১১ জুলাই ২০২০, শনিবার, ১:৫০

৫০ শতাংশ ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন নেই

রাজধানীসহ দেশের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর ৩০ শতাংশের কোনো পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। আর ৫০ শতাংশ লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই চালিয়ে যাচ্ছে চিকিৎসাকার্যক্রম। এ তালিকায় অনেক নামীদামি বেসরকারি হাসপাতালও রয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের একটি সূত্র বলছে, হাইকোর্টের নির্দেশের পরও পরিবেশ ছাড়পত্র নেয়নি দেড় হাজারের বেশি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। ফলে পরিশোধন ছাড়াই এদের ফেলা ক্ষতিকর মেডিক্যাল বর্জ্য মারাত্মক দূষিত করছে পরিবেশকে। আইন অনুযায়ী হাসপাতাল বা ক্লি¬নিকের বা যেকোনো ধরনের চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের জন্য পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া অনুমোদিত চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতি বছর লাইসেন্স নবায়ন বাধ্যতামূলক; কিন্তু দেশের প্রায় অর্ধেক হাসপাতালে বাস্তবে তার চিত্র উল্টো। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে বর্তমানে লাইসেন্স আছে এমন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৫৫টি। রাজধানীসহ ঢাকা জেলায় আছে ২৯৪টি। এর মধ্যে এ পর্যন্ত অনলাইনে লাইসেন্স নিয়েছে চার হাজার ৮৪টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। তবে যারা আগে ম্যানুয়ালি লাইসেন্স নিয়েছে তাদেরও আবার অনলাইনে লাইসেন্স নিতে হবে। এসব হাসপাতালের অর্ধেকই লাইসেন্স নবায়ন করেনি। বাস্তবে সারা দেশে সাত হাজারের মতো প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে, যার একটি অংশের লাইসেন্সই নেই। কেউ কেউ আবার আবেদন করেই হাসপাতাল চালু করে দেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপপরিচালক (প্রাইভেট হাসপাতাল) জানান, ‘শর্ত পূরণ ছাড়া লাইসেন্স প্রদানের যেমন নিয়ম নেই, তেমনি লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করলে বা তা নবায়ন না করলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক তা বাতিলের বিধান রয়েছে। তিনি জানান, ২০১৮ সালে ঢাকার ৩০টি প্রাইভেট ক্লিনিককে শোকজ করে ১৫ দিনের মধ্যে সাময়িকভাবে বন্ধ করতে বলেছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর; কিন্তু সেই হাসপাতালগুলো আবারো চালু হয়েছে। ২০১৯ ও ২০২০ সালে কোনো হাসপাতালকে সাময়িক বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়নি।

বিষয়টি স্বীকার করে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা: মনিরুজ্জামান জানান, ‘লাইসেন্স ছাড়াও অনেক হাসপাতাল-ক্লিনিক আছে। তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে একাধিকবার তারা স্বাস্থ্য অধিদফতরকে বলেছেন। তার মতে, তাদের অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ১০ হাজারের বেশি। তবে এরমধ্যে হাসপাতাল ও ক্লিনিক কতটি সে হিসাব তাদের কাছে নেই। এরমধ্যে রিজেন্ট হাসপতাল তাদের সদস্য নয়। ওই ধরনের হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তারা পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দিয়েছেন।

অপর দিকে পরিবেশ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, দেশের বেশির ভাগ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকগুলোর মেডিক্যাল বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই। এরই মাঝে হাইকোর্টের নির্দেশের পরও পরিবেশ ছাড়পত্র নেয়নি রাজধানীতে এমন দেড় হাজারের বেশি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে। যারা দিনের পর দিন ক্ষতিকর মেডিক্যাল বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই ফেলছে, যা মারাত্মক দূষিত করছে পরিবেশকে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অর্ধশতাধিক হাসপাতালকে একাধিকবার নোটিশ দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে রাজধানীর নামীদামি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে। নোটিশ পাওয়ার পর এদের খুব সামান্য অংশ সতর্ক হলেও বাকিরা তা না মেনেই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানা যায়, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ২০০৮ সালে আইন পাস হয়; কিন্তু তার কার্যকারিতা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে না পারায় হাসপাতালের মেডিক্যাল বর্জ্য এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, হাসপাতালগুলো পরিবেশ আইন অমান্য করায় এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে জনস্বাস্থ্যে। কারণ পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য মেডিক্যাল বর্জ্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব বর্জ্য হাসপাতালগুলোর ওয়ার্ডে, অপারেশন থিয়েটারে, আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) বিভিন্ন ডাস্টবিনে রাখা হয়। প্রতিদিনের বর্জ্য কিছু সময় পরপর আলাদা করে পৃথক পৃথক ডাস্টবিনে রাখা হয়। তারপরও ড্রেসিংয়ের গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা থেকে জীবাণুর মাধ্যমে ইনফেকশন ছড়ানোর ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইন মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।

তিনি বলেন, কেউ পরিবেশ আইন ভঙ্গ করলে নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্টরা তাকে প্রথমে নোটিশ দেবে। এতে সংশোধন না হলে পরে এ প্রতিষ্ঠানের গ্যাস বিদ্যুৎ পানি বিচ্ছিন্ন করে সে প্রতিষ্ঠান বন্ধের বিধান রয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/514480/