২৬ জুন ২০২০, শুক্রবার, ৩:৪৫

কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল

শ্বাসকষ্টের রোগীর মৃত্যু নিয়ে তুলকালাম

২৫০ শয্যার কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে অযত্ন-অবহেলায় অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। বুধবার সন্ধ্যায় হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনায় তার স্বজনরা ক্ষোভে ফেটে পড়লে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। হাসপাতালের যন্ত্রপাতিও তছনছ করা হয়। এ সময় মৃত ব্যক্তির স্বজনদের দুই ঘণ্টার বেশি হাসপাতালের ভেতরে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে এলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ সময় ডাক্তার ও কর্মচারীরা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। জেলা সিভিল সার্জন অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করেছে।

জানা যায়, হৃদরোগের সমস্যা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বুধবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে যান জেলার হোসেনপুর উপজেলার পুমদি ইউনিয়নের নান্দানিয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আবদুর রশিদ (৮০)। তার করোনা উপসর্গ থাকায় হাসপাতালে ভর্তি করতে রাজি হচ্ছিলেন না জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা। অনেক অনুরোধের পর শেষ পর্যন্ত ভর্তি করা হলেও তাকে অযত্ন-অবহেলায় বারান্দায় ফেলে রাখা হয়। কিছু সময় পর সেখানেই বিনা চিকিৎসায় মারা যান আবদুর রশিদ।

মৃত শিক্ষকের ছেলে আশুগঞ্জ বঙ্গবন্ধু কারিগরি কলেজের শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার বাবার করোনা নেগেটিভ। তিনি অনেক দিন ধরে হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছেন। হাসপাতালে আনার পর ডাক্তার বা নার্স তাকে ভর্তি করতেই রাজি হচ্ছিল না। অনেক অনুনয়-বিনয় করার পর তাকে ভর্তি করা হলেও চিকিৎসায় কারও কোনো রকম সাহায্য পাওয়া যায়নি। পরে বাইরে থেকে অক্সিজেন এনেও বাবাকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়, শেষ রক্ষা হল না। তিনি বলেন, ডাক্তার ও নার্সদের এমন নিষ্ঠুর আচরণ আমার বোনেরা মেনে নিতে না পেরে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এমন নিষ্ঠুর আচরণের প্রতিবাদ করেন। এ সময় উল্টো অভিযুক্তরা আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয় উঠেন। বাবার লাশসহ শোকাহত আমার মা, তিন বোন ও আমাকে হাসপাতালের ভেতরে আটকে রাখেন। প্রায় দুই ঘণ্টা পর আমরা ছাড়া পাই। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, মারা যাওয়া ব্যক্তির মেয়েরা ক্ষিপ্ত হয়ে ডাক্তারদের ওপর হামলা চালান। তাই তাদের আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে দুই ঘণ্টা পর তারা মুক্ত হন এবং জরুরি বিভাগের বারান্দা থেকে বের করা হয় মৃতদেহ।

জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক রাকিব আহমেদের দাবি, মারা যাওয়া ব্যক্তির তিন মেয়ে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলায় আমার পি?পিই পর্যন্ত ছিঁড়ে গেছে। এ কারণে তাদের আটক করে পুলিশে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে ছুটে যায় এবং ঘটনার কারণ জানতে তাদের বক্তব্য নিতে গেলে জরুরি বিভাগের এই চিকিৎসক তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সেখানে পৌঁছলে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে লাশ নিয়ে বাসায় ফিরেন স্বজনরা। কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান জানান, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সব অভিযোগ খতিয়ে দেখবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/319702/