১৪ জুন ২০২০, রবিবার, ৪:০৪

সরকারের ব্যাংক গ্যারান্টি বেড়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা

সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ খাতে ৩৩,৭৪২ কোটি টাকা; এক বছরে বেড়েছে ২,৮২৭.৫৬ কোটি টাকা

চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) বিভিন্ন দেশী-বিদেশী ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির কাছে সরকারের পুঞ্জীভূত ব্যাংক গ্যারান্টির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে এর পরিমাণ ছিল ৫৭ হাজার ৮২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এ পুঞ্জীভূত ব্যাংক গ্যারান্টির পরিমাণ দুই হাজার ৮২৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বেড়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে সরকারের নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের স্বার্থে সরকারি মালিকানাধীন আর্থিক ও অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত ঋণের জন্য গ্যারান্টি ও কাউন্টার গ্যারান্টি প্রদান করে থাকে সরকার। কোনো কারণে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ঋণ যথাসময়ে পরিশোধে ব্যর্থ হলে এগুলো পরিশোধের দায়-দায়িত্ব তখন সরকারের ওপর বর্তায়। কাজেই, সরকারের ভবিষ্যৎ আর্থিক অবস্থার ওপর এর প্রভাব রয়েছে

চলতি অর্থবছর শেষে সবচেয়ে বেশি ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদান করা হয়েছে বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ও বিদ্যুতের বিভিন্ন প্রকল্পে। এ গ্যারান্টির পুঞ্জীভূত পরিমাণ ৩৩ হাজার ৭৪১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ বিমানের ক্ষেত্রে। বিমানের বিভিন্ন উড়োজাহাজ ক্রয় ও ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে এ পর্যন্ত ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে ১০ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা।

জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও বিদ্যুৎ খাতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, জ্বালানি তেল আমদানি, কৃষিঋণ বিতরণ, সার- কারখানা প্রকল্প ও সার আমদানি, বাংলাদেশ বিমানের জন্য বোয়িং ক্রয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পসহ বিবিধ খাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থা দেশী-বিদেশী ব্যাংক থেকে এসব ঋণ নিয়েছে।

বাজেট উপাত্ত অনুযায়ী, নতুন গ্যারান্টি যুক্ত হওয়ায় বিদায়ী অর্থবছরে সার আমদানি, বোয়িং ক্রয়, কৃষিঋণ বিতরণ ইত্যাদি খাতে পুঞ্জীভূত ব্যাংক গ্যারান্টির পরিমাণ বেড়েছে। অন্য দিকে ঋণ পরিশোধের কারণে পুঞ্জীভূত গ্যারান্টি কমেছে জ্বালানি, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ ও বিবিধ খাতে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা প্রকল্প ও সার আমদানিতে ‘বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর (বিসিআইসি) অনুকূলে ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে ৫ হাজার ৪৪৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। নতুন বোয়িং কেনার জন্য বাংলাদেশ বিমান-এর অনুকূলে গ্যারান্টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা (গত অর্থবছরে ছিল ৪ হাজার ৯৩৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা)। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বিমানকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে সোনালী ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণের বিপরীতে গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা।

কৃষিঋণ বিতরণে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে প্রদত্ত গ্যারান্টির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৮০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে ছিল ৩ হাজার ১৪৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা)। অন্য দিকে জ্বালানি তেল আমদানি খাতে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন’-এর (বিপিসি) অনুকূলে গ্যারান্টির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৯৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে ছিল ৩ হাজার ৩৮১ কোটি ৭ লাখ টাকা)। বিদ্যুৎ খাতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশী ব্যাংক ও কোম্পানির অনুকূলে গ্যারান্টির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৭৪১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে ছিল ৩৩ হাজার ৭৭৭ কোটি ২১ লাখ টাকা)। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প খাতে গ্যারান্টির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৬৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে ছিল ১ হাজার ৩১৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা)। এ ছাড়া বিবিধ খাতে গ্যারান্টির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৪০ কোটি ১৪ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে ছিল ১১ হাজার ২৭১ কোটি ৬২ লাখ টাকা)।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/508245/