২৩ আগস্ট ২০২০, রবিবার, ১:৩৪

চট্টগ্রামে চার ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা

ইয়াবা উদ্ধারের বিষয়ে কিছুই জানেন না সাক্ষী

চট্টগ্রামে চার ব্যক্তির কাছ থেকে ইয়াবা উদ্ধারের বিষয়টি জানেন না পুলিশের করা মামলার দুই সাক্ষী মো. রুবেল (২২) ও মোবারক হোসেন (২৮)। এমনকি মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদেরও চেনেন না তারা। শুধু একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েই পুলিশ তাদের ইয়াবা মামলার মতো স্পর্শকাতর মামলায় সাক্ষী করেছে। শনিবার যুগান্তরকে এমনটাই বলেছেন ‘ইয়াবা উদ্ধার’র অভিযোগে পুলিশের করা একটি মামলার দুই সাক্ষী। মামলার চার আসামির মধ্যে একজন জামিনে বের হয়ে ইয়াবা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ৮ পুলিশ সদস্য ও এক সোর্সের বিরুদ্ধে বুধবার আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনারকে (উত্তর-জোন) তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। এদিকে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করার পর এ দুই সাক্ষী রয়েছেন অজানা আতঙ্কে। পুলিশ তাদের থানায় যাওয়ার জন্য বারবার তাগাদা দিচ্ছে।

জানা যায়, ১৩ জুলাই রাতে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন মুরাদনগরের জামাল কলোনির ১৫ নম্বর কক্ষ থেকে ইয়াবাসহ চার ব্যক্তিকে গ্রেফতার দেখিয়ে পরদিন মামলা করেন সংশ্লিষ্ট থানার এএসআই অমিত ভট্টাচার্য। মামলায় আসামি করা হয় বায়েজিদ থানা এলাকার বাসিন্দা আবদুল ওয়াহেদ, মো. হোসেন, মো. হানিফ ও আবুল হোসেনকে। এ চার ব্যক্তিকে জামাল কলোনির ১৫ নম্বর কক্ষ থেকে ইয়াবাসহ গ্রেফতারের বিষয়টি উল্লেখ করা হয় এজাহারে। এর মধ্যে জব্দ তালিকা অনুযায়ী- হাজী মোহাম্মদ হোসেনের (৪০) প্যান্টের পকেট থেকে পলিথিন প্যাকেটে মোড়ানো অবস্থায় ২০ পিস, মো. আবদুল ওয়াহেদের (২৮) পায়জামার প্যান্টের পকেট থেকে পলিথিন প্যাকেটে মোড়ানো অবস্থায় ২৫ পিস, মো. হানিফের (৪৫) প্যান্টের পকেট থেকে পলিথিন প্যাকেটে মোড়ানো অবস্থায় ১৫ পিস এবং মো. হোসেনের (২৮) শার্টের বাম পকেট থেকে পলিথিন প্যাকেটে মোড়ানো অবস্থায় ২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। থানার সিভিল টিমের প্রধান এসআই গোলাম মো. নাসিম হোসেন এ জব্দ তালিকা তৈরি করেছিলেন।

তালিকায় সাক্ষী হিসেবে মোবারক হোসেন ও মো. রুবেলের স্বাক্ষর রয়েছে। এ মামলায় ২৩ দিন পর জামিনে বের হন আবদুল ওয়াহেদ। মিথ্যা ইয়াবা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ এনে বুধবার আদালতে মামলা করেন তিনি। এতে আসামি করা হয়েছে- বায়েজিদ বোস্তামী থানার এএসআই অমিত ভট্টাচার্য, এএসআই মো. শরিফুল ইসলাম, এসআই গোলাম মো. নাসিম হোসেন, এএসআই মো. আশরাফুল ইসলাম, কনস্টেবল মো. সোলাইমান, কনস্টেবল ফৌজুল করিম, পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম ও এসআই মো. নুরুন্নবীকে। এছাড়া ডোনার রুবেল নামে এক ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে।

মামলার দুই সাক্ষীর একজন হলেন বায়েজিদ বোস্তামী থানার আলীরগর এলাকার মোবারক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি ওই এলাকার বেড়াতে গিয়েছিলাম। লোকজনের আর্তচিৎকার শুনে আমি ওই স্থানে যাই। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই পুলিশ আমাকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলে, কেন স্বাক্ষর দেব জানতে চাইলে পুলিশ কোনো প্রশ্ন না করে স্বাক্ষর করতে অনেকটা বাধ্য করে। পরে জানতে পেরেছি আমাকে একটি ইয়াবা উদ্ধার মামলায় সাক্ষী বানানো হয়েছে। অথচ আমি ইয়াবা উদ্ধারের কোনো কিছু দেখিনি।

মামলার অপর সাক্ষী বায়েজিদ বোস্তামী থানার বার্মা কলোনি এলাকার মো. রুবেল বলেন, ‘আমি ইয়াবা উদ্ধারের বিষয়ে কিছুই জানি না। ১৩ জুলাই রাতে আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে অতিথি এসেছিল। ওইদিন এলাকার রাজিব মোটরসাইকেল নিয়ে আমার বাড়ি আসেন। খাওয়া-দাওয়া করে যাওয়ার সময় দেখতে পান তার মোটরসাইকেলের হুক নষ্ট হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি চেঁচামেচি করেন। এ বিষয়ে মামলা করার জন্য রাজিব আমাকে থানায় নিয়ে যান। সেখানে পুলিশ একটি সাদা কাগজে আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয়। কি কারণে এ স্বাক্ষর নিয়েছিল তা আমাকে বলেনি। ক’দিন আগে জানলাম আমাকে নাকি পুলিশ ইয়াবা মামলায় সাক্ষী করেছে। থানায় গেলাম মোটরসাইকেল নষ্টের বিষয়ে, সাক্ষী করা হল ইয়াবা মামলার। কার কাছ থেকে, কিভাবে, কখন পুলিশ ইয়াবা উদ্ধার করেছে আমি তো কিছুই জানি না। পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর এখন আমাকে থানায় যাওয়ার জন্য বারবার ফোন দেয়া হচ্ছে। এখন আমি পরিবার-পরিজন নিয়ে ঝামেলায় পড়েছি।’

মামলার বাদী আবদুল ওয়াহেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘অহেতুকভাবে পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করেছে। আমরা চারজন ওই সময় একটি জমি বিক্রির বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করছিলাম। পুলিশ মনে করেছে আমরা জমি-জমার ব্যবসা করি। আমাদের অনেক টাকা আছে। বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় ব্যবসা করতে হলে পুলিশকে টাকা দিতে হবে- এমনটাই ভাব তাদের। টাকা না দেয়ায় পুলিশ আমাদের ইয়াবা মামলায় ফাঁসিয়েছে। টাকা না দিলে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার ভয়ও দেখিয়েছিল। অন্যায়ভাবে পুলিশ এমন কাণ্ড করবে, একজন নিরীহ মানুষকে টাকার জন্য ইয়াবা মামলায় ফাঁসিয়ে জীবন নষ্ট করবে- এমনটা মেনে নেয়া যায় না। আমি বিনা দোষে ২৩ দিন কারাভোগ করেছি। আমি এর বিচার চাই। আমাকে অন্যায়ভাবে পুলিশ ফাঁসিয়েছে এর যথেষ্ট প্রমাণ আমার আছে।’

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/337399