আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত রাজধানীর কমলাপুর টিটিপাড়া এলাকার বস্তি : নয়া দিগন্ত
২৮ জুন ২০২০, রবিবার, ১১:৩৬

কমলাপুরের টিটিপাড়া বস্তি পুড়ে ছাই

আগুনে সব হারিয়ে নিঃস্ব ৩ শতাধিক বস্তিবাসী

খোলা আকাশের নিচে অসহায় মানুষগুলো

করোনা দুর্যোগের মধ্যে আগুনে সহায়-সম্পদ হারিয়েছেন রাজধানীর কমলাপুরের টিটিপাড়ার তিন শতাধিক বস্তিবাসী। গত শুক্রবার মধ্যরাতে মেথরপট্টি বস্তিতে দেড় ঘণ্টায় পুড়ে ছাই হয়ে যায় প্রায় অর্ধশত বসতঘর। জানা গেছে, শুক্রবার রাত ২টার দিকে বস্তিটিতে আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে কেউ হতাহত হননি বলে জানা গেছে।

মাথা গোজার ঠাঁইটুকুও না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। অভুক্ত, অসহায় মানুষগুলো অভিযোগ করলেন কোনো জনপ্রতিনিধিকে পাশে না পাওয়ার। মহামারীর মধ্যে কোথায় যাবেন, সে প্রশ্নেরও নেই কোনো উত্তর। বারবার পুনর্বাসনের দাবি জানালেন তারা ।

বস্তিবাসী জানান, তারা ঘুমের মঝেই ছিলেন। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন আগুন বলে বস্তির কেউ কেউ চিৎকার করতে থাকে। এ সময় কিছু মানুষ তাদের ঘরের মালামাল বের করতে সক্ষম হলেও বাকিরা তা পারেননি। বেশির ভাগ বস্তিবাসীর শেষ সম্বল ঘরটিও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পুড়ে গেছে ঘরে থাকা টিভি, আসবাবপত্র, চেয়ার, টেবিল, ফ্রিজ, সাইকেল ও পরনের কাপড়ও। নিতাই নামে একজন জানান, তিনি তার সন্তান ও স্ত্রী ঘুমে ছিলেন। হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ঘুম থেকে উঠেন। এরপর দরজা খুলে বাইরে এসেই দেখতে পান দাউ দাউ করে বস্তিতে আগুন জ¦লছে, আর বস্তিবাসী দিগি¦দিক ছোটাছুটি করছেন। যে যার মতো ঘর থেকে বের হয়ে পালাচ্ছেন। সেই আগুন তার ঘরের দিকে আসছে দেখতে পেয়ে ওই সময় তিনি তার সন্তান ও স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করেন। মুহূর্তেই পুরো ঘরটি পুড়ে যায়। বস্তিবাসী অভিযোগ করেছেন, ওই সময় বস্তির কোনো জায়গায় পানি ছিল না। এ কারণে তারা পানিরও ব্যবহার করতে পারেননি। গতকাল সকাল পর্যন্ত বস্তিবাসী খোলা আকাশের নিচেই রাত কাটিয়েছেন।

তারা আরো জানিয়েছেন, এই বস্তিতে বেশির ভাগ মানুষই ছিলেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কর্মী। তারা সবাই দিনমজুর। তবে করোনায় শেষ সম্বলটুকুও পুড়ে যাওয়াতে এসব মানুষ এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। গতকাল পর্যন্ত তারা তেমন কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাননি বলেও জানিয়েছেন। তবে স্থানীয় কাউন্সিলর তাদের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, টিটিপাড়া মেথর পট্টি বস্তিতে অন্তত অর্ধশত ঘর ছিল। আগুনে তার প্রায় সবই পুড়ে গেছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিজেরাই ঘরগুলো তুলে সেখানে বসবাস করতেন। বাঁশ-কাঠ-টিনের তৈরি ঘর হওয়ায় আগুন দ্রুত ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

গতকাল শনিবার সকালে দেখা যায়, অগ্নিকাণ্ডের স্থানে পোড়া টিন সরিয়ে জিনিসপত্র খুঁজছেন বাসিন্দাদের কেউ কেউ। যদিও কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। তবু আধাপোড়া অবস্থায় পাওয়া দুই-একটি গৃহস্থালির সরঞ্জাম তারা সংরক্ষণ করছেন। বাসিন্দারা জানান, সামান্য সম্বলটুকুও পুড়ে ছাই হয়েছে। তাদের বেশির ভাগ লোকের পক্ষে গতকালের খাবার জোগাড় করাও সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে তারা প্রশাসনের সহায়তা আশা করেন। তবে দুপুর পর্যন্ত দায়িত্বশীল কেউ খোঁজ নেননি বলে তারা অভিযোগ করেন। শাজাহানপুর থানা পুলিশ জানায়, রাতে আগুন লাগার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বস্তির বাসিন্দা ও কৌতূহলী লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দেয়। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের কাজেও সহায়তা করে।

এ দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানিয়েছেন, বস্তিটি ঘনবসতি হওয়ার দরুন সরু গলিতে আগুন নিভানোর পাইপ নিয়ে প্রবেশ করাটা কঠিন ছিল। আগুন লাগার মিনিট পাঁচেক পরেই তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বস্তিতে। আগুনের মাত্রা বাড়ছিল। অন্য দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছিলেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, করোনার কারণে ঢাকার ওই এলাকায় লোকজন খুব একটা বেশি ছিল না। এ কারণে বস্তিবাসী প্রথমে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা পারেননি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছুটে এলেও আগুনে সব পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অপারেটর বাবুল মিয়া জানান, মধ্যরাতে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত সাড়ে ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও কেউ হতাহত হয়েছেন কিনা সে বিষয়েও কিছু বলতে পারেননি।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/511472