২১ জুন ২০২০, রবিবার, ৪:২৪

পৌনে ২ কোটি স্কুলশিক্ষার্থী টিভি অনলাইনে ক্লাসের সুবিধা পাচ্ছে না

ব্র্যাক পরিচালিত জরিপের ফল

করোনাকালে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলপর্যায়ের প্রায় পৌনে দুই কোটি শিক্ষার্থী টিভি এবং অনলাইনে ক্লাসের সুবিধা পাচ্ছে না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের এডুকেশন প্রোগ্রাম পরিচালিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এসব তথ্য। গতকাল শনিবার বিকেলে ব্র্র্যাক এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ শিক্ষাব্যবস্থায় এর প্রভাব’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সভায় এই তথ্য জানানো হয়। সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী জাকির হোসেনও অংশ নেন। জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন ব্র্যাকের এডুকেশন প্রোগ্রামের প্রধান প্রফুল্ল চন্দ্র বর্মণ। জরিপে দেখানো হয় দেশে প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় তিন কোটি ১০ লাখ। এর মধ্যে ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী অর্থাৎ এক কোটি ৭৩ লাখ ৬০ হাজার শিক্ষার্থী এখনো টিভিতে কিংবা অনলাইনে ক্লাসের সুবিধার বাইরে রয়ে গেছে।

সভায় তথ্য-উপাত্ত তুলে জানানো হয়, ১৬ জেলার বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে এই জরিপ চালানো হয়েছে। জরিপে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের বাছাইয়ে সবগুলো শর্ত পূরণ করা হয়েছে। জরিপে এক হাজার ৯৩৮ জনের মতামত গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ৫১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী এবং ৪৯ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী। যেহেতু প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা একেবারেই শিশু তাই এ ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সাথে কথা বলে তাদের মতামত নেয়া হয়েছে। বাকি ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর সাথে সরাসরি কথা বলেই মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। অন্য দিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে ৪ শতাংশ প্রতিবন্ধী, ৮ শতাংশ আদিবাসী, ৮৭ শতাংশ স্কুলপর্যায়ের শিক্ষার্থী এবং ১৩ শতাংশ মাদরাসার শিক্ষার্থীকে।

স্কুলপর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনার বিষয়ে কতটুকু সচেতনতা তৈরি হয়েছে সেই বিষয়েও একটি পরিষ্কার ধারণা জরিপে উঠে এসেছে। জরিপে দেখা গেছে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে স্কুল ছুটি ঘোষণা হওয়ার পর ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী ঘরের বাইরেই যাচ্ছে না। আর যারা বাইরে যাচ্ছে তাদের মধ্যে বাসায় ফিরে সাথে সাথেই ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিচ্ছে। বাইরে গেলেও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ৪১ শতাংশ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধান মেনেই চলাফেরা করেছেন।

সভায় অংশ নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক প্রফেসর গোলাম ফারুক বলেন, চর এবং গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থী ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীই টিভিতে এবং অনলাইনে ক্লাস করতে পারছে। তবে তিনি উল্লেখ করেন মাধ্যমিক পর্যায়ের দেড় কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে মাউশি নিজস্বভাবে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ শিক্ষার্থী নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। সেখানে দেখা গেছে মাত্র ৩৭ শতাংশ শিক্ষার্থী টিভিতে বা অনলাইনে ক্লাস করতে পারছে না। তিনি আরো উল্লেখ করেন স্বাভাবিক অবস্থাতেও গড়ে ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) মহাপরিচালক মো: ফসিউল্লাহ বলেন, করোনার তীব্রতা যে সময়ে আমাদের দেশে শুরু হয় তার পরের সময়টা এমনিতেই স্কুল বন্ধ থাকত। রোজা এবং অন্যান্য ছুটির সময়ে প্রাথমিক স্কুলে এমনিতেই ক্লাস হয় না। এর পরেও আমরা বিকল্পভাবে সংসদ টিভিতে ক্লাস চালু করেছি। অচিরেই রেডিওতে ক্লাস শুরু হবে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষা পঞ্জিকা অনুযায়ী করোনার কারণে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা ঈদের আগে ১৭ দিন এবং ঈদের পরে ১০ দিন স্কুলে গিয়ে ক্লাস করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার শিক্ষাকেই অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়কেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। স্কুল বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় যাতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সেই জন্য বিকল্প পন্থায় ক্লাস চালু রাখা হয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/509907