১৪ জুলাই ২০২০, মঙ্গলবার, ১২:৪০

করোনা রোগী না হয়েও...

তিনি করোনা রোগী নন। শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়ায় নেয়া হয় রাজধানীর একটি অভিজাত হাসপাতালে। ইমার্জেন্সিতে চেকআপ করে ভর্তি করা হয় সিসিইউতে। ভর্তির সময় হাসপাতালের চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসকের সুরক্ষা সামগ্রী কিনে দেন রোগীর স্বজনরা। তিনদিন সিসিইউতে চিকিৎসার পর দেয়া হয় কেবিনে। সেখানে একদিন থাকার পর রিলিজ দেয়া হয়। এই রোগীর নাম নূরুল হক ভূঞা। হাসপাতালের আইডি নং- ১০০০৩২৫১০৮।

এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। রিলিজ দেয়ার সময় বিল দেয়া হয় ২ লাখ ১৫ হাজার ৩৬৩ টাকা। এতেও আপত্তি ছিল না রোগীর স্বজনদের। বিলে উল্লিখিত খাতওয়ারী খরচ দেখে হতভম্ব তারা। তারপরও সম্পূর্ণ বিল মিটিয়ে রোগী নিয়ে বাসায় ফিরেন। বিলে পুনঃব্যবহারযোগ্য পিপিই দেখানো হয়েছে ৩টি, ডিসপোজেবল এপ্রোন ৮৮টি, ডিসপোজেবল মাস্ক ১টি, সার্জিক্যাল গ্লাভস, ডিসপোজেবল ক্যাপ ৮০টি, শো কভার ই-৮, প্লেন অবজরবেন্ট গজ ১টির ব্যবহার দেখানো হয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় অপারেশনের রোগী না হওয়া সত্ত্বেও দেখানো হয়েছে সার্জারির সুতা ক্রয়। করোনাকালে করোনা রোগী হলেও এসব সুরক্ষা সামগ্রী চিকিৎসকরা তাদের প্রয়োজনেই নিজেরা সংগ্রহ করার কথা। এছাড়া সরকারিভাবেও চিকিৎসকদের এসব দেয়া হচ্ছে। তাহলে অভিজাত এ হাসপাতাল রোগীদের কাছ থেকে কেন এসব সুরক্ষা সামগ্রীর দাম নিচ্ছে? এছাড়া ভর্তির সময়ই তো রোগীর স্বজনরা হাসপাতালের চাহিদা অনুযায়ী সুরক্ষা সামগ্রী কিনে দিয়েছে। এ ব্যাপারে রোগী নূরুল হক ভূঞার ছেলে ফারহান নূর ১২ই জুলাই রোববার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর নালিশ জানিয়েছেন। এভাবে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বিল আদায়ের জন্য হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। ফারহান নূর অভিযোগে লিখেছেন, আমার পিতা নূরুল হক ভূঞার শ্বাসকষ্ট, হার্টবিট বেড়ে যাওয়ায় এবং প্রেসার কমে যাওয়ায় গত ২৮শে জুন দুপুরে চিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে নেয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেখান থেকে আমার পিতাকে সিসিইউতে ভর্তি করে। অতঃপর সিসিইউতে ৩ দিন এবং কেবিনে ১ দিন মোট ৪ দিন তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। গত ৩১শে জুন দুপুরের পরে তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। আমার পিতা করোনা আক্রান্ত রোগী ছিলেন না। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে তার দুইবার করোনা পরীক্ষা করা হয়।

আমার পিতাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়ার সময় হাসপাতালের যাবতীয় খরচ বাবদ ২,১৫,৩৬৩ টাকার একটি বিল দেয়া হয়। আমি যথারীতি তা পরিশোধ করি। বিল পরিশোধের পর তা পর্যালোচনা করে চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধপত্র, চিকিৎসকের ফি ছাড়া নানা খাতে যেমন- রিইউজেবল পিপিই ৩টি, ডিসপোজেবল এপ্রোন ৮৮টি, ডিসপোজেবল ফেস মাস্ক ১টি, সার্জিক্যাল গ্লাভস, ডিসপোজেবল ক্যাপ ৮০টি, শো কভার ই-৮, প্লেন এবজরবেন্ট গজ ১টির ব্যবহার দেখানো হয়েছে। আমার পিতা কোনো ধরনের সার্জারি রোগী না হওয়া সত্ত্বেও সার্জারির সুতা ক্রয় বাবদ বিল বানানো হয়েছে। যা আমার কাছে অসঙ্গতিপূর্ণ ও অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। এছাড়া, করোনা রোগী না হওয়া সত্ত্বেও এত পরিমাণ ডিসপোজেবল আইটেমের ব্যবহার অযৌক্তিক এবং অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। উল্লেখ্য যে, রোগীর সঙ্গে দেখা করার সময় আমাদের ফার্মেসি থেকে আলাদাভাবে এপ্রোন, মাস্ক, ক্যাপ শো কভার, গ্লাভস কিনে ব্যবহার করতে হয়েছে। ভেতরে রোগীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে আমরা দেখতে পাই ডাক্তার ও নার্সরা একই এপ্রোন ও ডিসপোজেবল আইটেম পরিধান করে বিভিন্ন রোগীকে সেবা দিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে এক রোগীর ক্ষেত্রে এতগুলো এপ্রোন ও ডিসপোজেবল আইটেমের ব্যবহার প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। আমার পিতাকে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে কতজন ডাক্তার ও নার্সের প্রয়োজন হয়েছে তা ভেবে দেখার বিষয়। ফারহান নূর অভিযোগে লিখেছেন, ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এ সকল কার্যক্রম দেখে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, তারা চিকিৎসার নামে রোগীর সঙ্গে আর্থিকভাবে প্রতারণা করেছে। করছে। আর এতে একজন ভোক্তা হিসেবে আমার অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে। আর্থিকভাবে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি বলে মনে করছি। বিষয়টি তদন্তপূর্বক ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন ফারহান নূর। এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে ওই হাসপাতালকে বিরত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও অনুরোধ জানান তিনি।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=235164