১ জুলাই ২০২০, বুধবার, ১২:৩৪

করোনায় মোট মৃত্যুর ৬৩ শতাংশই জুনে

এক দিনে রেকর্ড ৬৪ জনের মৃত্যু; জুন মাসে মৃত্যু ১,১৫৫ জন; ২৪ ঘণ্টায় ৩,৬৮২ রোগী শনাক্ত

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক দিনে ৬৪ জনের মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মারা যাওয়া মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮৪৭ জনে। গত ৩১ মে পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৯২ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরে নিয়মিত বুলেটিন থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুসারে চলতি ১ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজার ১৫৫ জনে। অর্থাৎ মারা যাওয়াদের মধ্যে ৬৩ শতাংশই চলতি জুন মাসে।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১-৭ জুন ১৯৬ জন, ৮-১৪ জুন ২৮৩ জন, ১৫-২১ জুন ২৯৩ জন এবং সর্বশেষ ২২-৩০ জুন পর্যন্ত ৩৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। হঠাৎ করে এক দিনে ৬৪ জনের মৃত্যুর খবরে সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। গত কয়েক দিন মৃত্যুর সংখ্যা ৩৪ থেকে ৪৫ জনের মধ্যে থাকলেও হঠাৎ করে মঙ্গলবার ৬৪ জনের মৃত্যু হয়। এদিকে গত ২৯ জুন এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ চার হাজার ৩৪ জনের আক্রান্তের রেকর্ড তৈরি হয়।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজার ৬৮২ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৪৫ হাজার ৪৮৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেয়া রোগীদের মধ্যে আরও এক হাজার ৮৪৪ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে সুস্থ রোগীর সংখ্যা ৫৯ হাজার ৬২৪ জনে দাঁড়িয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার অনলাইনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: নাসিমা সুলতানা মঙ্গলবার দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সবশেষ তথ্য তুলে ধরেন।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ৮ মার্চ। তার ১০ দিনের মাথায় প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। ১৮ জুন দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। মৃতের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে যায় ২২ জুন। এর আগে ১৬ জুন এক দিনে মোট ৫৩ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিনে। এতদিন সেটিই ছিল এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। আর সোমবারের বুলেটিনে এক দিনে চার হাজার ১৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর, এখন পর্যন্ত সেটিই সর্বোচ্চ।

ডা: নাসিমা সুলতানা বলেন, গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৫২ জন পুরুষ ও ১২ জন নারী। ৫১ জন হাসপাতালে এবং ১৩ জন বাড়িতে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে তিনজনের বয়স ছিল ৮০ বছরের বেশি। এ ছাড়া ১১ জনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে, ১৬ জনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, ২১ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ছয়জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, সাতজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল। এই ৬৪ জনের মধ্যে ৩১ জন ঢাকা বিভাগের, ১২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, সাতজন খুলনা বিভাগের, সাতজন রাজশাহী বিভাগের, দুইজন সিলেট বিভাগের, দুইজন বরিশাল বিভাগের এবং দুইজন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

বুলেটিনে জানানো হয়, দেশের ৬৬টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ৪২৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে সাত লাখ ৬৬ হাজার ৪০৭টি নমুনা। নাসিমা সুলতানা জানান, ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৯৮ শতাংশ, মৃতের হার ১ দশমিক ২৭ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৪৪৯ জনকে এবং এ পর্যন্ত আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ২৬ হাজার ৫৮৭ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৫৪৪ এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ১১ হাজার ৪৪০ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ১৫ হাজার ১৪৫ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই হাজার ৫৪২ জনকে, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে তিন লাখ ৬৩ হাজার ৮৬৬ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ৮৩৪ জন, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন থেকে মোট ছাড় পেয়েছেন দুই লাখ ৯৯ হাজার ১৯৯ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৬৪ হাজার ৬৬৭ জন।

ডা: নাসিমা বরাবরের মতো করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ তুলে ধরেন। বিশেষ করে করোনার এই দুঃসময়ে গর্ভবতী মায়েদের করণীয় তুলে ধরা হয় বুলেটিনে।

চট্টগ্রামে এক দিনেই সাড়ে ৪০০ করোনারোগী শনাক্ত

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টার মাথায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হলো ৪৪৫ জনের দেহে। রেকর্ড এক হাজার ৫৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এসব রোগীর হদিস পাওয়া যায়। তাতে এই প্রথম এক দিনে চার শতাধিক করোনারোগী দেখল চট্টগ্রাম। নতুন শনাক্তের মধ্যে নগরেই রয়েছে ৩২৪ জন। এই নিয়ে চট্টগ্রামে করোনা রোগীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল আট হাজার ৪৮০ জনে। যাদের মধ্যে পাঁচ হাজার ৮৩৯ জন নগরের ও দুই হাজার ৬৪১ জন বিভিন্ন উপজেলার। একই সাথে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় চট্টগ্রামে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা: সেখ ফজলে রাব্বি এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, চট্টগ্রামের সরকারি চারটি ও বেসরকারি দু’টি ল্যাব এবং কক্সবাজারের একটি ল্যাব মিলিয়ে মোট এক হাজার ৫৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় আরও ৪৪৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা ও শনাক্তের রেকর্ড এটি।

ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি)-তে ২১৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩১ জনের দেহে করোনা পজিটিভ মিলেছে। যাদের মধ্যে ১৮ জন নগরের ও ১৩ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ইউনিভার্সিটি (সিভাসু) ল্যাবে ২৩৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসের জীবাণু পাওয়া গেছে মাত্র ৮৩ জনের শরীরে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে দিনের সর্বাধিক ৪৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ১২১ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়, যাদের মধ্যে ১০৭ জন নগরের ও ১৪ জন বিভিন্ন উপজেলার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ১৫১ জনের নমুনা পরীক্ষা করিয়ে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন ৪৫ জন। অন্যদিকে বেসরকারি ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাবে ১২৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৩ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় টানা দ্বিতীয় দিনের মতো সবেচেয়ে বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয় শেভরণ ল্যাবে। সেখানে ২৮০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে দিনের সর্বোচ্চ ১৪১ জনের করোনা শনাক্তের কথা জানা যায়। এ ছাড়া কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে চট্টগ্রামের ১০ জনের নমুনা পরীক্ষায় একজন উপজেলার করোনা রোগী মিলেছে।

কুমেক হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে শিশুসহ চারজনের মৃত্যু

কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের করোনা উপসর্গ নিয়ে এক শিশু ও দুই নারীসহ চারজন মারা গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় মেডিক্যালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। মঙ্গলবার কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: মুজিবুর রহমান জানান, ২৪ ঘণ্টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজন মারা গেছেন। তারা হলেন- কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার দ্বিতীয় মুরাদপুরের জাকিরের মেয়ে আইরিন (৮), কুমিল্লা কোটবাড়ি এলাকার আবদুল মালেকের মেয়ে আয়শান বিবি (৬০), কুমিল্লা সদর উপজেলার দৌলতপুর এলাকার সিরাজ উদ্দিনের ছেলে সেলিম হোসাইন (৫৩) ও চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার আমিনুল্লাহর মেয়ে নূরজাহান (৬৫)।

গাংনীতে উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু

মেহেরপুর সংবাদদাতা জানান, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে জয়নাল আবেদীন (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। তিনি বামুন্দী পশ্চিম পাড়ার খোদা বক্সের ছেলে। জয়নাল আবেদীন বেশ কয়েকদিন ধরে সর্দি কাশি ও জ্বরে ভুগছিলেন। গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম শাহনেওয়াজ এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

দশমিনায় শ্বাসকষ্টে শিক্ষকের মৃত্যু

দশমিনা (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় শ্বাসকষ্ট নিয়ে মোসলেম উদ্দিন মাস্টার (৬৬) নামে এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭ দিকে দশমিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার আলীপুরা ইউনিয়নের পশ্চিম আলীপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন। সোমবার রাত ৩টার দিকে ওই শিক্ষক শ্বাসকষ্ট নিয়ে দশমিনা হাসপাতালে ভর্তি হন। গতকাল সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

দামুডহুদায় উপসর্গ নিয়ে শ্রমিক নেতার মৃত্যু

দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) সংবাদদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সহসভাপতি কওসর আলি শাহ (৬৫) করেনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুরে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা: আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল শুভ জানান, কওসর আলি শাহ সর্দি কাশি ও জ্বর নিয়ে গত সোমবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে নমুনা দিয়েছিলেন। রিপোর্ট আসার আগেই তিনি মারা যান।

নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীতে করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত হলেন দুই হাজার ৯২ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে ৪৩ জন। নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছে নোয়াখালী সদর উপজেলায় ১০ জন, বেগমগঞ্জে ১০ জন, সোনাইমুড়ীতে সাতজন, চাটখিলে একজন, কোম্পানীগঞ্জে ১১ জন ও কবিরহাটে ছয়জন। গতকাল সকালে জেলা সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় পুলিশের চার সদস্য ও দুই স্বাস্থ্যকর্মীসহ আরও ১১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯৯ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২৯ জন এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে।

কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলায় কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় উপজেলায় নতুন করে একই পরিবারের ৯ জনসহ মোট ২৩ জন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। একই পরিবারের ৯ জনের মধ্যে আড়াই বছর এবং পাঁচ বছর বয়সের দু’টি শিশু, একজন যুবক, তিনজন তরুণী এবং দুইজন পুরুষ রয়েছেন। এ উপজেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১১৯ জন। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে ও ৬৪ জন সুস্থ হয়েছেন।

বরগুনা সংবাদদাতা জানান, বরগুনায় গত ২৪ ঘণ্টায় স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ ৩২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২২০ জনে। মোট আক্রান্তদের মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলার ১০৩ জন, আমতলী উপজেলার ৩৪ জন, বামনা উপজেলার ২৭ জন, বেতাগী উপজেলার ২২ জন, পাথরঘাটা উপজেলার ২১ জন এবং তালতলী উপজেলার ১৩ জন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকিদের মধ্যে ১১৭ জন সুস্থ হয়েছেন এবং দুইজন মৃত্যুবরণ করেছেন।

জামালপুরে শ্বাসকষ্টে একজনের মৃত্যু

জামালপুর সংবাদদাতা জানান, জামালপুরে নতুন করে আরও ১৪ জনের দেহে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে এবং সুস্থ হয়েছেন চারজন। এ নিয়ে জামালপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৬৬ জনে এবং সুস্থ হয়েছেন ২৩৮ জন। এ ছাড়াও এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। গত সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে জামালপুর স্বাস্থ্য বিভাগ। অন্যদিকে নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন আসার আগেই করোনার উপসর্গ শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জামালপুর জেলা পরিষদের অফিস সহায়ক ইদ্রিস আলী (৫৪) গত সোমবার দুপুরে মৃত্যুবরণ করেন। গত রোববার তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল এবং ওই দিনই তার নমুনা সংগ্রহ করেছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন বলে জানা গেছে। তিনি জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের ধোপাকুড়া গ্রামের কাজিম উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে।

ঝিনাইদহ সংবাদদাতা জানান, ঝিনাইদহে নতুন করে ১০ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সকালে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পিসিআর ল্যাব থেকে পাঠানো ৬৭টি নমুনার ফলাফলের মধ্যে ১০ জনের নমুনা ফলাফল পজিটিভ। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৯৫ জনে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সদরে দুইজন, মহেশপুরে তিনজন এবং কালিগঞ্জে পাঁচজন রয়েছেন। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা: সেলিনা বেগম এ তথ্য জানান।

চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, চাঁদপুরে নতুন করে পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ আরও ১৮ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। নতুন ১৮ জনসহ জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৭৪ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৭ জন। সুস্থ হয়েছেন ২৬৮ জন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়। আক্রান্ত ১৮ জনের মধ্যে চাঁদপুর সদরের আটজন, মতলব উত্তরের তিনজন, শাহরাস্তি উপজেলার তিনজন, হাজীগঞ্জের দুইজন, হইমচরের একজন ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার আইসিডিডিআরবির একজন।

শিবচর (মাদারীপুর) সংবাদদাতা জানান, মাদারীপুরের শিবচরে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, আক্রান্তদের মধ্যে শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, অগ্রণী ও কৃষি ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা, শিবচর থানা ও হাইওয়ে থানার দুই পুলিশ সদস্য এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুই কর্মচারী রয়েছেন। আক্রান্ত অন্য তিনজনের বাড়ি পৌরসভার ডিসি রোড, উপজেলার উমেদপুর ও চরজানাজাত ইউনিয়নে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত শিবচরে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ১২৩ জন।

কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় আরও আটজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তরা হলেন- চর ঝাকালিয়া গ্রামের তিনজন, পৌরসভার কামারকোনা মহল্লার একজন, কটিয়াদী পূর্বপাড়া মহল্লার দুইজন, মুমুরদিয়া ইউনিয়নের কুড়িখাই গ্রামের একজন ও ভরারদিয়া গ্রামের একজন। এ নিয়ে উপজেলায় মোট ৮৫ জন করোনায় আক্রান্ত হলেন। আক্রান্তদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ১৫ জন।

রাজশাহী বিভাগে এক দিনে আরো ২৪২ জন শনাক্ত, মৃত্যু ৭

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ২৪২ জনের নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে মারা গেছেন আরো সাতজন। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন আরো ২৩৬ জন করোনা আক্রান্ত রোগী। এ পর্যন্ত বিভাগের আটটি জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৫০০ জন। আর এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৮০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ২৮১ জন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্তের মধ্যে রাজশাহীর ৩৯ জন, নওগাঁয় একজন, নাটোরে ৯ জন, বগুড়ায় ১৩৬ জন, সিরাজগঞ্জে ৫৬ জন ও পাবনায় একজন। তবে বিভাগের অন্য জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও জয়পুরহাটে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। ডা: গোপেন্দ্রনাথ আরো জানান, রাজশাহী বিভাগে এ পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৫০০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বগুড়ায় দুই হাজার ৯১৮ জন করোনায় আক্রান্ত। এ ছাড়া রাজশাহীতে ৬১০ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১০১ জন, নওগাঁয় ৪৫২ জন, নাটোরে ১৬৭ জন, জয়পুরহাটে ৩৬৬ জন, সিরাজগঞ্জে ৪৩৯ জন ও পাবনায় ৪৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত বিভাগের আটটি জেলার মধ্যে ছয়টি জেলায় মৃতের সংখ্যা ৮০ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন রাজশাহীতে একজন, বগুড়ায় চারজন, সিরাজগঞ্জে দুইজন। আর এ পর্যন্ত রাজশাহীতে আটজন, নওগাঁয় ছয়জন, নাটোরে একজন, বগুড়ায় ৫২ জন, সিরাজগঞ্জে পাঁচজন ও পাবনায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে। এখনো জয়পুরহাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী মারা যাননি।

গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন আরো ২৩৬ জন। এ নিয়ে বিভাগে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ২৮১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী। এর মধ্যে রাজশাহীর ৬৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৬১ জন, নওগাঁয় ২৫৭ জন, নাটোরে ৫৮ জন, জয়পুরহাট ১৩৭ জন, বগুড়ায় ৫৭৪ জন, সিরাজগঞ্জ ২৩ জন ও পাবনায় ১০৩ জন।

ফরিদপুরে প্রথম পুলিশ সদস্যের মৃত্যু

ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ফরিদপুরে প্রথম এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। ওই পুলিশ সদস্যের নাম হাফিজুর রহমান (৫৩)। তিনি সর্বশেষ পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে ফরিদপুর সদর কোর্টে কর্মরত ছিলেন। তিনি মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার নাকোল ইউনিয়নের ঘাষিয়ারা গ্রামের মৃত রজব আলী মোল্লার ছেলে। জানা গেছে, শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে গত ২৫ জুন তিনি নমুনা দেন। ২৮ জুন তার করোনা শনাক্ত হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ওই দিন রাতে তাকে ফরিদপুর থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তেজগাঁও পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার রাত ৩টার দিকে মারা যান। ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান বলেন, ফরিদপুর জেলা পুলিশের ১৩২ জন সদস্যের এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের উপপরিদর্শক হাফিজুর রহমান মারা গেলেন।

বামনায় উপসর্গ নিয়ে ইউপি সদস্যের মৃত্যু

বামনা (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে বরগুনার বামনা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য গোলাম মোস্তফা বাবুল সিকদার বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় তার শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পেলে লাইফ সাপোর্টে নেয়ার পরে তিনি মারা যান।

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে করোনা রোগীর সংখ্যা ৬০০ পার হয়েছে। জেলায় নতুন করে এক দিনে সর্বোচ্চ ৪০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৬১২ জনে। এ দিন আরো ৮৩ জনের নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২২৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৩৭৫ জন। বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪৩ জন। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে টাঙ্গাইল সদরে ১৭ জন, মির্জাপুরে ১১ জন, গোপালপুরে চারজন, দেলদুয়ারে চারজন, ঘাটাইলে দুইজন, কালিহাতীতে একজন ও নাগরপুরে একজন রয়েছেন।

শেরপুর সংবাদদাতা জানান, শেরপুরে গতকাল নতুন করে পুলিশ সদস্যসহ আরো ৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শেরপুর সদর উপজেলায় তিনজন, শ্রীবরদীতে দুইজন, নকলায় একজন ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় তিনজন। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলেন ২৪৪ জন। এ দিকে গত রোববার রাতে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ-১ আদালতের বিচারক কামাল হোসেন (৪৬) করোনায় আক্রান্ত হয়ে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন।

মহেশপুর (ঝিনাইদহ) সংবাদদাতা জানান, ঝিনাইদহের মহেশপুরে নতুন আরো তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে এ উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৬ জনে। নতুন করে আক্রান্ত হলেন- উপজেলার খালিশপুরে দুইজন এবং পূর্ব দারিয়াপুর গ্রামে একজন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/512138/