১৭ জুলাই ২০২০, শুক্রবার, ৭:৩২

জেকেজির প্রতারণা

হাতিয়ে নেয়া বিপুল অর্থের সন্ধানে গোয়েন্দারা

করোনা রিপোর্ট জালিয়াতিতে জেকেজি হেলথ কেয়ারকে সহযোগিতা করলেও কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধা নেয়ার কথা অস্বীকার করেছিলেন রিমান্ডে থাকা ডা: সাবরিনা। তবে সাবরিনা যে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নিয়েছেন তার একাধিক রসিদ হাতে পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা।

এ দিকে রিমান্ডে ডা: সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফ চৌধুরীকে মুখোমুখি ও পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দারা। তারা জানান, আরিফ চৌধুরীকে মুখোমুখি করা হলে তাকে দেখেই ক্ষেপে যান সাবরিনা। এ সময় তারা একে অপরকে দোষারোপ করতে শুরু করে। পরে তাদের আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আত্মসাৎ করা টাকাগুলো কার কাছে, কোথায় রয়েছে বা তারা ভাগে কে কত টাকা পেয়েছেন সে সব বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি। যার কারণে আবারো তাদের দুইজনকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, গত বুধবার সন্ধ্যায় তাদের একদফা মুখোমুখি করা হয়েছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় ডিবি কার্যালয়ে আরিফকে দেখে জ্বলে ওঠেন সাবরিনা। তিনি বলেন, আরিফের জন্যই আজ তার এই অবস্থা। একই সঙ্গে করোনা জালিয়াতির বিষয়ে নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টিও অস্বীকার করেন সাবরিনা। তিনি বলেন, জেকেজির হাতিয়ে নেয়া টাকা কোথায় রেখেছে তা খোঁজা হবে। এ জন্য ব্যাংক হিসাবগুলো খতিয়ে দেখা হবে।

এ দিকে ডা: সাবরিনার তিন দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে গতকাল। তাকে ফের রিমান্ডে এনে আরিফের মুখোমুখি করা হবে। এই কোম্পানিতে কার কী অবদান, কার কী দায়িত্ব ছিল তা তদন্ত করে দেখা হবে। যার যতটুকু দায় সে অনুযায়ী তদন্ত করে দেখা হবে।

এ দিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট অপর এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, রিমান্ডের শুরু থেকেই সাবরিনা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কথা অস্বীকার করে আসছিলেন। কিন্তু তিনি যে জেকেজি থেকে টাকা নিতেন এমন তিনটি সিøপ পাওয়া গেছে। তবে ওই টাকার পরিমাণ ছিল কম। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, করোনার ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করার খবর জানতে পেরে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করতে শুরু করে। তাদের মুখ বন্ধ করতে সাবরিনা ওই টাকার রসিদ দেখিয়ে কর্মচারীদের বোঝাতেন ‘এই দেখো কোম্পানির চেয়ারম্যান হয়ে আমি মাত্র ৩০ হাজার টাকা নিচ্ছি। আর তোমরা বেশি টাকা নেয়ার দাবি করছ’। মূলত এই পলিসির কারণে সাবরিনা কম টাকা নিতেন। কিন্তু আরিফের বক্তব্য অনুযায়ী টাকার বেশির ভাগই সাবরিনার দখলে রয়েছে। পুলিশ পুরো বিষয়টি তদন্ত করার জন্য সাবরিনাকে পুনরায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। সেখান থেকে পাওয়া ক্লু নিয়ে সামনে এগোবে গোয়েন্দারা। ওই সূত্র আরো জানায়, মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের সময় সাবরিনা তার স্বামীকে বলছিলেন, ‘সবকিছু করে এখন আমাকে ফাঁসিয়েছিস।’ আরিফুল কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলেন, ‘তুমিতো চেয়ারম্যান, তোমার কি কোনো দায় নেই’। এ সময় দু’জনই তুইতোকারি করে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরে আরিফুল কিছুটা শান্ত হলেও সাবরিনাকে অস্থির দেখাচ্ছিল।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, জেকেজি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করত। এসব নমুনা পরীক্ষা না করে তা ড্রেনে ফেলে দেয়া হতো। পরে রোগীর লক্ষণ দেখে ভুয়া সনদ দেয়া হতো। জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ চৌধুরী নিজেও এসব কথা স্বীকার করেছেন। এছাড়া জেকেজির একজন কর্মচারী আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতেও এসব তথ্য জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত প্রতারণা ও করোনা রিপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগে গত রোববার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তেজগাঁও বিভাগের ডিসি কার্যালয়ে ডাকা হয় সাবরিনাকে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রিপোর্ট জেকেজির জালিয়াতির সাথে তার সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পরই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। ফ্রিজ করে দেয়া হয় তার ব্যাংক হিসাব। পরদিন সোমবার আদালতে হাজির করে চার দিনের রিমান্ডের আবেদন করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে একই মামলায় গ্রেফতার হন সাবরিনার স্বামী জেকেজির প্রধান নির্বাহী আরিফ চৌধুরী।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/515784