১৩ জুন ২০২০, শনিবার, ১০:১১

মহাসড়কে ঝূঁকিপূর্ণ

বাঁকে থাকবে না দৃষ্টিপ্রতিবন্ধক

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার ভেল্লাপাড়া থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ৪৯টি বাঁক রয়েছে। এর অংশগুলো অত্যন্ত সরু। প্রতিটি বাঁকই ঝুঁঁকিপূর্ণ। আর এসব বাঁকেই ঘটে দুর্ঘটনা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিপরীতমুখী যানগুলো বাঁকের মুখে আসার পর একে অপরকে দেখতে পায় না। এতে প্রতিদিনই এ সড়কে বাড়ছে প্রাণহানী। এর আগে সড়ক বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সোজা করার প্রকল্প হাতে নেয়। কিন্তু ঠিকাদারদের অবহেলায় প্রকল্পটি ২০০৮ সালে ভেস্তে যায়। এতে ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পটিয়া বাইপাস সড়ক প্রকল্প নির্মাণকাজ প্রায় সমাপ্তির পথে থাকলেও বাঁক সোজাকরণ প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।

শুধু চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক নয়, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-টাঙ্গাইল, মাওয়া-খুলনা, খুলনা-যশোর, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কসহ সারাদেশের মহাসড়কেই রয়েছে কমবেশি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। কোনো কোনো বাঁক এতোটাই বাঁকা যে সামনের কিছুই দেখা যায় না। মহাসড়কের বাঁকে বাঁকে রয়েছে গাছপালা ঝোপঝাঁড়সহ নানা প্রতিবন্ধকতা। চালকেরা এসব প্রতিবন্ধকতার কারণে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে আন্দাজের উপর গাড়ি চালায়। এ কারণে একটু এদিক-ওদিক হলেই ঘটে দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনা কমাতে মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য এর আগে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সে সব উদ্যোগ কার্যকর করা যায়নি প্রয়োজনীয় টাকার অভাবে। এবারের বাজেটে মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সোজাকরণসহ প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সারাদেশে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই হাজার ৫৫০ কিলোমিটার মহাসড়ক মার্কিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এক হাজার ৯৫০ কিলোমিটার মহাসড়কের আন্তবাঁকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধক স্থাপনা বা গাছ অপসারণ পরিকল্পনাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত (২০২০-২১) অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনকালে তিনি একথা বলেন। এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় উন্নীত করার জন্য আধুনিক, নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামো নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই লক্ষ্যে সরকার দেশের সড়কপথ, সেতু, রেলপথ, নৌ-পথ এবং আকাশপথের সমন্বয়ে সামগ্রিক যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি সমন্বিত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরিতে গুরুত্ব দিয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও মানসম্মত সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ১ হাজার ১৪০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ এবং জেলা মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীত করতে গুচ্ছ-প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। এছাড়া, দেশব্যাপী জাতীয় মহাসড়ক চার বা তার বেশি লেনে উন্নীতকরণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিবহন নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে গৃহীত সাসেক রোড কানেক্টিভিটি প্রজেক্টের বাস্তব অগ্রগতি ৭৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঢাকার যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা অংশ ধীরগতির যানবাহনের জন্য উভয় পাশে পৃথক লেনসহ চার লেনে উন্নীত করে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। যা বাংলাদেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে।

মুস্তফা কামাল বলেন, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণ, রংপুর-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, মংলা চ্যানেলের ওপর সেতু নির্মাণ, ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর কেওয়াটখালী সেতু নির্মাণ এবং সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কার্যক্রম শুরু করা হবে। মন্ত্রী সংসদকে জানান, ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে বলে আশা করা যায়। গাইবান্ধা ও জামালপুর জেলার সংযোগকারী যমুনা নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সমীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পটুয়াখালী-আমতলী-বরগুনা সড়কে পায়রা নদীর ওপর, ভুলতা-আড়াইহাজার-নবীনগর সড়কে মেঘনা নদীর ওপর, বরিশাল ভোলার সংযোগ স্থাপনে তেঁতুলিয়া ও কালাবদর নদীর ওপর এবং বরগুনা পাথরঘাটা সড়কে বিশখালী নদীর ওপর পাঁচটি বৃহৎ সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এগুলোর নির্মাণকাজ বাস্তবায়নে অর্থায়ন প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, আগামী অর্থবছরের বাজেটে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য ২৯ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ করোনা মহামারির মধ্যেও সড়ক খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ১৬৮ কোটি টাকা।

https://www.dailyinqilab.com/article/298972/