২৬ জুলাই ২০২০, রবিবার, ৩:৪০

করোনাভাইরাস পরীক্ষা

চট্টগ্রামে চরম ভোগান্তিতে বিদেশ যেতে আগ্রহীরা

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে বিদেশগামীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে অন্যদের তুলনায় তাদের কাছ থেকে অনেক বেশি ফি নেয়া হলেও তারা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, বিদেশ যাত্রার আগের ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই যাত্রীকে করোনা পরীক্ষার সনদ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। আর এ ৭২ ঘণ্টায় তাদের পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভোগান্তির বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বিও স্বীকার করেছেন। সার্ভার জটিলতায় রিপোর্ট পেতে ভোগান্তি বেশি হচ্ছে বলে তিনি জানান।

চট্টগ্রামে শনিবার পর্যন্ত পাঁচ দিনে ৬৬৩ জন বিদেশযাত্রীর নমুনা সংগ্রহ করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। ফৌজদারহাটে অবস্থিত বিআইটিআইডি হাসপাতালের পরীক্ষাগারে বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রামের বাসিন্দারা এ পরীক্ষাগারের মাধ্যমে করোনা পরীক্ষা করতে পারবেন। সোমবার থেকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রবাসীদের করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা শুরু হয়। মঙ্গলবার থেকে বিআইটিআইডি প্রবাসীদের করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু করে। এ পর্যন্ত ১১ জন প্রবাসীর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।

বিআইটিআইডি হাসপাতালের ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ বলেন, সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে বিদেশযাত্রীদের পাঠানো নমুনা পরীক্ষা করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট তৈরি করছি। তবে সার্ভার জটিলতায় ঢাকায় পাঠাতে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, প্রবাসী, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা কিংবা পর্যটন যে কোনো কাজে বিদেশ যেতে কোভিড পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিদেশ যাত্রার আগের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এ সনদ সংগ্রহ করতে হবে। বর্তমানে দুবাই, কাতারসহ কয়েকটি দেশে বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। এ কারণে সোমবার থেকে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ভিড় করছেন বিদেশ গমনেচ্ছুরা। নমুনা দেয়ার আগে জেলা সিভিল সার্জন অফিসে টিকিট, ভিসা এবং পাসপোর্ট দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করাতে হচ্ছে। এছাড়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একটি পয়েন্টে রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম করায় শত শত মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

হাটহাজারীর বাসিন্দা প্রবাসী হুমায়ুন কবির জানান, প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষকে বৃষ্টিতে ভিজে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে নাম রেজিস্ট্রেশন করতে হচ্ছে। এরপর নমুনা দিতেও নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তাহলে কী কারণে সাধারণের চেয়ে ১৭ গুণ বেশি ফি নেয়া হচ্ছে? আমরা কী সুবিধা পাচ্ছি?

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি যুগান্তরকে বলেন, প্রবাসীদের করোনা পরীক্ষার ভোগান্তি লাঘবে নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রথম দিন ৬৩ জনের, দ্বিতীয় দিন ২৮৮ জনের, তৃতীয় দিন ১৩৫ জনের, চতুর্থ দিন ১১৯ জনের ও পঞ্চম দিন ৫৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

ভোগান্তি প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন বলেন, কিছু ভোগান্তি হচ্ছে। কারণ বিদেশগামীদের এক দিন রেজিস্ট্রেশন করতে, এক দিন নমুনা দিতে এবং পরের দিন রিপোর্ট নিতে আসতে হয়। এছাড়া রিপোর্ট সার্ভারনির্ভর হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। যতক্ষণ সার্ভারে আপলোড করা না যায়, ততক্ষণ রিপোর্ট পাওয়া যায় না। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হচ্ছে। চেষ্টা করছি ভোগান্তি কমাতে। তবে কিছু ভোগান্তি থাকবেই।

এদিকে, চট্টগ্রামে বিদেশগামীদের কোভিট-১৯ নমুনা পরীক্ষায় অব্যবস্থাপনা রোধ ও উচ্চ হারে ফি আদায় প্রত্যাহরের দাবি জানিয়েছেন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, চট্টগ্রামে প্রায় ১৫ লাখ প্রবাসী রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে কর্মরত। করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে এবং পরে প্রায় এক লাখ প্রবাসী দেশে এসেছেন। বিদেশগামী যাত্রীদের অধিকাংশ প্রবাসী শ্রমিক ও রেমিটেন্স যোদ্ধা। বছরের পর বছর ধরে বিদেশে কাজ করে তারা টাকা পাঠিয়ে দেশের রিজার্ভ ও অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। কাজে ফিরতে এখন তাদের করোনা নেগেটিভ সনদের জন্য তাদের কাছ থেকে উচ্চহারে ফি আদায় অনাকাঙ্ক্ষিত ও অমানবিক। এছাড়া রাষ্ট্র তার নাগরিকদের জন্য দ্বৈতনীতি গ্রহণ করতে পারে না।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/329473/