স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ
২৪ জুন ২০২০, বুধবার, ১:৪৭

কিট স্বল্পতায় পরীক্ষা বন্ধ দুই ল্যাবরেটরির

এ মুহূর্তে এক লাখ কিট হাতে আছে -মহাপরিচালক

হঠাৎই দেশে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার কিটের সংকট দেখা দিয়েছে। গত ২ দিনে কিটের অভাবে দুটি ল্যাবে কাজ বন্ধ রাখা হয়। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, গত দু’দিন কিটের স্বল্পতা থাকলেও এখন তা নেই। ইতোমধ্যে সরকারের হাতে এক লাখের বেশি কিট পৌঁছেছে। এখন থেকে সরবরাহে কোনো ঘটতি হবে না।
তারা বলেন, পিসিআর কিটের সহজলভ্যতা ও দামের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

একটি পিসিআর কিটের সব ধরনের রিএজেন্টসহ আমদানি মূল্য প্রায় ২৮ থেকে ৩০ ডলার। অর্থাৎ পর্যাপ্ত কিট আমদানি করতে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। অর্থবছরের শেষ হওয়ায় এ খাতে যথেষ্ট পরিমাণ বরাদ্দ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া সরবরাহকারী দেশগুলোতে সারা বিশ্বের চাহিদা থাকায় সেখানে জটিলতা সৃষ্টি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে আমাদের কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনার দুর্বলতা।

তাদের মতে, দেশে কোভিড সংক্রমণ দেরিতে শুরু হয়েছে। তাছাড়া খুব কম সংখ্যক ল্যাবে পিসিআর মেশিনে নিয়মিত কাজ হতো। ফলে অনেকেরই এ ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা ছিল না। আবার শুরুর দিকে রোগী অনেক কম থাকলেও হঠাৎ করেই রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। এতে সব ধরনের প্রস্তুতিতেই ঘাটতি দেখা দেয়। যার প্রভাব পড়ে নমুনা পরীক্ষা কিটে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি দেখা দিলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কিট দিয়ে দেশে শুরু হয় করোনা পরীক্ষা। সংস্থাটি বিভিন্ন সময় বেশকিছু কিট উপহার দিয়েছে বাংলাদেশকে।

কিট উপহার পাওয়া গেছে চীনসহ বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থা থেকেও। এর বাইরে একটি প্রতিষ্ঠান অধিদফতরকে কিট সরবরাহ করে আসছিল। এর মধ্যে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় অধিদফতর। নতুন কিছু প্রতিষ্ঠানকে কিট আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু সময়মতো কিট আনতে না পারায় অনেকের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। আবার অনেকের কিট এলেও যথাসময়ে খালাস করতে না পারায় সংকট ঘনীভূত হয়।


জানা গেছে, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান যে কিট এনেছে, সেগুলো এতদিন ধরে দেশে ব্যবহৃত কিটের চেয়ে কিছুটা আলাদা। সেগুলোতে এক্সট্রাকশনের সময় লাগে আগের কিটের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের কিট দিয়ে আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি ও শিশু হাসপাতালসহ কিছু প্রতিষ্ঠানে নমুনা পরীক্ষা সম্ভব হলেও অধিকাংশ ল্যাব এ কিটে নমুনা পরীক্ষায় অনীহা প্রকাশ করেছে।

জানা গেছে, যেসব ল্যাবে কিট একটু বেশি আছে, তাদের কাছ থেকে নিয়ে দেয়া হচ্ছে কিট শূন্য হয়ে পড়া ল্যাবগুলোতে! এর মধ্যে নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের ল্যাবেও বৃহস্পতিবারের (১৮ জুন) পর থেকে কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি। কয়েক দিন ধরে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ বেড হাসপাতালের ল্যাবেও করোনা পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে কিট জটিলতায়।

অধিদফতর সূত্র বলছে, জুনের শুরুতে কিট সংকট চরমে ওঠে। শুরু থেকে কিট সরবরাহ করে আসা প্রতিষ্ঠানটি ৬ জুন কিছু কিট সরবরাহ করে। পরে দুই কিস্তিতে আরও ৭০ হাজার কিট সরবরাহ করে। তবে রফতানিকারক দেশগুলো থেকেও সরবরাহে জটিলতা দেখা দেয়। সারা বিশ্বেই কিটের চাহিদা বাড়ায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠনগুলো চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।

এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, আমাদের কাছে এ মুহূর্তে এক লাখ দুই হাজার কিট রয়েছে। ইতোমধ্যে ৫০ হাজার কিট আইইডিসিআরের মাধ্যমে বিভিন্ন ল্যাবে বিতরণ করা হচ্ছে। একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে ৪২ হাজার কিট প্রদান করেছে। আরেকটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আমদানিকৃত প্রায় অর্ধলক্ষ কিটের ১০ হাজার ইতোমধ্যে বিমানবন্দর থেকে খালাস হয়েছে। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, দু-এক দিনের মধ্যে ৬৮ হাজার কিট দেবে। সেটি দু-এক দিনে এসে পৌঁছাবে।

এত দিন যারা কিট সরবরাহ করছিল, তারাও সরবরাহ করবে। ফ্লাইট নিয়ে তাদের কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে তাদের কিটও চলে আসবে। এর সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কিট চলে এলে সমস্যা হবে না আশা করি। তিনি বলেন, আরও এক ধরনের কিট এসেছে বিমানবন্দরে। এ কিট আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি, শিশু হাসপাতাল ও আই দেশি ব্যবহার করতে পারবে। কাজেই আশা করছি কোনো অসুবিধা হবে না। আমরা এ সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।

অধ্যাপক আজাদ বলেন, ৩০ জুন পর্যন্ত আমরা এভাবেই চালাব। এরপরে লম্বা সময়ের জন্য প্রকিউরমেন্ট করা হবে সরকারের পদ্ধতি অনুযায়ী। এ ক্ষেত্রে কিট সরবরাহের জন্য আরও একাধিক কোম্পানি আসবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/318977/