২৫ জুলাই ২০২০, শনিবার, ৩:২৫

বাজার দর

অস্বস্তির ঈদেও দ্রব্যমূল্যের ভোগান্তি

করোনাভাইরাসের ছোবলে মানুষের জীবনযাত্রা অচলপ্রায়। শতাব্দীর ইতিহাসে সবচেয়ে অস্বস্তিকর ঈদুল আজহা উদযাপন করতে চলেছে দেশের মানুষ। কিন্তু এর মধ্যেই ভোগান্তি হয়ে দেখা দিয়েছে লাগামহীন দ্রব্যমূল্য। মানুষের আয়ক্ষমতা সীমাবদ্ধ হয়ে গেলেও অধিকাংশ নিত্যপ্রয়াজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়ছে অপরাপর ঈদের মতোই। বিশেষ করে কোরবানির ঈদের প্রধান অনুষঙ্গ পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। মানুষ গরু কিনতে পারবে কি না তার নিশ্চয়তা না থাকলেও যথারীতি বেড়েছে সব রকমের মসলার দাম। যদিও বিক্রেতাদের দাবি, সাধারণ মানুষের হাতে টাকা না থাকায় ঈদ বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে একেবারেই ধীর গতিতে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঈদের অজুহাতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। ২৫ থেকে ৩৫ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪৫ টাকায়। আমদানি এবং সরবরাহ যথেষ্ট থাকলেও মসলার দাম বেড়েছে কেবলই ঈদের অজুহাতে। কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে রসুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা ও আদা ১৪০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি জিরা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, এলাচ ৩০০০ থেকে ৪০০০ টাকা, গোলমরিচ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং লবঙ্গ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। যদিও বিক্রেতারা বলছেন, প্রতি বছর ঈদুল আজহার আগে কাঁচাবাজারের মুদি দোকানগুলোতে মসলার ক্রেতা অনেক বেড়ে যায়। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। মানুষের হাতে টাকা কম। তাই পশু কোরবানিও কম হবে। এ কারণে মসলার চাহিদা ততটা নেই বলেও দাবি তাদের। যদিও বাজারে ক্রেতা থাকলেও দাম নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ঈদের আগে মসলার আমদানি অনেকটাই বেড়েছে। যেমন গত জুন মাসে দেশে জিরা আমদানি হয়েছে এর আগের মে মাসের তুলনায় তিনগুণ। এলাচ, দারুচিনি, গোলমরিচ ও লবঙ্গের ক্ষেত্রেও আমদানি এভাবে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেড়েছে। তবে গত বছরের জুন মাসে দেশে জিরা আমদানি হয়েছিল ৫ হাজার ১৫ টন। এই জুনে আমদানি হয়েছে ৪ হাজার ৮০ টন। আর গত বছরের এপ্রিল, মে ও জুন এই তিন মাসে জিরা আমদানি হয়েছিল ১১ হাজার ৭০৮ টন। আর চলতি বছরের একই সময়ে পণ্যটি আমদানি হয়েছে ৬ হাজার ৫১৫ টন। একইভাবে গত বছরের ওই তিন মাসে এলাচের আমদানি হয় ১ হাজার ৪৮০ টন। এ বছর একই সময়ে আমদানি হয়েছে মাত্র ৪৪২ টন।

এদিকে গত ৯ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি জানিয়েছে, ঈদুল আজহার আগ পর্যন্ত মসলার মূল্যবৃদ্ধির কোনো আশঙ্কা নেই। তাদের দোকানে বর্তমানে ভারতীয় জিরা কেজি প্রতি মানভেদে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, ইরান ও সিরিয়ার জিরা ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে বেশি বিক্রি হওয়া মাঝারি মানের এলাচের কেজি আড়াই হাজার থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা, চীনা দারুচিনির কেজি ২৭০ থেকে ২৯০ টাকা, ভিয়েতনামের দারুচিনি ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা, গোলমরিচ ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা এবং লবঙ্গ ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশে (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী, গত এক বছরের ৪৪ শতাংশ বেড়েছে আলুর দাম। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫ টাকা। লাল আলুর দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ডিমের হালি বর্তমানে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা ও দেশী মুরগির দাম কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, পাকিস্তানি কর্ক ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা ও সাদা কর্ক ২৬০ থেকে ২৬৫ টাকা এবং দেশী মুরগি ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ানবাজারে গরুর গোশতের কেজি ৬০০ এবং খাশি ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্র হচ্ছে।

অস্বস্তি কাটছে না সবজির বাজারেও। বরং বন্যার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দাম। খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়। গত সপ্তাহে অবশ্য ২০০ টাকা ছুঁয়েছিল দাম। করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। কাঁচামরিচের কেজি ১৮০ থেকে ২২০ টাকা। এ ছাড়া মুলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৭০ টাকা, ঢেঁড়স, ধুন্দল, ঝিঙ্গা, কাঁকরোল ও চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মিষ্টিকুমড়ার পিস ২৫ থেকে ৩০ টাকা, বরবটির কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কচুর লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচকলা প্রতি হালি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লেবু প্রতি হালি ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে। প্রতি আঁটি লালশাক ও পালংশাক ২০ থেকে ২৫ টাকা, শাপলা, পুঁইশাক ও ডাঁটাশাক ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রামের ইলিশের কেজি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি রুই ও কাতল ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১১০ থেকে ২০০ টাকা, সিলভার কার্প ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, আইড় মাছ ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, মেনি মাছ ৪০০ থেকে ৫০০, বাইলা মাছ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, বাইন মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, পুঁটি ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা, পোয়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, মলা ৩২০ থেকে ৩০০ টাকা, পাবদা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়াল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, দেশী মাগুর ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঙাস ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে মিনিকেট ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, আটাশ ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা, নাজিরশাইল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা ও স্বর্ণা ৩৩ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারি বাজারে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মিনিকেট চালের দাম পড়ছে ২৫০০ টাকা, আটাশ ২০৫০ থেকে ২১৫০ টাকা, স্বর্ণা ১৮৫০ থেকে ১৯০০ টাকা ও নাজিরশাইল ২৩০০ থেকে ৩০০০ টাকা।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/517520/