৬ জুলাই ২০২০, সোমবার, ৬:১৮

ধেয়ে আসছে বড় বন্যা

উত্তরের পরিস্থিতি অপরিবর্তিত; দুর্ভোগে বানভাসিরা; ক্ষতিগ্রস্ত ১৩ লক্ষাধিক মানুষ; ৬ জেলায় বন্যা স্থিতিশীল থাকবে

করোনাভাইরাস মহামারীর দুর্যোগের মধ্যে ধেয়ে আসছে বড় ধরণের বন্যা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সতর্কাবস্থায় রয়েছে বন্যাকবলিত জেলার প্রশাসন। সরকারি হিসাবেই বন্যা দুর্গত জেলাগুলোয় ইতোমধ্যে ১৩ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ দিকে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঘাঘট ও করতোয়াসহ উত্তরের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। হাজার হাজার পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বিভিন্ন খামারে বেড়ে ওঠা গবাদিপশুর যাতে ক্ষতি না হয়, সে দিকে নজর রাখাসহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানা গেছে, এ মুহূর্তে দেশের ১৫টি জেলা বন্যাকবলিত। এসব জেলার ওপর দিয়ে বহমান বেশির ভাগ নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিচু এলাকায় বসবাসকারী মানুষের ঘরবাড়িতে পানি উঠে গেছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি ও মাছের ঘের। জেলাগুলো হচ্ছেÑ কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর।

এ দিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের ১১টি নদীর পানি ১৫টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দেশের উত্তর-পূর্বাংশের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পয়েন্টগুলো হচ্ছেÑ ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্ট, ঘাগট নদীর গাইবান্ধা পয়েন্ট, ব্রহ্মপুত্র নদীর নুনখাওয়া ও চিলমারী পয়েন্ট, যমুনা নদীর ফুলছড়ি, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ পয়েন্ট, আত্রাই নদীর বাঘাবাড়ি পয়েন্ট, ধলেশ্বরীর এলাসিন, পদ্মার গোয়ালন্দ, সুরমার কানাইঘাট ও সুনামগঞ্জ পয়েন্ট এবং পুরনো সুরমার দিরাই এলাকা। বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিংয়ে কন্ট্রোল রুম চালু করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০১৩১৮-২৩৪৫৬০।

বন্যা পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ১০১ পর্যবেক্ষণাধীন পানি স্টেশনের মধ্যে ১৭টিতে পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। আর ৬১টি স্টেশনের পানি বাড়ছে, কমছে ৩৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে একটির। ধরলার কুড়িগ্রাম পয়েন্টে বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে ১৮, ঘাগটের গাইবান্ধা পয়েন্টে ২৭, ব্রহ্মপুত্রের নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৪, ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে ২৯, যমুনার ফুলছড়ি পয়েন্টে ৫৬, যমুনার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ৫৯, যমুনার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ৫১, যমুনার কাজিপুর পয়েন্টে ৫৫, যমুনার সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৩৫, যমুনার আরিচা পয়েন্টে ১০, বাঘাবাড়ির আত্রাই পয়েন্টে ৪৯, ধলেশ্বরীর এলাসিন পয়েন্টে ৪৬, পদ্মার গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৪৬, পদ্মার ভাগ্যকূল পয়েন্টে ২০, পদ্মার মাওয়া পয়েন্টে ১১ এবং পুরনো সুরমার দিরাই পয়েন্টে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এ দিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, এখন যে পরিস্থিতি আছে তা আরো চার-পাঁচ দিন প্রায় একই রকম থাকবে। এরপর আবার বৃষ্টি শুরু হলে পানি বাড়তে পারে। এতে দেশের উত্তর-পূর্ব ও মধ্যাংশের যেসব এলাকা এখন প্লাবিত, সেখানে পানির উচ্চতা বাড়বে এবং নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহে নতুন এলাকা আবার প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। পূর্বাভাসে আরো বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর আরিচা এবং ৪৮ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর ভাগ্যকূল পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

ক্ষতিগ্রস্ত ১৩ লক্ষাধিক মানুষ

এবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৩ লক্ষাধিক মানুষ। এর মধ্যে শুধু জামালপুরের সাত উপজেলায় ৪৯টি ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা তিন লাখ ৭৭ হাজার ৩৪৯ জন। রোববার ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে। বন্যা পূর্বাভাস অনুযায়ী আজ সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলে বন্য পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, শরিয়তপুর, ফরিদপুর ও ঢাকায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের পানি হ্রাস আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে গঙ্গা-পদ্মা নদীগুলোর পানি স্থিতিশীল আছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় পটুয়াখালী ৮১ মিলিমিটার, ছাতক ৭৫ মিলিমিটার, লালাখাল ৬৮ মিলিমিটার, রোহনপুর ৬৫ মিলিলিটার, কক্সবাজার ৫৫ মিলিমিটার, টেকনাফ ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের হিসাবে গাইবান্ধা সদরসহ পাঁচ উপজেলায় ১ লাখ ২২ হাজার ৩২০, সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা ও পৌরসভায় ১ লাখ ৫৯ হাজার ১৫৩, সুনামগঞ্জের সব উপজেলায় মোট ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩২০, বগুড়ার ধুনট, সারিয়াকান্দি, সোনাতলায় ৭৬ হাজার ৬২০, সিলেট সদরসহ ছয় উপজেলায় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭২০, টাঙ্গাইল সদরসহ ছয় উপজেলায় ১ লাখ ২৩ হাজার ৯২৫, কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় প্রায় ৬২ হাজার, লালমনিরহাট সদরসহ চার উপজেলায় সাড়ে ৪৮ হাজারেরও বেশি মানুষ ইতোমধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ছাড়াও মানিকগঞ্জে ১৪১৩ ও মাদারীপুরের শিবচরে ১৯৫০ জন মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমছে

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে সব ক’টি নদ-নদীর পানি হ্রাস পেতে শুরু করেছে। জেলার চারটি পয়েন্টের দুইটিতে বিপদসীমার ওপরে এবং দুইটি পয়েন্টে নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ধরলা নদীর সদর পয়েন্টে পানি কমে বিপদসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর, ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর এবং ব্রহ্মপুত্র নদের নুনখাওয়া পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার নিচ, তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ দিকে অপরিবর্তিত বন্যায় সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব বাঁধের ৪০০ মিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ‘প্রতিবারের বন্যায় আমাদের অবস্থা শেষ। বাড়িতে পানি উঠেছে, জীবন বাঁচাতে বাঁধে আশ্রয় নিছি’।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ভাঙন এলাকাগুলোতে জরুরি কাজ শুরু করা হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা: হাবিবুর রহমান জানান, ১০টি মেডিক্যাল টিম বন্যাকবলিত এলাকায় কাজ করছে। জনস্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, বানভাসীদের বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজনীয়তা মেটাতে ট্যাবলেট বিতরণ এবং নতুন টিউবওয়েল স্থাপন ও মেরামতের কাজ চলছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা, ইউনিয়ন ও দফতরসমূহের মাধ্যমে বন্যা মোকাবেলায় কাজ করা হচ্ছে। ত্রাণসামগ্রী ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

রৌমারী শহর রক্ষা বাঁধ ভাঙন ঝুঁকিতে

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, রৌমারী শহর রক্ষা ফৌজদারী বেড়িবাঁধটি ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে। বাঁধটি ব্রহ্মপুত্রের কাছে হওয়ায় উপজেলাবাসী চরম দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছে। ঝগড়ারচর, ধনারচর ও ফৌজদারী বেড়িবাঁধটি বন্যার কবল থেকে রক্ষা করছে উপজেলাবাসীকে। কিন্তু বাঁধগুলো সঠিক তদারকির অভাবে প্রতি বছরই কোথাও না কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়।

জানা গেছে, ১০ বছর আগে বেড়িবাঁধ থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের দূরত্ব ছিল ২০ কিলোমিটার দূরে। এক যুগ যেতে না যেতেই এর দূরত্ব দাঁড়িয়েছে শূন্য থেকে ৫০০ গজ দূরে। যার ফলে কপাল পুড়ছে এ অঞ্চলের মানুষের। গত বছরের বন্যায় বানের পানির তোড়ে ধনারচর বেড়িবাঁধটি কর্তিমারী ঘাটে ৩০০ মিটার, চাক্তাবাড়িতে ৪০ মিটার ও ফৌজদারি বেড়িবাঁধটি আলী আকবরের বাড়ির নিকট ৪০ মিটার ভেঙে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়। করোনা ও নানা অজুহাতে বাঁধগুলো মেরামত না করায় অরক্ষিত থেকে যায়। ধনারচর ও ফৌজদারি বেড়িবাঁধ ভাঙন অংশে মেরামত কাজ করার কথা থাকলেও বাজেট না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। বাঁধটি উপজেলা শহর রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ। তবে বাঁধটি এখনো সুরক্ষিত নয়। ফৌজদারি বাঁধটি এখনো বন্দবেড় জলিলের কুড়া ও মহিলা কলেজের দক্ষিণাংশে ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এ ব্যাপারে ইউএনও আল ইমরান বলেন, বন্যার পানি যাতে বাঁধ ভেঙে শহরে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে।

রাজাপুরে বিলীন হতে যাচ্ছে বহু স্থাপনা

ঝালকাঠি সংবাদদাতা জানান, জেলার রাজাপুরে বিষখালী নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হতে চলেছে মঠবাড়ি ইউনিয়নের বাদুরতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অনেক স্থাপনা। জোয়ারের পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে ভাঙন। ইতোমধ্যে স্কুলটির কয়েকটি রুম ও বারান্দা বিলীন হয়ে গেছে। যেকোনো সময় হারিয়ে যাবে পুরো স্কুল এবং পাশে থাকা জামে মসজিদ। এর আগে বিভিন্ন সময়ে বাদুরতলা বাজারের অর্ধশত দোকান, বসতঘর, গাছপালা, কয়েক শ’ একর জমি বিলীন হয়ে গেছে। ভিটা মাটি হারিয়ে অনেকে আজ পথে বসেছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই বিষখালী নদীর বিভিন্নস্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বাদুরতলা-পুখরীজানা-মানকি সুন্দর সড়ক ও বাদুরতলা-চল্লিশ কাহনিয়া সড়কটিও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে মঠবাড়ি ও বড়ইয়া ইউনিয়নের হাজারো মানুষ বিপাকে পড়েছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য দেলোয়ার খলিফা জানান, জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধ করা না গেলে অচিরেই হয়তো বাদুরতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অস্তিত্বই হারিয়ে যাবে। রাজাপুরের ইউএনও সোহাগ হাওলাদার বলেন, ‘ভাঙন থেকে বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রকৌশলী পাঠিয়ে পরিদর্শন করানো হয়েছে এবং ম্যানেজিং কমিটিকে রেজুলেশন করে ভাঙনের মুখে ভবনটি নিলাম দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

রাজাপুরে বিষখালীতে বিলীন হতে চলেছে স্কুলসহ অনেক স্থাপনা

ঝালকাঠি সংবাদদাতা জানায়, ঝালকাঠির রাজাপুরে বিষখালী নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদীতে বিলীন হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী মঠবাড়ি ইউনিয়নের বাদুরতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অনেক স্থাপনা।

জোয়ারের পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে নদীভাঙন। ইতোমধ্যে স্কুলটির কয়েকটি রুম ও বারান্দা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হয়তো যেকোনো সময় হারিয়ে যাবে পুরো স্কুল এবং স্কুলের পাশে থাকা জামে মসজিদ। এর আগে বিভিন্ন সময়ে বাদুরতলা বাজারের অর্ধশত দোকান, বসতঘর, গাছপালা কয়েক শ’ একর জমি বিলীন হয়ে গেছে। ভিটা মাটি হারিয়ে অনেকে আজ পথে বসেছেন। বিদ্যালয়ের কক্ষ ভেঙে যাওয়ায় ওই ভবনটিতে অনেক আগ থেকেই ক্লাস বন্ধ করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পানি বেড়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই বিষখালী নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। তীব্র ভাঙনে বাদুরতলা লঞ্চঘাট, বাদুরতলা বাজার, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আশপাশের সড়ক এরই মধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে শতাধিক বসতবাড়ি, একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাদুরতলা জামে মসজিদ এবং বড়ইয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এ ছাড়া বাদুরতলা-পুখরীজানা-মানকি সুন্দর সড়ক ও বাদুরতলা-চল্লিশ কাহনিয়া সড়কটিও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে মঠবাড়ি ও বড়ইয়া ইউনিয়নের হাজারো মানুষ বিপাকে পড়েছেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইউব আলী জানান, বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য একাধিকবার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় বিদ্যালয়টি রক্ষা করা আর সম্ভব হবে না। এরই মধ্যে বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশের একটি কক্ষ আসবাবপত্রসহ রাতের আঁধারে ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তবে ইউএনও পরিদর্শন করেছেন এবং স্কুলটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে ব্লক বা বড় গাছের পাইলিং না দেয়া হলে পুরো স্কুলই বিলীন হয়ে যাবে। বর্তমানে নিরুপায় হয়ে পরিচালনা পর্ষদ স্কুলের জন্য অন্য জায়গায় জমি কেনার চেষ্টা করছেন।’

মঠবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল সিকদার বলেন, ‘স্কুলটি বাঁচাতে ও বিষখালীর ভাঙন বন্ধ করতে বহুবার প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হয়েছি। তবে দুঃখের বিষয়, এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিদ্যালয়টি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করছি। তবে অর্থাভাবে তা এখনো সম্ভব হয়নি।’

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/513295/