করোনাভাইরাসের অতি সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ‘রেড জোন’ ঘোষিত দেশের ১০ জেলার ২৭ এলাকায় বিভিন্ন মেয়াদে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকায় ২১ জুন থেকে সাধারণ ছুটি দেয়া হয়েছে। রোববার মধ্যরাতে এসব এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাস আক্রান্ত এলাকায় পর্যায়ক্রমে ‘রেড জোন’ হিসেবে স্থানীয়ভাবে লকডাউন ঘোষণা করার পর ওই সব এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে ১০ জেলার ২৭ এলাকার কোনটিতে কখন থেকে ‘রেড জোন’ হিসেবে ২১ দিন সাধারণ ছুটি থাকবে তাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে ছুটি চলাকালে এসব এলাকার লোকজনের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। জরুরি পরিষেবা সাধারণ ছুটির বাইরে থাকবে।
করোনা সংক্রমণের হার বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিনÑ এই তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ‘রেড জোনে’ সাধারণ ছুটি দেয়া হবে বলে আগেই জানানো হয়েছিল। প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, লাল অঞ্চল ঘোষিত এলাকায় বসবাসরত সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ ও বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে এ ছুটি প্রযোজ্য হবে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকায় থাকা সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ ও বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় কর্মরত ও অন্য এলাকায় বসবাসরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও এ ছুটি প্রযোজ্য হবে।
সাধারণ ছুটি ঘোষিত ২৭ এলাকা : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড নম্বর-১০ উত্তর কাট্টলি (বিসিক শিল্পনগরী ছাড়া) ২১ জুন থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত ছুটি থাকবে। বগুড়া পৌরসভার চেলোপাড়া, নাটাইপাড়া, নারুলী, জলেশ্বরীতলা, সূত্রাপুর, মালতীনগর, ঠনঠনিয়া, হাড়িপাড়া ও কলোনি ২১ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত ছুটি থাকবে। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পরানপুর গ্রামের রিফিউজি কলোনি ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের থানা পাড়া ২১ জুন থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত ছুটি থাকবে। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলাধীন শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের ক্রাথলিক মিশন রোড, রূপশপুর, সবুজবাগ, মসলিমবাগ, লালবাগ, বিরাইমপুর এবং শ্রীমঙ্গল পৌরসভার কালীঘাট রোড ও শ্যামলী, কুলাউড়া উপজেলাধীন বরমচাল ইউনিয়নের নন্দনগর, কাদিপুর ইউনিয়নের মনসুর এবং কুলাউড়া পৌরসভার মাগুর ও মনসুর এলাকা ২১ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত ছুটি থাকবে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়ন (উত্তরে বালু ব্রিজ, দক্ষিণে কায়েতপাড়া, পূর্বে কায়েতপাড়া এবং পশ্চিমে কাঞ্চন পৌরসভা) ২১ জুন থেকে ২ জুলাই ছুটি থাকবে। হবিগঞ্জ পৌরসভার ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড, চুনারুঘাট উপজেলার ৩ নম্বর দেওরগাছ ইউনিয়ন, ৭ নম্বর উবাহাটা ইউনিয়ন ও ৯ নম্বর রানীগাঁও ইউনিয়ন এবং চুনারুঘাট পৌরসভা, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর আজমিরীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন; মাধবপুর পৌরসভায় ২১ জুন থেকে ৯ জুলাই ছুটি থাকবে। মুন্সীগঞ্জের পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মাঠপাড়া ২১ জুন থেকে ৯ জুলাই ছুটি থাকবে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কালিয়াজুরি, রেসকোর্স, শাসনগাছা; ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ঝান্ডা, কান্দিরপাড়, পুলিশ লাইন, বাদুরতলা; ১২ নম্বর ওয়ার্ডের নানুয়ার দিঘীরপাড়, নবাববাড়ী চৌমুহনী, দিগাম্বরীতলা এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের টমছম ব্রিজ, থিরাপুকুরপাড় ও দক্ষিণ চর্থা এলাকা ২১ জুন থেকে ৩ জুলাই ছুটি থাকবে। যশোরের অভয়নগর উপজেলাধীন চলিশিয়া, পিযারা ও বাঘুটিয়া ইউনিয়ন এবং অভয়নগর পৌরসভার ২, ৪, ৫, ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা; চৌগাছা উপজেলাধীন চৌগাছা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা; ঝিকরগাছা উপজেলাধীন ঝিকরগাছা পৌরসভার ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা; কেশবপুর উপজেলাধীন কেশবপুর পৌরসভার ১ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা; যশোর পৌরসভার ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড এবং আরবপুর ও উপশহর ইউনিয়ন; শার্শা উপজেলাধীন বেনাপোল পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড এবং শার্শা ইউনিয়ন ২১ জুন থেকে ৬ জুলাই ছুটি থাকবে। ঝিকরগাছা উপজেলাধীন বাঁকড়া ইউনিয়ন; যশোর সদর উপজেলাধীন যশোর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ২১ জুন থেকে ৭ জুলাই ছুটি থাকবে। অভয়নগর উপজেলাধীন শ্রীধরপর ইউনিয়ন; যশোর সদর উপজেলাধীন যশোর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা; ২১ জুন থেকে ৮ জুলাই ছুটি থাকবে। শার্শা উপজেলাধীন বেনাপোল পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা ২১ জুন থেকে ৯ জুলাই ছুটির আওতায় থাকবে।
মাদারীপুরের সদর উপজেলাধীন মাদারীপুর পৌরসভার ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা এবং বাহাদুরপুর, দুধখালী, ঝাউদি, মস্তফাপুর, রাস্তি ও কেন্দুয়া ইউনিয়ন; শিবচর উপজেলাধীন শিবচর পৌরসভার ১, ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা এবং শিবচর, দ্বিতীয় খণ্ড, বহেরাতলা দক্ষিণ, বাঁশকান্দি, ভদ্রাসন, কাদিরপুর, মাদবরেরচর ও পাঁচ্চর ইউনিয়ন; কালকিনি উপজেলাধীন কালকিনি পৌরসভার ১, ৪, ৫, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা এবং ডাসার, গোপালপুর, আলীনগর ও শিকারমঙ্গল ইউনিয়ন; রাজৈর উপজেলাধীন রাজৈর পৌরসভার ১, ২, ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড এবং বদরপাশা, আমগ্রাম, কবিরাজপুর ও হোসেনপুর ইউনিয়নে ২১ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সাধারণ ছুটি থাকবে।
বিধিনিষেধ যেভাবে বাস্তবায়ন হবে : বিভিন্ন অঞ্চলকে লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের ‘জোনে’ ভাগ করার পর কিভাবে বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করা হবে সে বিষয়ে একটি রূপরেখা দিয়েছে সরকার। লাল অঞ্চলে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ১৬ জুন যে আদেশ জারি করেছে সেখানে ‘জোনিং’ কার্যকরের বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৈরি করা গাইডলাইনে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। লাল অঞ্চলে জীবনযাত্রা ‘কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ’ করা হবে। অফিস-কারখানা সব থাকবে বন্ধ। যানবাহন ও সাধারণের চলাচলে থাকবে কড়াকড়ি। বাজার বা মার্কেটও থাকবে বন্ধ। এসব বিধিনিষেধ চলবে অন্তত তিন সপ্তাহ।
