২৬ জুন ২০২০, শুক্রবার, ৩:৪১

দেশে ২৮ হাজার শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা

ইউনিসেফের প্রতিবেদন

আগামী ছয় মাসে দেশে ২৮ হাজার শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। করোনা মহামারীতে ক্ষুধা, অপুষ্টি ও স্বাস্থ্যজনিত নানা সমস্যার কারণে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের এমন মৃত্যু হতে পারে। জন হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষণার বরাত দিয়ে ইউনিসেফ এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশের স্কুলগুলো আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়। লকডাউনের কারণে খাদ্যসঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে দরিদ্র পরিবারগুলোর পক্ষে তিনবেলা খাবার জোগাড় করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ফলে শিশুরা অপুষ্টির শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া বিরাজমান পরিস্থিতিতে সংক্রমণের ভয়ে শিশুদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও নেয়া হচ্ছে না। ফলে তারা জীবন রক্ষাকারী প্রয়োজনীয় টিকাও পাচ্ছে না। সব মিলিয়ে শিশুরা বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁঁকির মধ্যে রয়েছে। মহামারীর পরোক্ষ কারণে তাই আগামী ছয় মাসে বাংলাদেশে ২৮ হাজার শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ইউনিসেফের এমন আশঙ্কার বিষয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা: তাহমিনা বলেছেন, এমন ঝুঁকির নানান কারণ রয়েছে। যেমন কোনো কোনো টিকা দিলে জ্বর আসে, এমন বিবেচনায় চিকিৎসকদের কেউ কেউ করোনার শুরুতে টিকাদানকে নিরুৎসাহিত করেছেন। এরই মধ্যে তিন মাসেরও বেশি সময় চলে গেছে। বলতে গেলে এত দিন শিশুদের ১০টি রোগের ছয়টি জীবন রক্ষাকারী টিকা দেয়া বন্ধ ছিল। ফলে এখন শিশুরা অন্য রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এর মধ্যে নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুরা রয়েছে সবচেয়ে বেশি। কারণ তারা সবচেয়ে বেশি অপুষ্টির শিকার হওয়ায় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হারিয়েছে, যা ধীরে ধীরে তাদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

এমন অবস্থায় শিশুদের প্রাণ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে আরেক বিশেষজ্ঞ ডা: মাসুম বলেন, যক্ষ্মা, ডিফথেরিয়া, হুপিং কাশি, মা ও নবজাতকের ধনুষ্টঙ্কার, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি, নিউমোকক্কাল নিউমোনিয়া, পোলিও মাইলাইটিস, হামসহ শিশুদের রক্ষায় যে টিকাগুলো দেয়া হয়, এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেকোনো উপায়ে সেই টিকাদান চালিয়ে যেতে হবে। নয়তো তাদের রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে।

আইইডিসিআরের তথ্য মতে, বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে শিশু শতকরা তিন ভাগ, যাদের বয়স এক থেকে ১০ বছরের মধ্যে। আর ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে শতকরা সাত ভাগ। যারা মারা গেছে তাদের মধ্যে এক থেকে ১০ বছর বয়সের শূন্য দশমিক ৮২ ভাগ। ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১.৪৯ ভাগ।

তথ্যানুযায়ী, শিশুদের করোনা চিকিৎসার জন্য একমাত্র ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আলাদা ইউনিট করা হয়েছে। দেশের শিশু হাসপাতালসহ আর কোথাও শিশুদের জন্য আলাদা করোনা ইউনিট নেই। ঢাকা মেডিক্যালের শিশু করোনা ইউনিটে এখন ৩২টি বেড আছে। এর মধ্যে ২৪টি করোনা পজিটিভ শিশুর জন্য আর আটটি আইসোলেশনের জন্য। এখন সেখানে ২৮টি শিশু ভর্তি আছে করোনা পজিটিভ নিয়ে। এ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ১০৮টি শিশু। মারা গেছে পাঁচজন। বাকিরা সুস্থ হয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, এসবের বাইরে অন্যান্য হাসপাতালে বয়স্ক রোগীদের সাথেই করোনা পজিটিভ শিশুদের চিকিৎসা দেয়া হয়। এতে করে শিশুদের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/511053/