২৬ জুলাই ২০২০, রবিবার, ৩:৪০

দেশব্যাপী করোনাভাইরাস

ঢাকার বাইরে সংক্রমণ বেশি

ঢাকার চেয়ে বিভিন্ন বিভাগ, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগের রোগী শনাক্ত হয়েছে ১১৮ জন (ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ছাড়া অন্যান্য জেলা)।

চট্টগ্রামে শনাক্তের সংখ্যা ৩৮২ জন এবং রাজশাহীতে এই সংখ্যা ২৩৮ জন। অর্থাৎ ঢাকা বিভাগের তুলনায় অন্যান্য বিভাগে করোনা সংক্রমণের হার বেশি। নানা কারণে নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় শনাক্ত কম হচ্ছে। তবে পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ঊর্ধ্বমুখী। সব শেষ নমুনা পরীক্ষা হিসাবে শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ১২ শতাংশ। গড়ে প্রতি চারজনে একজন এ রোগে আক্রান্ত। করোনাকালীন অবাধ যাতায়াত, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করা, অনেক স্থানে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আসন্ন ঈদে সাবধান না হলে অবস্থার আরও অবনতি ঘটবে এমন শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তবে তারা ঢাকার বর্তমান অবস্থাকে স্থিতিশীল বলছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ২৫ জুলাইয়ের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১২১৩ জন। এর মধ্যে ২০৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এই সময়ে ঢাকা বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১১৮ জন এবং ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৮ জন। চট্টগ্রাম বিভাগের শনাক্ত রোগী ৩৮২ জন এবং ভর্তি ১২৯ জন। রাজশাহীতে শনাক্ত রোগী ২৩৮ জন এবং ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৬ জন। রংপুর বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৯৮ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৯ জন। খুলনা বিভাগে এই সময়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৩৫ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২২ জন। বরিশাল বিভাগে শনাক্ত হয়েছে ৮৬ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬ জন। সিলেট বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ১০২ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯ জন। কন্ট্রোল রুম থেকে বলা হচ্ছে, বিভিন্ন জেলার রোগী ঢাকায় এসে আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করায় এতদিন ঢাকায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি ছিল।

এ প্রসঙ্গে রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট আইইডিসিআর’র সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ঢাকার বর্তমান অবস্থাকে স্থিতিশীল বলা হয়। তবে ঢাকার বাইরের বিশেষ করে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংক্রমণের হার বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রধানত যেসব স্থানে নৌযোগাযোগই প্রধান সেসব এলাকায় সংক্রমণের মাত্রা বেশি। তিনি বলেন, ঈদুল ফিতরের সময় ঢাকা থেকে সারা দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। সেই প্রেক্ষিতে এখন দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এখন যদি আবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানী ছেড়ে সবাই গ্রামে ঈদ করতে যায় তাহলে গ্রাম থেকে ভাইরাস আবার ঢাকায় আসতে শুরু করবে। তাই এবারের ঈদ সবাইকে যার যার অবস্থানে থেকে পালন করার পরামর্শ দিয়েছেন এই রোগতত্ত্ববিদ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রমজানের ঈদে অবাধ যাতায়াতের কারণে করোনাভাইরাস ঢাকা থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফল এখন আমরা পাচ্ছি। এখন রাজধানীতে করোনার সংক্রমণ অনেকটা স্থিতিশীল থাকলেও রাজধানীর বাইরে এর সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। যদি কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে আগের মতো অবাধ যাতায়ত শুরু হয়, রাজধানীর সব মানুষ আবার গ্রামমুখী হয় তবে সারা দেশেই রোগীর সংখ্যা বাড়বে। তারা বলছেন, বিশেষ করে যেসব জায়গায় যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে নৌযান (লঞ্চ, নৌকা, ট্রলার) বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেসব এলাকায় সংক্রমণ বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর মূল কারণ অবাধে অনিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে এক হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হতে থাকে। মে মাসের শেষে সংখ্যা বেড়ে আড়াই হাজার ছাড়িয়ে যায়। জুনের মাঝামাঝি সময়ে এ সংখ্যা চার হাজার স্পর্শ করে। এরপর দুই সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ তিন হাজার থেকে চার হাজারের মধ্যে ছিল। বন্যাসহ নানা কারণে নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় জুলাই মাসের শুরু থেকে বিগত তিন সপ্তাহে সংক্রমণ সাড়ে তিন থেকে আড়াই হাজারের মধ্যে রয়েছে। বিগত ছয়-সাত সপ্তাহের মৃত্যুর গ্রাফটি দেখে একই চিত্র পাওয়া যায়। জুনের শুরুতে গড়ে ৪০ জন করে করোনা আক্রান্ত প্রাণ হারাতে থাকেন, জুনের শেষে এসে দেখা যায়, একদিন সেটা ষাটের ওপরে উঠে গেছে। এরপর থেকে আবার গড়ে ৪০ জনের প্রাণহানি আমরা দেখছি। ঢাকায় রেখাটি গড়ে এখন আর ঊর্ধ্বমুখী নয়। তবে দেশে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কিছুটা ঊধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন-নিপসমের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ডা. মো. জামালউদ্দিন সাইফ যুগান্তরকে বলেন, এটি একটি পরিসংখ্যানিক হিসাব। ঈদের পর এই চিত্র আরও পরিবর্তিত হতে পারে।

ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম শামসুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ঢাকার বাইরে এখন সংক্রমণের হার বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য তার কাছে নেই। তিনি বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে এই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। এরপর থেকে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে এর সংখ্যা। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ২১ হাজার ১৭৮ জন। এতে প্রাণ হারিয়েছেন দুই হাজার ৮৭৪ জন। সুস্থ হয়েছেন এক লাখ ২২ হাজার ৩৯২ জন।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস পৃথিবীজুড়ে মহামারীতে রূপ নেয়। ভাইরাসটিতে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। মৃত্যুর সংখ্যা ছয় লাখ ৪৪ হাজারেরও বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন প্রায় ৯৭ লাখ মানুষ।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/329455/