ৭ হাজার ৬০৮টি * যারা আবেদন করেনি তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে -সদস্য সচিব টাস্কফোর্স

বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স বা নিবন্ধন নবায়ন সম্পন্ন করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত টাস্কফোর্স নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে রোববার। এ সময়ের মধ্যে নিবন্ধন নবায়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল শাখায় ১২ হাজার ১২৭টি আবেদন জমা পড়েছে।

নবায়ন হয়েছে ৪ হাজার ৫১৯টি লাইসেন্স। এজন্য অপেক্ষমাণ আবেদনের সংখ্যা ৭ হাজার ৬০৮। তবে এখনও আবেদন করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার।

এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য আরও কিছুটা সময় চেয়েছে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। তবে টাস্কফোর্স ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ধরনের প্রতিষ্ঠান এখন থেকে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হবে। এগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে।

২৬ জুলাই কোভিড-১৯ বিষয়ক শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ৮ আগস্ট টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় সভায় বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সভা শেষে জানানো হয়, ২৩ আগস্টের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে যারা পারবেন না তাদের হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে।

অধিদফতরের হাসপাতাল শাখা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সাল থেকে এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বিভিন্ন সময়ে নিবন্ধন নিয়ে সারা দেশে সাড়ে ১৫ হাজারের কিছু বেশি প্রতিষ্ঠান হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক, ব্লাড ব্যাংক পরিচালনা করে আসছে।

৮ আগস্ট টাস্কফোর্সের ঘোষণার পর থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ১২ হাজার ১২০টি আবেদন জমা পড়েছে। এখনও আবেদন করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৭৩টি।

এ পর্যন্ত যেসব প্রতিষ্ঠান অবেদন করেছে তার মধ্যে ৩ হাজার ৩৯০টির কাগজপত্র যাচাইয়ের অপেক্ষায় আছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর কিছু কাগজ পত্রে সমস্যা থাকায় ৩ হাজার ৩০৪টি আবেদন পেন্ডিং রাখা হয়েছে।

২ হাজার ৬৭৫টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ১ হাজার ৫৯৬টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন শেষে রিপোর্ট সম্পন্ন হয়েছে। সব নিয়মনীতি সম্পন্ন করে ৪ হাজার ৫১৯টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে।

তবে ত্রুটিপূর্ণ বা অসম্পূর্ণ আবেদন, দেরিতে আবেদন ইত্যাদি কারণে নির্ধারিত সময়ে লাইসেন্স নবায়ন করতে না পারা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭ হাজার ৬০৮টি।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্য সচিব ও উপসচিব (জনস্বাস্থ্য-১) ডা. শিব্বির আহমেদ ওসমানী যুগান্তরকে বলেন, টাস্কফোর্স ঘোষিত সময়ের মধ্যে যারা আবেদন করেছে কিন্তু এখনও লাইসেন্স প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি তাদের কোনো সমস্যা হবে না।

কারণ তারা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। কিন্তু যারা আবেদনই করেনি, তারা অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হবে। অর্থাৎ তাদের কার্যক্রম বন্ধে আগের সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।

বিভাগ ভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকায় আবেদন করেছে ৩৪৮৫টি, চট্টগ্রামে ২৪৬৭টি, রাজশাহীতে ১৬৬৭টি, রংপুরে ৯৬৪টি, খুলনায় ১৫৯২টি, বরিশালে ৭৪০টি, সিলেটে ৫০৭টি ও ময়মনসিংহে ৭০৫টি।

অপরদিকে লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে- ঢাকায় ১৭৫৪টি, চট্টগ্রামে ৭৬১টি, রাজশাহীতে ৮০৩টি, রংপুরে ১৪১টি, খুলনায় ৪৪৩টি, বরিশালে ৩১৭টি, সিলেটে ২১২টি এবং ময়মনসিংহে ৮৮টির।

অধিদফতরের হাসপাতাল শাখা সূত্রে জানা গেছে, টাস্কফোর্সের ঘোষণার পর বেসরকারি হাসপাতালগুলো লাইসেন্স নবায়নে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এর আগে বেশির ভাগ হাসপাতাল, ক্লিনিক লাইসেন্স নবায়নে অনাগ্রহী ছিল।

এমনকি এখনও বারডেমের মতো প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নবায়নের সব কাগজপত্র দিতে পারেনি। এছাড়া অধিদফতরেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

সারা দেশের ১৫ হাজারের বেশি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক প্রতিষ্ঠান দেখাশোনার জন্য এ শাখায় পরিচালক থেকে শুরু করে মেডিকেল অফিসার মিলিয়ে কর্মকর্তা ১১ জন।

যার মধ্যে একজন পরিচালক, দু’জন উপ-পরিচালক, তিনজন সহকারী পরিচালক এবং ৫ জন মেডিকেল অফিসার। এ বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালনায় এ লোকবল যথেষ্ট নয়।

তাছাড়া যারা আবেদন করেছে তার সবই ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিষয়টি তেমন নয়। কোনো কোনো হাসপাতালের পক্ষ থেকে একাধিক আবেদন করা হয়েছে। যেমন হাসপাতালের জন্য একটি, ডায়াগনস্টিকের জন্য একটি, ব্লাড ব্যাংক থাকলে সেটির জন্য একটি ইত্যাদি।

জানা গেছে, প্রতি বছর লাইসেন্স নবায়ন করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান সেটি মানত না। ফলে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বড় একটি অংশ লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

কিন্তু করোনা চিকিৎসায় যুক্ত রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠলে দেখা যায়, প্রায় ৬ বছর ধরে হাসপাতালটির লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি।

এরপর স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা শুরু হলে দেখা যায় বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতালেরই বিগত ৩-৪ বছরের লাইসেন্স নবায়ন করা নেই।

এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে কারও ২০১৮-১৯, আবার কারও ২০১৯-২০ বর্ষের লাইসেন্স নবায়ন হবে। অর্থাৎ চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের লাইসেন্স নবায়ন বকেয়াই থেকে যাবে।

অধিদফতরের হাসপাতাল শাখা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন ফি এবং নিবন্ধন নবায়ন ফি ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার ও সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এরপর ৪ হাজার ২০০ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার লাইসেন্স নবায়নের আবেদন করলেও বাকি ১১ হাজারের বেশি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক নিবন্ধন ছাড়াই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে।

প্রতি বছর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স নবায়নের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিস্তারিত বিবরণ, সিটি কর্পোরেশনের ছাড়পত্র, কর সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য নথি প্রয়োজন পড়ে।

নিবন্ধন নবায়ন করতে এসব হাসপাতালকে নিয়মিত নোটিশ দেয়ার পাশাপাশি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু বেশির ভাগ হাসপাতাল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপডেট না থাকায় তারা লাইসেন্স নবায়ন করতে চায় না।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মাইনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, টাস্কফোর্সের কঠোরতায় ১২ হাজারের বেশি আবেদন পড়েছে।

যা যাচাই-বাছাই চলছে। তবে যারা এখনও আবেদন করতে পারেনি, তাদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা না নিতে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে বলেছি, তারা যেন ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় দেয়।

যাতে তারা সব নিয়ম মেনে আবেদন করতে পারে। তিনি বলেন, তারা আশা করছেন এরপর থেকে সব প্রতিষ্ঠান অব্যাহতভাবে লাইসেন্স নবায়ন করবে। ২৬ জুলাই কোভিড-১৯ বিষয়ক শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়েছে।

২০১৪ সালে রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি জানা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য অধিদফতর হাসপাতালটির সঙ্গে চুক্তি করার বিষয়টি সম্প্রতি জনসম্মুখে আসে। এরপর থেকেই লাইসেন্স নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/337734