২৬ জুলাই ২০২০, রবিবার, ৩:৪২

করোনা পরীক্ষায় দুর্ভোগে বিদেশগামীরা

স্যাম্পল সংগ্রহের বুথ বাড়ানোর তাগিদ ভাবমর্যাদা বৃদ্ধির জন্য ‘নির্ভুল সনদ’ অপরিহার্য

বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষার সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সনদ সংগ্রহের জন্য মাত্র ১৪ জেলায় করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে করোনা পরীক্ষা করে সনদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন বিদেশ গমনেচ্ছু নানা পেশার কর্মীরা। যারা দেশে এসে আটকা পড়েছিলেন, এখন আবারও ফিরে যেতে চাচ্ছেন এবং যারা চাকরি নিয়ে বিদেশ যাচ্ছেন তাদের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে আগামী পহেলা আগস্ট থেকে যাত্রীদের দিতে হবে যাত্রী নিরাপত্তা ও বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি। সব মিলিয়ে প্রবাসী কর্মীদের বিদেশ যেতে বেড়েছে বাড়তি চাপ ও ভোগান্তি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষা ও স্যাম্পল সংগ্রহের বুথ প্রতিটি জেলায় স্থাপন করা হলে দ্রুত পরীক্ষা হতো; ভোগান্তি ও খরচ কম পড়তো। সবচেয়ে ভালো হতো যদি বিমানবন্দরে প্রবেশের আগেই কোনোভাবে টেস্টের ব্যবস্থা করা যেতো। প্রবাসীদের নানা দিকে ছুটাছুটি করতে হতো না। করোনার নির্ভেজাল পরীক্ষা সনদ নিয়ে প্রবাসীরা বিদেশ গেলে দেশের ভাবমর্যাদাও বাড়তো।

জানতে চাইলে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতি সবসময় সচল রেখেছেন। এই মুহূর্তে তাদের জন্য নানা খরচ বাড়তি চাপের সৃষ্টি করছে। ৬৪টি জেলার মানুষের জন্য মাত্র ১৪ জেলায় টেস্টের ব্যবস্থা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। টেস্টের যে ফি ধরা হয়েছে তা বিদেশগামী শ্রমিকদের জন্য বেশি। টেস্ট ও যাতায়াত মিলে প্রত্যেকের ১০-১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে। যেসব জেলায় প্রবাসী বেশি, সেসব জেলাকে গুরুত্ব দেয়া হলে সমস্যা কম হতো। সবচেয়ে ভালো হতো যদি বিমানবন্দরে প্রবেশের আগেই কোনোভাবে টেস্টের ব্যবস্থা করা হতো। তাহলে প্রবাসীদের নানা দিকে ছুটাছুটি করতে হতো না।

বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষা নিয়ে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, বিদেশগামী যাত্রীদের সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে যেয়ে নমুনা জমা দিতে হবে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নমুনা পরীক্ষার জন্য জমা দিতে হবে। নমুনা জমা দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের রিপোর্ট দেয়া হবে। বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা পরীক্ষায় জন্য প্রয়োজন হলে পরবর্তীতে আমরা সেন্টারের সংখ্যা আরও বাড়াবো।

গত মে মাসে বেসরকারি সংগঠন ব্র্যাক পরিচালিত এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা বৈশ্বিক মহামারির সময়ে দেশে ফেরত আসা অভিবাসী শ্রমিকদের ৮৭ শতাংশেরই এখন কোনও আয়ের উৎস নেই। ৫২ শতাংশ প্রবাসীর জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। ৭৪ শতাংশ প্রবাসী প্রচন্ড দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও ভীতির মধ্যে রয়েছেন। ৩৪ শতাংশ প্রবাসীর সঞ্চয় বলতে এখন আর কিছু নেই। ১০ শতাংশ প্রবাসী ইতোমধ্যেই ঋণ গ্রহণ করেছেন।

এ অবস্থায় করোনা পরীক্ষায় অতিরিক্ত খরচ ও ভোগান্তি নিয়ে বিদেশগামী প্রবাসী শ্রমিকরা বলছেন, করোনা টেস্টের জন্য প্রবাসীদের দিতে হচ্ছে ৩৫০০ টাকা। আর এক জেলা থেকে অন্য জেলায় টেস্ট করাতে যাতায়াতসহ খরচ হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। একজন প্রবাসী শ্রমিকের আয়ের ওপরে পুরো একটা পরিবার চলে। দেশে ফিরে এসে তারা ছয় মাস ধরে বেকার। এই মুহূর্তে এত খরচ তাদের জন্য বাড়তি বোঝা। রেমিট্যান্স নিয়ে সবার এত গর্ব, এত উল্লাস, কিন্তু যাদের ঘামে রেমিট্যান্স আসে, তাদের ওপরে বাড়তি খরচের এই চাপ কতটা যৌক্তিক?

জানা গেছে, ১২ জুলাই অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিদেশ গমনেচ্ছু যাত্রীদের কোভিড-১৯ মুক্ত সনদ নিয়ে বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এরপর গত ১৯ জুলাই বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, ২৩ জুলাই থেকে আকাশপথে বিদেশ গমনকারী সকল এয়ারলাইন্সের যাত্রীদের কোভিড পরীক্ষার সনদ বাধ্যতামূলক।

করোনা পরীক্ষার বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়। বিদেশগামী যাত্রীকে বিমানযাত্রার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নমুনা জমা দিতে হবে। যেকোনও ব্যক্তির জন্য করোনা পরীক্ষার সরকার নির্ধারিত ফি ২০০ টাকা। কিন্তু বিদেশগামী যাত্রীদের সশরীরে ল্যাব গিয়ে পরীক্ষার জন্য দিতে হবে ৩৫০০ টাকা এবং বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করলে ফি দিতে হবে ৪৫০০ টাকা।

দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে মাত্র ১৪টি জেলায় বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষার স্যাম্পল নেয়া হচ্ছে। এসব স্যাম্পল পরীক্ষা করা হচ্ছে ১৬টি সরকারি হাসপাতালে। যেসব জেলায় স্যাম্পল সংগ্রহের বুথ রয়েছে সেগুলো হচ্ছে ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, বগুড়া, রাজশাহী, দিনাজপুর, সিলেট, রংপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ল²ীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, ঢাকা, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, কক্সবাজার ও ফেনী এই ১৩ জেলায় প্রবাসীর সংখ্যা সব চেয়ে বেশি। বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষায় এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া হয়নি।

কুমিল্লা, ল²ীপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলা প্রবাসীদের তালিকার শীর্ষে থাকলেও এই পাঁচ জেলার মানুষদের করোনা পরীক্ষা করাতে যেতে হবে কুমিল্লায়। কুমিল্লা জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে একটি বুথের মাধ্যমে স্যাম্পল নেয়া হচ্ছে।

কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, আমরা ২০ জুলাই থেকে স্যাম্পল নেয়া শুরু করেছি। কুমিল্লা ছাড়াও ল²ীপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনীসহ মোট ৫ জেলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এতগুলো জেলার মানুষের স্যাম্পল নিতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্যাম্পল ল্যাবে পাঠাতে না পারলে সময় মতো রিপোর্ট দেয়া সম্ভব হবে না।

https://www.dailyinqilab.com/article/310491