২৪ আগস্ট ২০২০, সোমবার, ১১:০৬

সারাদেশে বন্যার অবনতি দুর্ভোগে লাখ লাখ মানুষ

অমাবস্যার প্রভাব, সাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ ও সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে কয়েক দিন ধরে সারা দেশে ঝরছে বৃষ্টি। টানা বর্ষণের কারণে উপকূলজুড়ে দেখা দিয়েছে অধিক উচ্চতার জোয়ার। ভাদ্রের এই সময়ে এর আগে কখনো এমন উচ্চতায় জোয়ারের পানি দেখেনি উপকূলের মানুষ। এই প্রেক্ষাপটে উপকূলেও হানা দিয়েছে বন্যা। অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের প্রভাবে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়ায় দক্ষিণাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে দেশের লাখ লাখ মানুষ।

এরমধ্যে টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাট সদর মোরেলগঞ্জ, রামপাল, চিতলমারী, সদর উপজেলার নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে এসব উপজেলার কয়েক হাজার মাছের ঘের। নষ্ট হয়েছে সবজি ক্ষেত। বাড়ি ঘরে পানি ওঠায় বিপাকে সেখানকার বাসিন্দারা। অন্যদিকে, বৃষ্টি আর অতি জোয়ারে পিরোজপুরের নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে কঁচা, বলেশ্বর, সন্ধ্যা, কালিগঙ্গা, মধুমতি এবং পোনা নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষজন। পাকা ধান, সবজি ক্ষেত ও মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে কৃষকরা। বৃষ্টির কারণে কর্মহীন পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরও বলছে, এই সময়ে উপকূলে এ রকম জোয়ার আগে দেখা যায়নি। কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণে উপকূলের বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চল এখন পানির নিচে। তিন মাস আগে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তোড়ে সুন্দরবনসংলগ্ন জনপদের বিশাল এলাকার নদীর বাঁধ স্থানে স্থানে ভেঙে গিয়েছিল। ভাঙা বাঁধের স্থানে জোয়ারের পানি আটকাতে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে রিং (বেশ খানিকটা জায়গা নিয়ে আংটির মতো ঘুরিয়ে দেওয়া) বাঁধ দেয়া হয়েছিল। কয়েক দিনের টানা বর্ষণে জোয়ারের তোড়ে গতকাল শনিবার অনেক জায়গায় ভেঙে গেছে এসব রিং বাঁধ।

সাতক্ষীরার কয়রা, শ্যামনগর ও আশাশুনির একাধিক জায়গায় বাঁধের ভাঙা স্থান দিয়ে পানি ঢুকে ফের এলাকা ডুবেছে। এলাকাবাসী আবারও রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। বাগেরহাটে বলেশ্বর নদী পারের বেড়িবাঁধের বাইরের অংশে নদীর তীরবর্তী ছয়টি গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার। ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরায় ভারি বর্ষণ ও পূর্ণিমার জোয়ারে বেশির ভাগ আউশ-আমন বীজতলা, রোপা আউশ, পানের বরজ, শাকসবজিসহ ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। একই সঙ্গে ছোট ছোট খাল-বিলের পানি উপচে ভেসে গেছে কয়েক কোটি টাকার মাছ। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি চরফ্যাশন ও মনপুরার প্রায় ২৫ হাজার চাষি। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে রাজবাড়ীতে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৭ জুন থেকে শুরু হওয়া বন্যার পানি এখনো কয়েকটি জেলা থেকে নামেনি।

আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন জানান, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আগস্টজুড়েই বৃষ্টি থাকবে। তবে আজ সোম ও মঙ্গলবার বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কম থাকতে পারে। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে বাতাসের গতিবেগ থাকে আট থেকে দশ কিলোমিটার। কিন্তু সেটি এখন ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার বেগে বইছে। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হলে বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প ঢুকে স্থলভাগে এসে বৃষ্টির মেঘ তৈরি করে। গতকাল সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে যশোরে, ৮৮ মিলিমিটার। এ ছাড়া কক্সবাজারে ৭০ মিলিমিটার, কুতুবদিয়ায় ৬২ মিলিমিটার।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, তাদের পর্যবেক্ষণে থাকা ১০১টি স্টেশনের মধ্যে পানি বেড়েছে ৫৬টির, কমেছে ৩১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ছয়টি নদীর স্টেশনের পানি। এখনো বিপদসীমার ওপরে রয়েছে আত্রাই, ধলেশ্বরী ও পদ্মা নদীর পানি। টানা ভারি বর্ষণের কারণে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সময় আরো দীর্ঘায়িত হতে পারে।

সিলেট জেলার সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে ৩য় দফায় প্লবিত হয়েছে সিলেট-সুনামগঞ্জ নিম্নাঞ্চল। বিশেষ করে প্লাবিত হয়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল। পানিতে ডুবে গেছে ফসল, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, ভেঙে গেছে বাঁধ, রাস্তাঘাট পানির নিচে।

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়ায় বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি ব্রীজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৫সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। এদিকে চিলমারী উপজেলার কাঁচকোল এলাকায় ভাঙা রাস্তা দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করে চিলমারী ও উলিপুর উপজেলার আরো ১০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত করেছে।

লালমনিরহাটে ৩ দিনের ভারি বর্ষণ ও ভারতের ঢলে তিস্তার পানি ফের বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খুলে দেয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারেজের সবগুলো জলকপাট। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫ হাজার পরিবার।

গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতি অবার অবনতি হয়েছে। তিস্তা নদীর পানি ২/৩ দিন আগে একটু কমলেও লাগাতার বর্ষনের কারণে আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। পানিবন্দির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

সিরাজগঞ্জ জেলার পাঁচটি উপজেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। ভয়াবহ বন্যায় বানভাসিদের দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা তীরবর্তী ৩৩টি ইউনিয়নের ২১৬টি গ্রামের এক লাখ ৫৯ হাজার ১৫৩ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জামালপুরে তিন দফা বন্যায় দীর্ঘ ২৫ দিন যাবৎ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে জেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষ। গতকাল যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৯ সেন্টিমিটা উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

সুনামগঞ্জে তৃতীয় দফা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ। সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ ষোলঘর পয়েন্টে ৮ দশমিক ১২ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিপদ সীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফরিদপুরে পদ্মার পানি বিপদসীমার ১০৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ফরিদপুর সদর উপজেলা, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের শাতাধিক গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় পানির নিচে তলিয়ে গেছে ২৫টির অধিক স্কুল ও মাদ্রাসা।

চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে গ্রাম অঞ্চল ছাড়াও শহরতলির রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পদ্মা-মেঘনায় ঘূর্ণীস্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর উপজেলার রাজ রাজেশ্বর ও হাইমচর উপজেলার নীলকমল ও মধ্যচরে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

মাদারীপুরে বন্যার পানি ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় শিবচর ও মাদারীপুর সদর উপজেলার বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত তিনদিন ধরে হুহু করে পানি বাড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

শরীয়তপুর সদরসহ নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা ডুবে জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

শেরপুরে বৃষ্টিপাত টানা বর্ষন ও ভারতের ঢলের পানির কারণে গত ২৪ ঘন্টায় জেলার নদনদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যহত আছে। ব্রক্ষপুত্র, চেল্লাখালী ও দশানী নদীর বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

মুন্সীগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে। ভাগ্যকুল পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার এবং মাওয়া পয়েন্টে ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফেনী জেলার ৩ উপজেলা ফুলগাজী পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মুহুরী কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, মৎস্যঘের ও বীজতলা এবং নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

সাঘাটায় যমুনার ভাঙ্গনে আশ্রায়ণ কেন্দ্রসহ
এক হাজার বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন
গাইবান্ধা থেকে জোবায়ের আলী : যমুনা নদীর প্রবল স্রোতে সাঘাটা উপজেলায় ২ টি আশ্রায়ণ কেন্দ্রসহ প্রায় এক হাজার পরিবারের ঘরবাড়িসহ বসত ভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গৃহহারা পরিবারগুলো জমি না থাকায় এবং অর্থাভাবে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করতে না পেরে বিপাকের মধ্যে রয়েছে।

সরেজমিনে খোজ নিয়ে জানা গেছে, যমুনা নদীর প্রবল স্রােতে সাঘাটা উপজেলার পাতিলবাড়ি, গাড়ামারা, সিপি গাড়ামারা, কানাইপাড়া, নলছিয়া, কালুরপাড়া, কুমারপাড়া, দীঘলকান্দি, হাটবাড়ি, মুন্সিরহাট, গোবিন্দি, উত্তর সাথালিয়া, দক্ষিণ সাথালিয়, চিনিরপটলসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। অব্যহত ভাঙ্গনে হলদিয় ইউনিয়নের দীঘলকান্দি ও সাঘাটা ইউনিয়নেল উত্তর সাথালিয়া গ্রামের ২ টি আশ্রায়ণ কেন্দ্রসহ প্রায় এক হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি বসত ভিটা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। সাঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট জানান, এবার যমুনা নদীর ভাঙ্গনে উত্তর সাথালিয়া আশ্রয়ণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৪ শত পরিবারের ঘর-বাড়ি বসত ভিটা বিলিন হয়ে গেছে।

হলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী প্রধান জানান, এবার বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকে এই ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে শুরু হয়েছে। অব্যহত ভাঙ্গনে উত্তর দীঘল কান্দি আশ্রায়ণ কেন্দ্র সহ এ ইউনিয়নের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি বসত ভিটা বিলিন হয়েছে। এছাড়া ঘুড়িদহ ইউনিয়নের চিনিরপটল গ্রামে নদী ভাঙ্গনে প্রায় ৫০ টি পরিবারের ঘর-বাড়ি বসত ভিটা বিলিন হয়েছে। এই সব গৃহহারা লোকজনের বাড়ি-ঘর নির্মাণ করারমত জমি না থাকায় এবং অর্থাভাবে তারা বিপাকের মধ্যে থেকে দিনাতিপাত করছেন। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান, উপ-প্রকৌশলী রেজাউর রহমান রেজা, ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
নেত্রকোনায় ভাঙনের কবলে নদী তীরবর্তী এলাকা

নেত্রকোনা সংবাদদাতা: নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় নদীর ইজারাবিহীন এলাকা থেেৈক দিনের অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব, ভাঙনের কবলে নদী তীরবর্তী বাসিন্দা-বসতি ও ফসলি জমি!

জেলা সদরের ঠাকুরাকোনা ও বারহাট্টা উপজেলার কংস নদী। দূর্গাপুর উপজেলা সুমেশ্বরী নদীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। অন্যদিকে হুমকির মুখে ফেলছে নদী তটবর্তী বসতি ও কৃষিক্ষেত্র।

অবৈধ ও অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বারহাট্টা ফকিরের বাজারে যাওয়ার রাস্তা ও ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে পড়ছে। ফলে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকার লাখো মানুষ।

এ অবৈধ বালু নিয়ে রাতের আধারে বালুবাহী ট্রাক ও লড়ি-ট্রলি নির্দ্বিধায় চলার কারণে কোটি কোটি টাকার রাস্তা ভেঙ্গে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার ঠাকুবাকোনা,বারহাট্রা, ও দুর্গাপুর এলাকা প্রকাশ্য বালু উত্তোলন করছেন। অবৈধভাবে নিষিদ্ধ সাদা বালু উত্তোলন করে চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা বানিজ্য
এব্যাপারে বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোরশেদ জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের নিষেধ করে দিয়েছি। এরপরও যদি বালু উত্তোলন করে তাহলে তার বিরোদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্টেট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, গত বছর অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের দ্বায়ে বড়য়ারী এবং ইউপি সদস্য সহ বালু ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়, এবছর যদি তারা আবারও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তাহলে তাদের বিরোদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত বছর (২০১৯ইং) ০৫ নভেম্বর অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দ্বায়ে বারহাট্টা উপজেলার ২নং সাহতা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুর ইসলাম কাজলকে ৬ লাখ টাকা,সদর উপজেলার ঠাকুরাকোণার মোঃ রফিকুল ইসলাম রবিকে ২ লাখ টাকা ও মোঃ আব্দুল মালেককে ২ লাখ টাকা সহ মোট ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড আদায় করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এবং এরই সাথে তাদের উত্তোলিত বালু প্রকাশ্য নিলামে ৩ লাখ ৪১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

অঝোর বৃষ্টিতে কর্মহীন খেটে খাওয়া চাষিরা
চরফ্যাশন (ভোলা) সংবাদদাতা : দীর্ঘ ১০ দিন ধরে টানা বর্ষণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার উপকূলবর্তী নিম্নাঞ্চল ও বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের হাজারো খেটে খাওয়া চাষি,দিন মজুর ও জেলেরা।
ধারাবাহিক এ বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে শতশত মাছের ঘের ও পুকুর এবং খামার।

ডুবেছে হাজার হেক্টর ফসল ও সবজির ক্ষেত খামার।
অঝোর বৃষ্টিতে কাজকর্ম করতে না পেরে অসহায়ভাবে দিনাতিপাত করছে উপকূলের হাজারো জেলে পরিবার।
স্থানিয় সামরাজ ও বেতুয়া স্লুইস ঘাট এলাকার একাধিক জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, বাতাস তুফান ও বৃষ্টির জন্য ঘরবন্দী জেলেরা নদী এবং সাগরে যেতে না পাড়ায় মাছের চালান পাঠাতে পারছেনা ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও কয়েকদিন লঞ্চ ও নৌ ট্রলার বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাজার সহ বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারে মাছ রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে।

এদিকে উপজেলার শশিভূষণ, আঞ্জুরহাট, মানিকা, দক্ষিণ আইচা, দুলারহাট, আসলামপুর, মাদ্রাজ ও আমিনাবাদ ইউনিয়নের সবজি খামারীদের বিভিন্ন তরি তরকারি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আড়তদারদের প্রচুর দামে তরকারী আমদানি করতে হচ্ছে। ফলে স্থানীয় বাজারে তরি তরকারির দামও বেড়েছে কয়েকগুণ।

চরাঞ্চলের শুটকিপল্লীতেও কর্মহীন হয়ে পড়েছে শতশত কর্মী, নুরাবাদের শুটকি প্রস্তুতকারক নারায়ণ চন্দ্র জানান, বর্ষার শুরু থেকেই টানা বৃষ্টির জন্য ঘরবন্দী হয়ে আছি। কাজকর্ম না থাকায় এবং বৈরী আবহাওয়ায় শুটকি উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।

এবিষয়ে উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, ইলিশের ভরা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের জন্য চরফ্যাশন উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার জেলে নদী-সাগরে যেতে পাড়ছেনা এবং ঘরবন্দী। এছাড়াও স্থানীয় আড়াই হাজার পুকুর ও মাছের ঘের তলীয়ে যাওয়ায় প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতী হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, জেলে ও কৃষকসহ ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২০টন চাল বরাদ্দ হয়েছে এবং তা বিতরণ করা হচ্ছে।

https://dailysangram.com/post/425071