২৩ আগস্ট ২০২০, রবিবার, ২:১২

দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় বাংলাদেশ একদিনে আরো ৪৬ জনের মৃত্যু

করোনা বিরতিহীন

বিরতিহীনভাবে বাড়ছে দেশে করোনা সংক্রমণ। প্রতিদিনই আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন এই ভাইরাসে। সরকারি হিসাবে প্রাণহানির সংখ্যাও ৩০ থেকে ৫০- এর মধ্যে উঠানামা করছে। সরকার সংশ্লিষ্টরাই বলছেন, স্থির হয়ে আছে করোনা পরিস্থিতি। সংক্রমণ না বাড়লেও কমছে না। সংক্রমণ শুরুর প্রায় ছয় মাস হতে যাচ্ছে। ছয় মাসেও পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় দেশের অর্থনীতি ও সার্বিক পরিস্থিতি জটিল অবস্থার দিকে যাচ্ছে। জনজীবন স্বাভাবিক করার চেষ্টা হলেও সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে এখনো শঙ্কা চারপাশে।

সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়ায় বিশ্বের অনেক দেশকে পেছনে ফেলে সর্বোচ্চ আক্রান্ত দেশের তালিকায় নাম উঠছে বাংলাদেশের। এতোদিন দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ এবার পাকিস্তানকে টপকে সংক্রমণের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আরো ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৯০৭ জনের মৃত্যু হলো। নতুন করে ২ হাজার ২৬৫ জন শনাক্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৯২ হাজার ৬২৫ জন শনাক্ত হয়েছেন। ওদিকে পাকিস্তানে সর্বমোট শনাক্ত হয়েছেন ২ লাখ ৯২ হাজার ১৭৪ জন। দেশটিতে করোনায় ৬ হাজার ২৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি তুলনামূলক অনেক কম। নেপালে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৭০৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৬ জন। মালদ্বীপে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৯৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় সর্বশেষ একদিনে ২৩ জনের শরীরে করোনা ধরা পড়েছে। ভুটানে সর্বশেষ একদিনে ৩ জন সংক্রমিত হয়েছেন। দেশটিতে এখনো কোনো মৃত্যুর ঘটনা নেই।

তবে দক্ষিণ এশিয়ায় আক্রান্তের দিক দিয়ে সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকা ভারতে সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। সর্বশেষ একদিনে ৬৯,০৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৯৫৩ জনের। আফগানিস্তানেও এখন সংক্রমণ আগের তুলনায় কমে এসেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৫৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন।
ওদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরো ২ হাজার ৯৫২ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন এক লাখ ৭৫ হাজার ৫৬৭ জন।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত করোনা বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৯১টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১০ হাজার ৫৯৫টি এবং পরীক্ষা হয়েছে ১১ হাজার ৩৫৬টি। এখন পর্যন্ত ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৮৫৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৬০ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৩৪ শতাংশ। গত এক সপ্তাহে মৃতের হার গড়ে দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বেড়েছে।

মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩৬ জন পুরুষ এবং ১০ জন নারী। এখন পর্যন্ত পুরুষ মারা গেছেন ৩ হাজার ৮২ জন এবং নারী ৮২৫ জন।

একদিনে মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরের উপরে ৩৩ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন।
বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ৮ জন, খুলনা বিভাগে একজন, বরিশাল বিভাগে দুইজন, সিলেট বিভাগে দুইজন এবং রংপুর বিভাগে একজন রয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৫ জন এবং বাসায় একজন।

গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৫৫০ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ২০ হাজার ৬২০ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২২৫ জন, এখন পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৫৪৬ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৬৬ হাজার ১৬৬ জনকে। প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে একহাজার ২১৯ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়া পেয়েছেন একহাজার ৬৮৫ জন। এখন পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন ৪ লাখ ২৬ হাজার ১৩৭ জন। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৪০০ জনকে। এখন কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৩ হাজার ২৬৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় করোনাসংক্রান্ত ফোনকল এসেছে ৫০ হাজার ৯৭৩টি এবং এ পর্যন্ত মোট কল এক কোটি ৯২ লাখ ৬৮ হাজার ৩৫৫টি।

https://www.mzamin.com/article.php?mzamin=239967&cat=2