২৩ আগস্ট ২০২০, রবিবার, ১:২৯

ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি কোটি টাকার পণ্য আমদানি!

প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব নেই। যে ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে ওই ঠিকানায় প্রতিষ্ঠানের মালিক বা কর্মকর্তা-কর্মচারী কাউকে পাওয়া যায়নি। অথচ তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে কোটি কোটি টাকার পণ্য নিয়ে এসেছে। ভ্যাট গোয়েন্দাদের তদন্তে এমনই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সংস্থাটি ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের আবেদন করেছে।

ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর সূত্র জানায়, সম্প্রতি মংলা বন্দরে আটক চার কনটেইনার নিষিদ্ধ পোস্তদানার আমদানিকারক আয়েশা ট্রেডার্স ও তাজ ট্রেডার্সের অতীতে টেনিস বল ও পার্টি স্প্রে ঘোষণায় ১৫টি চালান খালাসে ব্যাপক জালিয়াতির তথ্য উদঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দারা। এসব ছাড়কৃত চালানে প্রকৃত ঘোষণা অনুযায়ী পণ্য ছিল কি না এবং তারা এসব পণ্যে স্থানীয় পর্যায়ে প্রযোজ্য ভ্যাট পরিশোধ করেছে কি না তা তদন্ত শুরু করেছেন ভ্যাট গোয়েন্দারা।

অনুসন্ধানে তাদের মনোনীত পূবালী ব্যাংক, বেগমবাজার শাখা থেকে তলবকৃত কাগজপত্র ও আমদানি তথ্যে অনেক গরমিল পাওয়া গেছে। ভ্যাট নিবন্ধন অনুসারে তাদের স্থাপনা ঢাকার চকবাজারে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভ্যাট নিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্সে তাজ ট্রেডার্সের (বিন ০০২১৮৯২৩৩-০২০৬) ঠিকানা দেয়া আছে ১০/বি সোয়ারিঘাট, ঢাকা। আর আয়েশা ট্রেডার্সের (বিন ০০১৭৩১৮৬৪-০২০৬) ৬/১০-ডি, চম্পাতলী, চকবাজার, ঢাকা ঠিকানা দেয়া আছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান দুটো যথাযথভাবে ভ্যাট রিটার্ন দেয়নি। স্থানীয় ভ্যাট অফিসে নানা ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদের কর আদায়কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এতে ধারণা করা যায়, অতীতে তারা অনুরূপভাবে ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য আমদানি করে অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত ছিল।
ভ্যাট নিবন্ধন অনুযায়ী ঢাকায় প্রতিষ্ঠান দুটোর অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়া এবং আমদানিকৃত পণ্যের যথাযথ ব্যবসায়িক হিসাব না পাওয়ায় ভ্যাট গোয়েন্দাদের তদন্তের অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার আমদানিকারকদ্বয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বিন (বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) ফ্রিজ করা হয়েছে।

ভ্যাট গোয়েন্দাদের ধারণা, তদন্ত শেষ হওয়ার আগে তারা অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে ফেলতে পারেন। অন্য দিকে তারা আমদানির অপেক্ষমাণ আরো কোনো চালান দ্রুত খালাস করিয়ে নিতে পারেন।

গতকাল বেগমবাজার পূবালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে নোটিশ দিয়ে অন্যান্য ব্যাংকে তাদের নামে খোলা সব অ্যাকাউন্ট অপরিচালনযোগ্য করা হয়েছে। একই সাথে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অ্যাসাইকুডা সফটওয়্যারে তাদের বিন লক করা হয়েছে। ভ্যাট আইনের ধারা ৮২, ৮৩ ও ৯১ অনুসারে এই কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। মেসার্স তাজ ট্রেডার্সের বিল অব এন্ট্রি হচ্ছে ৯৬২৮, তারিখ : ৯/৬/২০২০। অন্য দিকে আয়েশা ট্রেডার্সের বিল অব এন্ট্রি হচ্ছে ১০১০৭, ১৮/৬/২০২০; ৮৯১, ১৯/১/২০২০; ৪০৪৭, ২৬/২/২০২০; ৪৩০০, ২/৩/২০২০; ৪৬৫০, ৮/৩/২০২০; ৯৪৯৬, ৭/৬/২০২০; ৯৯০৫, ১৪/৬/২০২০; ৯৯০৬, ১৪/৬/২০২০; ১০২১৭, ২৪/৬/২০২০; ১০৩৬৭, ২৯/৬/২০২০; ২১৯৫৯, ২৭/১১/২০১৯; ২৩২০৬, ১৫/১২/২০১৯; ২৩৪৩৪, ১৮/১২/২০১৯; ২৩৮২২, ২৪/১২/২০১৯।

ব্যাংকের তথ্যমতে, তাজ ট্রেডার্সের মালিক মো: সাবির হোসেন, এনআইডি ৭৭৫৭৫৬৫৯৮৬। আয়েশা ট্রেডার্সের মালিক আকবর হোসেন, এনআইডি ৯১৫৭৯৯২৮৬৯। ভ্যাট গোয়েন্দা দফতর জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, উভয় প্রতিষ্ঠানের বিন ভিন্ন হলেও অনিয়মের প্রকৃতি একই। আমদানিকারকদ্বয় টেনিস বলের আড়ালে অন্য কোনো পণ্য আমদানি করে বড় ধরনের শুল্ক ও ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে কি না একই সাথে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ করে মানিলন্ডারিং অপরাধ করেছে কি না তা খতিয়ে দেখছেন ভ্যাট গোয়েন্দারা।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/523305