১৪ জুলাই ২০২০, মঙ্গলবার, ১২:৩৫

বিটিসিএলের নেটওয়ার্ক রূপান্তর

প্রকল্পের প্রশাসনিক খরচই ২২৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা!

সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন নিয়ে কমিশনের সংশয়; প্রকল্প ব্যয় ২৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি নিয়ে পিইসির প্রশ্ন

প্রশাসনিক ব্যয়, পরামর্শক ব্যয়, ট্যুর, গাড়ি কেনা, জ্বালানি খরচ, বিভিন্ন ধরনের সম্মানীতেই চলে যাচ্ছে উন্নয়ন প্রকল্পের একটা বড় অংশ। এসব ব্যয়কে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলেই প্রকল্পের খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। সরকারি বিধান থাকলেও দায়সারা গোছের বা অনেকে সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প করছে। বিটিসিএলের বিদ্যমান অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্কের উন্নয়ন ও রিং টাইপ নেটওয়ার্ক রূপান্তরকরণ প্রকল্পে প্রশাসনিক ও অন্যান্য খরচই ২২৬ কোটি ২৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এমনকি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনটি নিয়েও পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সংশয় প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে। মাত্র এক বছরের মধ্যেই প্রকল্পের কার্যপরিধি ও ব্যয় ২৪৩ শতাংশের মতো এত অধিক পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়টি যৌক্তিক বলে প্রতীয়মান হয় না বলে মন্তব্য করেছে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ।

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দেয়া প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, বিটিসিএলের বিদ্যমান অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশের প্রায় সব উপজেলা এবং এক হাজারটির অধিকসংখ্যক ইউনিয়নকে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করার জন্য চলমান বা সমাপ্ত প্রকল্পগুলোর পরিকল্পনা করা হয়। বর্তমানে দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিটিসিএল অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক আসা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক নিশ্চয়তা না থাকায় নিরবচ্ছিন্ন আধুনিক টেলিযোগাযোগব্যবস্থা ও উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড সেবা প্রদান করা সম্ভব নয়। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য সমগ্র বাংলাদেশে অতিরিক্ত অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল লিঙ্ক সুবিধার আওতায় আনা, পল্লী এলাকা পর্যন্ত উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড সেবা সুবিধার আওতায় আনার জন্য বিটিসিএলের টেলিযোগাযোগ কাঠামো আধুনিকীকরণসহ উচ্চমানের ট্রান্সমিশন সুবিধা নিশ্চিত করা। বিটিসিএলের বিদ্যমান অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ককে রিং টাইপ নেটওয়ার্ক টপোলজিতে রূপান্তর করা।

জানা যায়, ২০১৮ সালে প্রকল্পটি ৩৬৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মূল্যায়ন (পিইসি) কমিটিতে পাঠানো হয়। বিভিন্ন ধরনের নিদের্শনা দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনাকে (ডিপিপি) পুনর্গঠন করতে বলা হয়ে। এক বছর পর সেই ডিপিপি আবার পিইসিতে আসে ২৪৩ শতাংশ খরচ বাড়িয়ে এক হাজার ২৬৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় কার্যক্রমগুলো হলো, টেলিযোগযোগ সরঞ্জামাদি অর্থাৎ অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ও ক্যাবল সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি স্থাপন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ও আসবাবপত্র ক্রয়।

প্রস্তাবিত ব্যয় পর্যালোচনা থেকে দেখা যায়, প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও ভাতাদি বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে আট কোটি ৪২ লাখ টাকা। যানবাহন খাতে আলাদা দুই কোটি ৫২ লাখ ২০ হাজার টাকা, অফিস আসবাবপত্র বাবদ আলাদাভাবে ২০ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, অফিস ইক্যুইপমেন্ট বাবদ ৫০ লাখ টাকা। এর বাইরে প্রশাসনিক ও অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৬ কোটি ২৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, যার কোনো বিস্তাবিত বিভাজন দেয়া হয়নি বলে ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে। এমনকি খরচের তালিকাতেও প্রশাসনিক ব্যয়ের ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে তার প্রশাসনিক ব্যয় দিয়ে আরো একটি বড় আকারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে পরিকল্পনা কমিশন সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করছেন।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে এক হাজার ২৬৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, যা ২৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে। এ ক্ষেত্রে প্রকল্পের আবশ্যকিভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করার শর্ত থাকলেও ডিপিপিতে সংযুক্ত সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনটি বিস্তারিত নয়। কারণ এতে শুধু প্রকল্পের আতওায় প্রস্তাবিত যন্ত্রপাতির ধরন, পরিমাণ ও লোকেশন উল্লেখ করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, ২০১৮ সালের ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় চীন সরকারের সহজ শর্তে ঋণসুবিধার বাস্তবায়নাধীন এমওটিএন প্রকল্প, বিটিসিএল কর্তৃক বাস্তবায়িত বা বাস্তবায়নাধীন অন্যান্য প্রকল্প এবং আইসিটি বিভাগের কার্যাবলির সাথে দ্বৈততা আছে কি না। নতুন করে যে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে আগের ডিপিপির চেয়ে বেড়েছে প্রায় ৮৯৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বা ২৪৩ শতাংশ। মাত্র এক বছরের মধ্যেই প্রকল্পের কার্যপরিধি ও ব্যয় এত অধিক পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়টি যৌক্তিক বলে প্রতীয়মান হয় না। এ দিকে, অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল থেকে কোনো ছাড়পত্র গ্রহণ করা হয়নি। অথচ পরিকল্পনা বিভাগ থেকে গত ২০১৬ সালের অক্টোবরে জারিকৃত পরিপত্রের অনুচ্ছেদ-৯ ও অনুচ্ছেদ-১০-এর শর্ত অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি কর্তৃক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল থেকে ছাড়পত্র সংগ্রহ করা আবশ্যক। কিন্তু জনবলের বিষয়ে অর্থ বিভাগ থেকে ছাড়পত্র নেয়া হয়নি।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/515082/