১৪ জুন ২০২০, রবিবার, ৪:০৯

ক্রান্তিকালেও পরিবহন চাঁদাবাজি!

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সবকিছুই অনেকটা থমকে আছে। অর্থনীতির স্বার্থে সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু খুলে দিলেও এখনও মানুষের চলাচল অনেক কম। সচেতনতা ও পরিস্থিতির দাবিও তাই। কিন্তু এ অবস্থাতেও থেমে নেই পরিবহন চাঁদাবাজি। শুধু তাই নয়, করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতির সুবাদে চাঁদার হার বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি করার ক্ষেত্রে সাধারণ চাঁদাবাজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে হাইওয়ে পুলিশ। এখন তারা আগের চেয়ে দ্বিগুণ হারে চাঁদাবাজি করছে। ময়মনসিংহ থেকে সিলেটে একটি ট্রাক নিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন স্থানে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ করছেন চালকরা। ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রুটে ট্রাক নিয়ে বের হলেই চাঁদা দিতে হয় ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা। একই পরিস্থিতি বাসের বেলায়ও। প্রতিটি বাস থেকে হাইওয়ে পুলিশ ২০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। হাইওয়ের টং দোকানগুলো থেকেও নেয়া হচ্ছে চাঁদা। এর বাইরে রাজনৈতিক নেতাদের চাঁদা, পৌর উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়নের নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ওপেন সিক্রেট হলেও বর্তমান সময়ে চাঁদার হার বাড়িয়ে দেয়া পরিবহন শ্রমিকদের জন্য যে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

দুর্ভাগ্যের বিষয়, পুলিশের চাঁদাবাজির বাইরে বিভিন্ন সমিতির নামে পরিবহন শ্রমিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করা হলেও লকডাউনে গাড়ি চলাচল বন্ধের সময় অর্থকষ্টের শিকার পরিবহন শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কেউই এগিয়ে আসেনি। কিন্তু গাড়ি চলা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আগের চেয়ে আরও নিষ্ঠুর রূপ নিয়ে হাজির হয়েছে সব ধরনের চাঁদাবাজরা। সরকারের উচিত যে কোনো ধরনের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া এবং চিহ্নিত চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় আনা। চাঁদাবাজির কারণে যেমন সংকটের সময়েও পরিবহন ভাড়া বাড়াতে হয়, তেমনি হাড়ভাঙা খাটুনির পরও শ্রমিকরা কাঙ্ক্ষিত আয় করতে পারেন না। পরিবহন খাতে বিনিয়োগকারীদেরও ভুগতে হয় বহুমুখী চাঁদাবাজদের কারণে। এ অবস্থায় চাঁদাবাজি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই। আশার কথা, পুলিশ সদর দফতরসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এরই মধ্যে ২ থেকে ৯ জুন ঢাকা মহানগরীর বাইরে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এতে ৩৩টি মামলা ও ৬৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি গ্রেফতারকৃতদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আমরা আশাবাদী।

https://www.jugantor.com/todays-paper/editorial/315582/