পানিতে থই থই চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল। ছবিটি গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় তোলা : আখতার হোসাইন
২৩ আগস্ট ২০২০, রবিবার, ১:২২

ডুবছে বাণিজ্যকেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে মানবেতর অবস্থা

জোয়ারের পানিতে প্রতিদিন ডুবছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের প্রধান পাইকারি বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল। এর উপর নতুন করে যোগ হয়েছে বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় বিরাজমান মৌসুমি বায়ুর প্রভাব। ফলে প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়া জনপদের মানুষগুলোর নাভিশ্বাস উঠছে। আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের নিচতলা প্রায়ই তলিয়ে যাচ্ছে। এতে রোগী ও স্বজনদের মানবেতর দিন যেমনি কাটছে, তেমনি চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিন দেখা যায়, বাণিজ্যিককেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের সড়ক ও অলিগলি প্রতিদিন দুপুরে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গিয়ে একদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি বিপুল পণ্য নষ্ট হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। দেখা যায়, সরু নালা উপচে কালো পানিতে সয়লাব পুরো সড়ক। এমনকি সড়ক ছাপিয়ে এসব পচা পানি ঢুকে পড়ছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। ভাটা শুরু হলে পানি নেমে যেতে বিকেল গড়িয়ে যায় এবং এর মধ্যে ব্যাংকিং লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়াতে ওই সময়ের মধ্যে সেখানকার ব্যবসাও গুটিয়ে যায়। সেখানকার ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, অমাবস্যা-পূর্ণিমায় টানা কয়েক দিন ধরে জোয়ারের তাণ্ডব চলছে। জোয়ারের পানি নিমজ্জিত অবস্থার কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্যকেন্দ্রের ব্যবসা দুপুরের মধ্যেই গুটিয়ে নিতে হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি।

এ দিকে চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের নিচতলা জোয়ারের সময় প্রতিনিয়তই পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। পানি রোগীর বেড ছুঁই ছুঁই করে। হাসপাতালটির নিচতলায় জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, শিশু বিকাশকেন্দ্র, ইএনটি বিভাগ, বিশেষায়িত শিশু ওয়ার্ডসহ প্রশাসনিক ব্লক প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যেমনি রোগী ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খাচ্ছে, তেমনি হাসপাতালটির রোগী ও স্বজনদের মানবেতর সময় অতিবাহিত করতে হচ্ছে প্রায়ই। হাসপাতালের নিচতলা উঁচু করেও সুফল মিলছে না জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই জোয়ারের পানির সাথে একাকার হয়ে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

এ দিকে নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বন্দরনগরীর বিভিন্ন খালের মুখ স­ুইচ গেট নির্মাণের জন্য বন্ধ করা হয়েছে। ফলে জোয়ারের পানি যে গতিতে নগরীতে ঢুকছে, সেই একই গতিতে নেমে যেতে পারছে না। এমনকি এক জোয়ারের পানি নামতে নামতে আরেক জোয়ার শুরু হয়ে যায়। ফলে পানি নিমজ্জিত অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হয়। অনেকেই কর্ণফুলীর গভীরতা বাড়ালেই এই সমস্যার সমাধান মিলবে বলেও হাইড্রোগ্রাফি সংশ্লিষ্টরা বলছেন এই তত্ত্ব ভুল। কারণ কর্ণফুলীর গভীরতা ১০ মিটার করলেও পানির স্তর বর্তমানে যা আছে এর চেয়ে নিচে নামবে না। তাদের মতে কর্ণফুলীর পানির স্তর সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপর নির্ভরশীল। কাজেই কর্ণফুলীর সাথে সংযুক্ত খালগুলোর মুখের গভীরতা বাড়ালে শহরের পানি দ্রুত নেমে যেতে পারলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে তাদের ধারণা।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/523313