জৈন্তাপুরে বন্যায় পানিতে তলিয়ে যাওয়া বাড়িঘর
১১ জুলাই ২০২০, শনিবার, ১:৪৭

জৈন্তাপুরে ভারী-বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

জৈন্তাপুর (সিলেট) সংবাদদাতা: সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় গত দুই দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট আকস্মীক বন্যায় উপজেলার সীমান্ত ঘেষা ৩ ইউনিয়ন সহ সবকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত। সারী নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বিপদ সীমার ২১ সেন্টি মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ত্রাণ সহায়তা প্রদান করতে দেখা যায়নি।

আকস্মীক পাহাড়ী ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের গ্রামীণ জনপথ স্কুল, মাদ্রাসা ও মসজিদ এবং বীজতলা। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হয়েছে নিম্ন আয়ের দিনমজুর ও শ্রমিক পরিবার গুলো। গ্রামের দরিদ্র পরিবার গুলোর বসত বিটা কাঁচা থাকায় বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। আকস্মীক বন্যায় বাড়ি-ঘর তলিয়ে যাওয়ার কারণে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছে গ্রামীণ জনপদে বসবাসকারীরা। রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে পানিতে আটকে পড়া হাওর অঞ্চলের পরিবার গুলোতে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে।

সীমান্তবর্তী ৩টি ইউনিয়নের বন্যায় আটকে পড়া পরিবার গুলোর মধ্যে শুকনো খাবার বা বিশুদ্ধ পানির কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি উপজেলা প্রশাসন। বন্যায় আটকে পড়া পরিবারের লোকজনকে নিজ উদ্যোগে নৌকা অথবা ভেলায় করে বিশুদ্ধ পানির জন্য উচু জায়গায় দিকে ছুটে আসতে দেখা যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যা কবলিত এলাকার মধ্যে উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের মেঘলী, বন্দরহাটি, লামাপাড়া, ময়নাহাটি, জাঙ্গালহাটি, মজুমদারপাড়া, হর্নি, বাইরাখেল, গোয়াবাড়ী, তিলকৈপাড়া, বড়খেল, ফুলবাড়ী, ডিবিরহাওর, ঘিলাতৈল, হেলিরাই। জৈন্তাপুর ইউনিয়নের মুক্তাপুর, বিরাইমারা, বিরাইমারা হাওর, লামনীগ্রাম, কাটাখাল, খারুবিল, চাতলারপাড়, ডুলটিরপাড়, ১নং লক্ষীপুর, ২নং লক্ষীপুর, আমবাড়ী, ঝিঙ্গাবাড়ী, নলজুরী হাওর ও শেওলারটুক। চারিকাটা ইউনিয়নের বালিদাঁড়া, লালাখাল, রামপ্রসাদ, থুবাং, বাউরভাগ উত্তর, বাউরভাগ দক্ষিণ, পুঞ্জীসহ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অপর দিকে বেশ কয়েকদিন থেকে দরবস্ত ইউনিয়নের কাঞ্জর, গর্দনা, সেনগ্রাম, মোহাইল, ছাতারখাই, শুকইনপুর। ফতেপুর ইউনিয়নের হেমু, লামাশ্যামপুর, বালীপাড়া, হরিপুর এবং চিকনাগুল ইউনিয়নের কাটুয়াকান্দি, কাপনা কান্দি, শিখার খাঁ, কহাইঘর সহ উপজেলার বেশির ভাড় নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

এদিকে সারী নদী, বড়গাং নদী এবং নয়া গাং নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারী নদীর পানি বিপদ সীমার .২১ সেন্টিমিটার উপরদিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান সারী-গোয়াইন বেড়ী বাঁধ প্রকল্পের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মোঃ আলা উদ্দিন। তিনি আরও বলেন বৃষ্টি থামলে পানি নিচের দিকে প্রবাহিত হবে।

সিরাজগঞ্জে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে আবারও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির কারণে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীতে পানি বেড়েছে। বন্যার পূর্বাভাস অনুযায়ী যমুনা নদীতে পানি বেড়ে বিপদসীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সিরাজগঞ্জ শহর বাঁধ দিয়ে ঘেরা। বাঁধ না ভাঙলে শহরে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে নদী-তীরবর্তী কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা হতে পারে।’ এদিকে, প্রথম দফায় বন্যায় বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষ এখনো বাড়িঘরে ফিরতে পারেনি। নতুন করে পানি বৃদ্ধির কারণে দুর্ভোগে পড়েছে বানভাসি মানুষ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ। নদী-তীরবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পাঁচ উপজেলার প্রায় ৩৩ ইউনিয়নের ২১৬টি গ্রামের এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় তিন হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমির ফসল। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুর রহিম বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে জেলার পাঁচ উপজেলার ৩৩ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ২১৬টি গ্রামের ৩৪ হাজার ৬৮৪টি পরিবারের এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক হাজার ৬০টি ঘরবাড়ি, সাড়ে ১৬ কিলোমিটার রাস্তা ও বাঁধ তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩০টি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।

https://dailysangram.com/post/420946