২৭ জুন ২০২০, শনিবার, ১:৩৩

গোপনে বিদেশে টাকা যাচ্ছে পাঁচ কারণে, প্রভাবশালীরা জড়িত বাড়ছে অর্থ পাচার

রেমিটেন্সের অর্ধেকই বিদেশ চলে যাচ্ছে * সুইস ব্যাংকের সঙ্গে এমওইউ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দুদকের চিঠি * অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এসব বন্ধে বড় ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জরুরি

প্রতিবছর দেশে আসা রেমিটেন্সের (প্রবাসী আয়) প্রায় অর্ধেকের সমপরিমাণ অর্থ বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশে পাচার হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়া এবং অর্থনৈতিকভাবে প্রতিযোগী দেশগুলোকে পেছনে ফেলছে বাংলাদেশ। সুনির্দিষ্ট কয়েকটি প্রক্রিয়ায় এ অর্থ পাচার হয়। এর মধ্যে রয়েছে- বৈদেশিক বাণিজ্যে মিথ্যা ঘোষণা, হুন্ডি এবং ভিওআইপি ব্যবসা।

তবে সম্প্রতি দেশ থেকে সরাসরি বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে নিয়ে যাওয়ার তথ্য আসছে। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই), সুইস ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রভিক্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজের তৈরি করা পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে অর্থ পাচারের তথ্য উঠে এসেছে।

আন্তর্জাতিক এসব সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে পাঁচ কারণে টাকা পাচার হয়। এর মধ্যে রয়েছে- বিনিয়োগের পরিবেশের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার শঙ্কা, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর দুর্বল নজরদারি, সুশাসনের ঘাটতি এবং বেপরোয়া দুর্নীতি।

এ ছাড়া এর সঙ্গে অনেক প্রভাবশালী জড়িত থাকায় টাকা পাচার বেড়েছে। এদিকে অর্থ পাচারকারীদের তথ্য পেতে সুইস ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, পাচারকারীদের টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ জন্য সবার আগে তথ্য নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, দুদকের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে সুইস ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক করতে বলেছি। এই সমঝোতা স্মারক হলে, নাম-ঠিকানাসহ পাচারকারীদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে টাকা ফিরিয়ে আনাসহ অপরাধে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, দুদকের তফসিলভুক্ত আইনে যতটুকু কাজ করা যায়, তার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা চেষ্টা করছি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে প্রতিবছর দেশে গড়ে ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আসে। কিন্তু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে দেশ থেকে গড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি পাচার হয়ে যায়।

জানুয়ারি প্রকাশিত জিএফআইয়ের সর্বশেষ রিপোর্টে বলা হয়েছে- বাংলাদেশ থেকে গড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের উপরে পাচার হয়। এর পরের মাসে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কর্মীদের ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি)।

ওই রিপোর্টে বলা হয়, বিদেশি কর্মীরাই বাংলাদেশ থেকে বছরে ৩ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার অর্থ পাচার করে। অর্থনীতিবিদ এবং এ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাচার রোধে বিভিন্ন কথা বলা হলেও বাস্তবে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। পাচারের সঙ্গে অনেক প্রভাবশালী জড়িত। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তাদের মতে, বড় ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া টাকা পাচার বন্ধ করা যাবে না।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য যুগান্তরকে বলেন, দেশের ভেতরে অস্থিতিশীলতার কারণে টাকা পাচার বাড়ে। এটা বন্ধের ব্যাপারে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আছে বলে মনে হয় না। এ ধরনের সিদ্ধান্ত থাকলে পানামা পেপারস এবং প্যারাডাইস পেপারসে যাদের নাম আছে, তাদের ধরে এনে শাস্তি দেয়া হতো।

তার মতে, সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না থাকলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-সহ অন্যান্য সংস্থা যতই বাহ্যিক তৎপরতার কথা বলুক, তাতে কোনো লাভ হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান যুগান্তরকে বলেন, টাকা পাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময় কাজ করছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে যেসব আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন রয়েছে, আমরা তা পুরোপুরি মেনে চলছি।

তবে তিনি বলেন, কোনো বাংলাদেশিকে বিদেশে টাকা রাখার অনুমতি দেয়া হয়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া আছে। বিশ্বের সব কটি দেশই টাকা ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তবে এর সুফল খুব কম। বিভিন্ন স্টাডি রিপোর্টে দেখা গেছে, ফিরিয়ে নেয়ার হার মাত্র ৪-৫ শতাংশ। আর পদ্ধতিও দীর্ঘমেয়াদি। আন্তর্জাতিক এবং সংশ্লিষ্ট দেশের আইনকানুন মেনে আনতে হয়।

বৃহস্পতিবার সুইস ব্যাংক তার আমানতের তথ্য প্রকাশ করে। এতে দেখা গেছে, সেখানে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত টাকার পরিমাণ ৫ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দক্ষিণ এশিয়ায় এবার ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। আর ভারতের সঙ্গে ব্যবধানও একেবারে কমে এসেছে। সুইস ব্যাংকে আমানতের দিক থেকে প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়াও বাংলাদেশের পেছনে।

এর মানে হল, এসব দেশ টাকা পাচার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিলেও, বাংলাদেশ সে ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। গত বছর পাকিস্তানের আমানত ছিল ৭২ কোটি ফ্র্যাংক। এবার তা কমে ৩৫ কোটিতে নেমে এসেছে। ভারত আগের বছরের চেয়ে ৪ কোটি ফ্র্যাংক কমে ৮৯ কোটি ২০ লাখে নেমে এসেছে। এ ছাড়া নেপাল ১৭ কোটি, আফগানিস্তান ৪ কোটি ৫২ লাখ, ভুটান ১৩ লাখ, শ্রীলংকা ৪ কোটি এবং মিয়ানমারের ৪৭ লাখ ফ্র্যাংক আমানত রয়েছে।

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা : ২০১৯ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত টাকার স্থিতি ছিল ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্র্যাংক। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে যা ছিল ৬১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৭ সালে ছিল ৪৮ কোটি ১৩ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৬ সালে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৫ সালে ৫৫ কোটি ৮ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৪ সালে যা ছিল ৫০ কোটি ৬০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৩ সালে ৩৭ কোটি ২০ লাখ ফ্র্যাংক। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। ২০১২ সালে ছিল ২২ কোটি ৯০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১১ সালে ছিল ১৫ কোটি ২০ ফ্র্যাংক। তবে স্বর্ণালংকার, শিল্পকর্ম এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র জমা রাখলে তার আর্থিক মূল্যমান হিসাব করে আমানতে যোগ হয় না।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিস ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়। এর মধ্যে রয়েছে আমদানি পণ্যের মূল্য বেশি দেখানো এবং রফতানিতে কম দেখানো। তিনি বলেন, ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে টাকা পাচার ও তার শাস্তির ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে বলা আছে। কীভাবে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে হবে, সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং অপরাধীর শাস্তির কথা বলা আছে।

তিনি বলেন, বর্তমান আইনে পাচারকৃত অর্থের দ্বিগুণ জরিমানার বিধান রয়েছে। একইভাবে এর সঙ্গে জড়িতদের ৪-১২ বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে। কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন নেই। ফলে টাকা পাচার বাড়ছে। আর আইন বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনের কারণ এর সঙ্গে অনেক প্রভাবশালী জড়িত।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, শুধু ২০১৫ সালেই বাংলাদেশ থেকে এক লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। আর ১০ বছরে পাচার হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা।

এ ছাড়া পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসেও টাকা পাচারের তথ্য আসছে। অন্যদিকে টিআইবির হিসাবে বিদেশি কর্মীরা বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। ফলে অর্থ পাচারের সমস্যাটি অর্থনীতিতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণা অনুসারে মোটা দাগে মোট পাঁচ কারণে টাকা পাচার হচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে- বিনিয়োগের পরিবেশের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার শঙ্কা, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর দুর্বল নজরদারি, সুশাসনের ঘাটতি এবং বেপরোয়া দুর্নীতি। কিন্তু এই পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শুধু ঘোষণা নয়। পাচার ঠেকাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যুগান্তরকে বলেন, টাকা পাচার হচ্ছে বলেই সুইস ব্যাংকে জমা হচ্ছে। এর অন্য কোনো ব্যাখ্যা নেই।

তিনি বলেন, কোনো একটি হিসাবে দেখা গেছে, দেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩০ শতাংশই কালো টাকা। এই কালো টাকাই বিদেশে পাচার হয়।

তার মতে, পাচার রোধে সরকার কোনো শক্ত পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে এর সঙ্গে জড়িতরা উৎসাহিত হয়। তিনি আরও বলেন, টাকা পাচার নিয়ন্ত্রণ করতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি।

বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে কয়েকটি মাধ্যমে টাকা পাচার হয়। এর মধ্যে ঋণের টাকা সরাসরি ডলার নিয়ে যায় প্রভাবশালী মহল। এ ছাড়া আমদানির নামে এলসি খুলে বিল পরিশোধ করছে, কিন্তু কোনো পণ্যই দেশে আসছে না। এ ছাড়া রয়েছে আমদানিতে মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং), রফতানি মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং) ও হুন্ডি।

সম্প্রতি টাকা পাচারের আরও একটি বড় মাধ্যম হয়ে দেখা দিয়েছে রেমিটেন্স। একটি চক্র বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রবাসীদের রেমিটেন্স সংগ্রহ করে, তা বিদেশেই রেখে দেয়। আর এ দেশে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকায় এর দায় শোধ করা হয়।

একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ৪০ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে না। ওইগুলোও পাচার হয়ে বিদেশের কোনো ব্যাংকে রাখা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, দেশ-বিদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন বন্ধ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সহায়তায় তথ্যের আদান-প্রদান করতে ২০১৩ সালের জুলাইয়ে এগমন্ট গ্রুপের সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে ১৬৪টি দেশ ওই গ্রুপের সদস্য। বাংলাদেশ এই গ্রুপের সদস্য হওয়ায় এখন সব কটি দেশ থেকে মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন বা টাকা পাচার বিষয়ক যে কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই।

সূত্র বলছে, দুর্নীতি ও চোরাচালানের মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। ওইসব টাকায় দুর্নীতিবাজরা বিদেশে সম্পদ গড়ে তুলছেন, জমা রাখছেন বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে।

এর আগে মালয়েশিয়ার সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বিদেশির জন্য মালয়েশিয়ান সরকারের সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী। দেশ থেকে বিদেশে কোনো টাকা নিতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগে। কিন্তু এ পর্যন্ত কাউকে ব্যাংক থেকে এই ধরনের কোনো অনুমোদন দেয়া হয়নি।

কানাডায় রয়েছে বাংলাদেশি অধ্যুষিত অঞ্চল বেগম পাড়া। এছাড়া ব্রিটেন, হংকং, সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন ব্যাংকেও বাংলাদেশিদের টাকা রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/319983/