২৫ জুলাই ২০২০, শনিবার, ৩:২৩

বন্যার পানি তাড়াতাড়ি নামছে না

আগস্টে সাগরের উপরিতল স্ফীত হবে

চলমান বন্যার পানি খুব তাড়াতাড়ি নেমে যাচ্ছে না। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে উপরিতল স্ফীত হবে। এই প্রক্রিয়াটি বন্যার পানি নামতে বাধা দেবে। এ ছাড়া ভারতে অতিবৃষ্টির ফলে বাংলাদেশের নদীগুলোর সাথে যুক্ত ভারতীয় নদীগুলো থেকে প্রচুর পানি আসছে। ফলে বাংলাদেশের নদীগুলো উপচে দুই তীরে বন্যা হয়ে যাচ্ছে। আবার আগামী ২৮ জুলাই থেকে বঙ্গোসাগরে সৃষ্টি হতে যাচ্ছে একটি নিম্নচাপ। নিম্নচাপ হলে সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে যায়। এই নিম্নচাপের কারণে কমপক্ষে ১৫ দিন নদীর পানি সাগরে মিশতে পারবে না। ফলে উজান থেকে ধেয়ে আসা হাজার হাজার কোটি কিউসেক পানি চার দিকে উপচে পড়তে পারে। এ কারণে বাংলাদেশে বন্যার বিস্তৃতি আরো বাড়তে থাকবে।

নিম্নচাপ সম্পর্কে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দু’টি বর্ষাকালীন লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এই দুই লঘুচাপের একটি বর্ষাকালীন নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। নিম্নচাপটি চলতি মাসের কোন সময়ে সৃষ্ট হতে পারে সে সম্বন্ধে আবহাওয়া অফিস এখনো বিস্তারিত কিছু বলতে পারেনি। তবে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সাস্টেনিবিলিটিতে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, আগামী ২৮ জুলাইয়ের দিকে (এক দিন আগে অথবা পরে) বঙ্গোপসাগরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে লঘুচাপ থেকে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আগামী ৫ আগস্ট পৌঁছাতে পারে।

বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার আগ পর্যন্ত এবং নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে যাওয়ার পর কিছুদিন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় বন্যার পানি নিচের দিকে নামতে না পারলে বন্যাকবলিত এলাকাগুলো আরো বেশি বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে। সে কারণে প্রশাসনের তরফ থেকে এখন থেকেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি নিতে থাকলে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি যেমন কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। আবার বন্যাকবলিত মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করা সম্ভব হবে।

নিম্নচাপ প্রসঙ্গে মোস্তফা কামাল পলাশ নয়া দিগন্তকে বলেন, সম্ভাব্য নিম্নচাপটি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় পৌঁছানোর সময় পূর্ণিমা শুরু হয়ে যাবে। পূর্ণিমার সময় সাগরের পানি এমনিতেই স্ফীত হয়ে সাগরের পানির উচ্চতা বাড়িয়ে দেয়। তখন বঙ্গোপসাগরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় জোয়ারের পানি উপকূলের দিকে আসতে শুরু করবে এবং বন্যার পানি নেমে যেতে বাধা দেবে। মোস্তফা কামাল বলেন, ফলে বাংলাদেশে চলমান বন্যা পরিস্থিতি আরো বিস্তৃত হতে পারে এবং তা আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।

আবহাওয়ার উপর পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল এ ব্যাপারে আরো বলেন, বাংলাদেশে বর্তমান বন্যার বিস্তৃত হওয়া এবং প্রলম্বিত হওয়ার আরো কিছু কারণ রয়েছে। এগুলো হলোÑ বাংলাদেশের উজানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গত কয়েকদিন থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। ইতোমধ্যে হিমালয় পর্বতের পাদদেশে এবং আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়ে গেছে। ওই পানি ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা দিয়ে নামতে শুরু করেছে। সামনে আর বৃষ্টি না হলেও উপর থেকে নেমে আসা পানি সাগরে গড়িয়ে যেতে কমপক্ষে সাত দিন সময় লাগবে। ফলে এমনিতেই আরো সাত দিন বন্যার বিস্তৃতি অব্যাহত থাকবে।

এ ছাড়া ভারতে গঙ্গার তিন উপনদী গণ্ডকি, সপ্তকেশি এবং ঘোগরায় ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতীয় মিডিয়ার খবরে দেখা গেছে, সপ্তকেশি নদীতে দ্বিগুণ, গণ্ডকিতে সাড়ে তিন গুণ এবং ঘোগরা নদীতে গড় প্রবাহের চেয়ে দ্বিগুণ পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মোস্তফা কামাল পলাশ এ প্রসঙ্গে বলেন, আগামী তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে এই তিন নদীর পানি গঙ্গায় এসে পড়বে। ফলে গঙ্গায় ফারাক্কা পয়েন্টে যে বাঁধ রয়েছে এর উপরের দিকে বন্যা হয়ে যাবে। বন্যা যেন না হয় এবং বন্যা যেন কমিয়ে রাখা যায় সেজন্য ফারাক্কা বাঁধ কর্তৃপক্ষ সবগুলো সøুইটগেট খুলে দিতে বাধ্য হবে। মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ফারাক্কার সøুইসগুলো খুলে দিলে বাংলাদেশের পদ্মা নদী তীরবর্তি ফরিদপুর, মাদারীপুর জেলাসহ বিস্তৃত অঞ্চলে বন্যা হবে।

মোস্তফা কামাল পলাশ মার্কিন আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেন্দ্র ‘গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম’কে উদ্ধৃত করে জানান, ভারতের উত্তর প্রদেশ ও বিহার রাজ্যে চলতি মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। এই দুই রাজ্যের অতিরিক্ত পানিও শেষ পর্যন্ত গঙ্গার ফারাক্কা হয়ে বাংলাদেশের পদ্মা দিয়ে বঙ্গোপসাগরে যাবে। ফলে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত পদ্মার তীরবর্তী অঞ্চলে বন্যার বিস্তৃতি কমছে না। আগে থেকেই বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ত্রাণ কার্যক্রম হাতে নিতে পারলে অন্তত মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমাতে পারবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/517524/