সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া সড়ক (বাঁয়ে) এবং মানিকগঞ্জের ঘিওরে নদীভাঙন : নয়া দিগন্ত
৩০ জুন ২০২০, মঙ্গলবার, ১:৩৮

বন্যার পাশাপাশি ভয়াবহ ভাঙন

কয়েক জেলায় অবনতি : দুর্ভোগ বাড়ছে দুর্গতদের : জামালপুরে শিশুর মৃত্যু

দেশে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। কোনো কোনো নদ-নদীর পানির উচ্চতা কমলেও ভয়াবহভাবে বাড়ছে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন। কয়েক জেলায় নতুন করে বন্যার পানি না উঠলেও পানিবন্দী থাকা মানুষের দুর্ভোগ কোনোভাবেই কমেনি। এ পর্যন্ত বন্যার বিস্তৃতি ঘটেছে ১২ জেলায়। এর মধ্যে রয়েছে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোনা, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কুমিল্লা। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে একের পর এক রাস্তাঘাট-জনপদ ডুবে মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ছেন।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতে ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি। এখন নিজেদের আর গবাদিপশুর ঠাঁই নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় দুর্গতরা। এ দিকে জামালপুরের মাদারগঞ্জে বন্যার পানিতে ডুবে এক শিশু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বগুড়ার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত : বগুড়া অফিস ও সারিয়াকান্দি সংবাদদাতা জানান, সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনা নদীতে পানি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার ৬ হাজার ৬৩২ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, যমুনা নদীতে পানি বেড়ে লোকালয়ে আসছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে এ পর্যন্ত উপজেলার পাটক্ষেত ডুবেছে ৪ হাজার ৫৮৫ হেক্টর, সবজি ৫০ হেক্টর, আউশ ১ হাজার ৯২০ হেক্টর, রোপা আমন ৬০ হেক্টর, ভুট্টা ১৫ হেক্টর ও কাঁচা মরিচ ২ হেক্টর। উপজেলায় মোট ৬ হাজার ৬৩২ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেলে যমুনা নদীর পানি ৬২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যমুনার সারিয়াকান্দি পয়েন্ট চালুয়াবাড়ী, কর্নিবাড়ী, কুতুবপুর, চন্দনবাইশা, কাজলা কামালপুর ও সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের সবজি, পাট, বর্ষালী ধানসহ উঠতি ফসলি জমিতে আগের থেকে আরো পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ দিকে ধুনট উপজেলার কয়েকটি এলাকায় যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ি ইউনিয়নের বৈশাখীর চরে পানি জমেছে, রাধানগর, নিউ সারিয়াকান্দি, শহড়াবাড়িসহ কয়েকটি এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।

ঘিওরে ভাঙনে অসহায় মানুষ : ঘিওর (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, গত কয়েক দিনের বর্ষণ আর কালিগঙ্গা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। মানিকগঞ্জের ঘিওরে ক্রমেই নদী তীরে দীর্ঘ হচ্ছে ভিটেমাটি হারা মানুষের সারি। আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে কালিগঙ্গার তীর। অসহায় মানুষের অভিযোগ এখনো পর্যন্ত সহযোগিতার জন্য কেউ এগিয়ে আসেননি। এখন নিয়তির ওপর নিজেদের ছেড়ে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে অর্ধশত বসতবাড়ি, প্রায় এক কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা, মসজিদ, মাদরাসা ও ঈদগাহ মাঠ। এ ছাড়া ভাঙনের মুখে রয়েছে আরো দুই শতাধিক বসতবাড়ি, একটি বিদ্যালয়, একটি মাদরাসা, এতিমখানা, একটি ব্রিজ, বাজার, রাস্তাসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি।

সরেজমিন ভাঙনকবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বানিয়াজুরি ইউনিয়নের পূর্ব কুমুল্লী, কেল্লা, নকিববাড়ী, জাবরা, তরা, উত্তর তরা এলাকার মানুষজনের দিন কাটে ভাঙনের শব্দ শুনে। ভাঙন ঠেকাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় বিপদ বাড়ছে নদীর পাড়ের মানুষের। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে আলোচনা হয়েছে। ঘিওরে ইতোমধ্যে ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনের কবলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কাজ চলমান রয়েছে।

কাজিপুরে পানিবন্দী ৬ ইউনিয়নবাসী : কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল এবং ভারীবর্ষণে কাজিপুর পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল সকাল ৬টায় বিপদসীমার ৬১ সেমি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে নদীর দুই কূল ছাপিয়ে চরাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়নের বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করায় আটকে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে পাট, আউশ ধান, কাউন, ভুট্টা, বাদাম, সবজি খেত বীজতলা ও গোচারণ ভূমি। কাজিপুরের বেশির ভাগ কৃষকের সোনালী স্বপ্নের ভিত গড়ে দেয়া পাটখেত পুরোটাই তলিয়ে গেছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম রফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে এ পর্যন্ত ৬১০ হেক্টর আউশ ধান, ১২০ হেক্টর ভুট্টা, ৪০ হেক্টর আখ, ১৬০ হেক্টর কাউন, ৪৫০ হেক্টর শাকসবজি এবং ছয় হাজার ১৫০ হেক্টর জমির পাট সম্পূর্ণ পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রেজাউল করিম জানান, এতে করে মোট কুড়ি হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এদিকে পানিবন্দী পরিবারগুলো শিশু, বৃদ্ধ এবং গবাদি ও পশুপাখি নিয়ে পড়েছে বিপাকে। তাদের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও খাবারের সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। অনেক পরিবার বাঁধে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে।

ভূঞাপুরের চরাঞ্চলে ব্যাপক ভাঙন : ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, কয়েকদিন ধরে যমুনার অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে ভূঞাপুরে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। এতে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। নদীতীরবর্তী অনেক স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। গৃহহারা হয়েছে শত শত পরিবার। গাবসারা ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির জানান, ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ভূঁইয়া পাড়া, ফলদাপাড়া, রামপুর, খন্দকার পাড়া, চন্দনী, নিকলাপাড়া, মেঘারপটল গ্রামে প্রায় ৩১০টি পরিবার নদীতে বিলীন হয়েছে। উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ২৫০টি পরিবার নদীতে বিলীন হয়েছে বলে জানান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী মোল্লা। এদিকে ভাঙন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ। গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুর বাড়ি, ভালকুটিয়া ও কষ্টাপাড়া গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ি যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সিরাজুল ইসলাম জানান, যমুনার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আপাতত জিও ব্যাগ ফেলা বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পানি কমার সাথে সাথে পুনরায় জিও ব্যাগ ফেলা হবে। ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা: নাসরিন পারভীন জানান, ভাঙনকবলিত পরিবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ৮৪ সেন্টিমিটার ওপরে পানি : দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, ব্রহ্মপুত্র, যমুনাসহ শাখা নদীসমূহের পানি আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে গেছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার উপর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলা পরিষদ- দেওয়ানগঞ্জ রেল স্টেশন-হাসপাতাল রোড পানিতে ডুবে গেছে। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদের অধিকাংশ বিভাগীয় দফতর পানিতে ডুবে যাওয়ায় নৌকায় চড়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে যাওয়া-আসা করছেন। বেলতলী বাজার-মলমগঞ্জ সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ি রোডে ম-ল বাজার এলাকায় প্রধান সড়কের বৃহদাংশ ভেঙে গেছে। চিকাজানী ইউনিয়নের খোলাবাড়িতে প্রায় ছয় কোটি টাকায় নির্মিত বাহাদুরাবাদ নৌ-থানা বিলীনের মুখে। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদের কয়েক কোটি টাকায় কমপ্লেক্স নির্মাণস্থল পানিতে ডুবে গেছে। সোমবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা রাজিয়া নৌকায় চড়ে গিয়ে অফিস করেছেন। আলাপকালে তিনি জানান, মঙ্গলবার থেকে অস্থায়ী কার্যালয়ে অফিস করার চিন্তাভাবনা চলছে।

করতোয়ার তীররক্ষা কাজের ব্লক নদীতে : পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, পলাশবাড়ী-পীরগঞ্জ সীমান্ত এলাকায় বদনাপাড়া নামক স্থানে করতোয়া নদীর বামতীর প্রতিরক্ষা কাজ শেষ না হতেই দুইবার নদীতে ব্লক ধসে যাওয়ায় কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জানা যায়, পাউবোর অধীনে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ ও রংপুর সদর উপজেলার যমুনেশ^রী, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর তীর সংরক্ষণ ও নদী পুনর্খনন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজের প্রায় চার কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে গত বছরের মার্চ থেকে কাজ শুরু হয়। ২৭ জুন রাতে আনুমানিক ৫০ ফুট জায়গার ব্লক নদীতে ধসে যায়। এলাকাবাসী জানায়, কিছু দিন আগে আরো একবার ওই কাজের কিছু অংশের ব্লক ধসে গিয়েছিল। কাজ শেষ না হতেই দুইবার ব্লক ধসে যাওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উপবিভাগীয় প্রকৌশলী গোলাম জাকারিয়াকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, নদীতে পানির গভীরতা বেশি থাকায় ব্লক নদীতে ধসে যাচ্ছে। উপসহকারী প্রকৌশলী ফারুক সিকদার জানান, চার বছরের মধ্যে যতবার ধসে যাবে ততবার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সংস্কার করবে।

জামালপুরে দেড় লাখ বন্যার্ত, শিশুর মৃত্যু : জামালপুর সংবাদদাতা জানান, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুরে নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সরকারি হিসাবে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় দেড় লাখ মানুষ। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে এক হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমির পাট, ১৩০ হেক্টর আউশ ধান, ১৭৭ হেক্টর সবজি, ১৭ হেক্টর বীজতলা ও দুই হেক্টর জমির বাদাম। এ পর্যন্ত জেলার ২৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও গতকাল বেলা ৩টায় দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আরো দু-একদিন একই গতিতে পানি বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ।

এদিকে রোববার সন্ধ্যায় মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ী ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে বাবুল মিয়ার ছেলে নার্সারির ছাত্র সোহান (৭) বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। এ ছাড়া সোমবার দুপুরে মেলান্দহ উপজেলার রোকনাই গ্রামে রেহান আলীর ছেলে সানি (১০) নিখোঁজ হয়েছে।

শিবচরে ব্যাপক ভাঙন : শিবচর (মাদারীপুর) সংবাদদাতা জানান, পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বেড়ে শিবচরের চরাঞ্চলে ব্যাপক নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে একাধিক স্কুল ভবন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক, বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের বন্দরখোলায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। নদীতে বিলীন হয়েছে গত বছরে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত একটি মসজিদ। বিলীন হয়েছে অস্থায়ী বাঁধের প্রায় ৩০ মিটার। এ ছাড়াও ঝুঁকিতে রয়েছে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তিন তলা ভবন, প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন ও একটি বাজারসহ জনপদ।

রাজারহাটে ২০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে : রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, হু হু করে বাড়ছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ। তিস্তা ও ধরলা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ, ঘড়িয়ালডাঙ্গা, নাজিমখাঁন ও ছিনাই ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জানা যায়, তিস্তা ও ধরলা নদীতে ঢলের পানি প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে। তিস্তার পানিতে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের বিদ্যানন্দ, চরবিদ্যানন্দ, গাবুর হেলান, তৈয়বখাঁ, রামহরি, চতুরা, রতি মৌজা, ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চরখিতাবখাঁ, সরিষাবাড়ি, বুড়িরহাট, গতিয়াশাম মৌজা, নাজিমখাঁন ইউনিয়নের সোমনারায়ণ ও হাসারপাড় মৌজা এবং ধরলায় পানি বৃদ্ধির কারণে ছিনাই ইউনিয়নের জয়কুমোর, কালুয়ারচর, কিং ছিনাই মৌজার হাজার হাজার একর ফসলি জমি ডুবে গেছে। ভেসে গেছে তিন শতাধিক পুকুর ও বিলের মাছ। এসব এলাকার রোপা-আমনের বীজ তলার বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দী মানুষজন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাজিবুল করিম জানান, চারটি ইউনিয়নের পানিবন্দী ও বন্যার্ত মানুষদের জন্য এরই মধ্যে আমরা ১৮ মে.টন চাউল, ৯০ হাজার টাকা এবং শিশুখাদ্যের জন্য নগদ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহা: যোবায়ের হোসেন জানান, পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী রয়েছে তা দ্রুত বিতরণ করা হবে। সোমবার দুপুরে কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানান, ধরলার পানি বিপদসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার উপরে এবং তিস্তার নদীর পানি বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/511909/