১৩ জুন ২০২০, শনিবার, ১০:০২

করোনায় বিপর্যস্ত সিলেট

বিলম্বিত রিপোর্টে বাড়ছে সংক্রমণ

দুই হাজার ছাড়াল আক্রান্তের সংখ্যা * মারা গেছেন ৪৪ জন * প্রস্তুত করা হচ্ছে আরও দুই হাসপাতাল

সিলেট বিভাগজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। শেষ ১০ দিনেই দ্বিগুণ হয়েছে তা। শুক্রবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনা শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ৬১ জনের। আর মারা গেছেন ৪৪ জন।

মে মাসে সিলেট বিভাগে ৯৩১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। চলতি মাসের প্রথম ১১ দিনেই এ সংখ্যা এক হাজার ১৩০। প্রতিদিন গড়ে একশ’র বেশি ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। একইভাবে মে পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়। চলতি মাসের ১১ দিনেই মারা গেছেন ২৫ জন।

শুক্রবার পর্যন্ত মৃত্যুর হার সারা দেশে ১ দশমিক ৩৪ হলেও সিলেট বিভাগে এ হার ২ দশমিক ১৩ শতাংশ। সিলেটে করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যু ঘটে ১৫ এপ্রিল। আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়ালেও এটি প্রকৃত চিত্র নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ নমুনা জমা দেয়ার অনেক পরে মিলছে রিপোর্ট। আর এ দেরির কারণে সিলেটে সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে বলে মনে করছেন তারা।

তারা বলছেন, নমুনা দেয়ার পরও আক্রান্ত ব্যক্তি চলাফেরা করছেন, যাচ্ছেন অন্যদের সংস্পর্শে। এ কারণে সিলেটে সামনের দিনগুলোতে করোনা সংক্রমণ আরও ব্যাপক হতে পারে।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ৫ হাজার ৯৬২টি নমুনার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। ওসমানী হাসপাতালে নমুনা জমে গেলে এগুলো পাঠানো হচ্ছে ঢাকায়। এতে রিপোর্ট আসতে দীর্ঘ সময় লাগছে।

চার জেলার সিভিল সার্জন অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, বুধবার পর্যন্ত সিলেট জেলায় নমুনা জমা পড়েছে ৮ হাজার ৩০০টি। এর মধ্যে পরীক্ষা হয়েছে ৪ হাজার ৪৭৫টি। সিলেট জেলায় ৩ হাজার ৮২৫টি নমুনার রিপোর্ট আসেনি।

এছাড়া সুনামগঞ্জে নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ৫ হাজার ১৮৬টি। আর পরীক্ষা হয়েছে ৪ হাজার ৪৭৪টি। এখনও রিপোর্ট পাওয়া যায়নি ৭১২টি নমুনার। হবিগঞ্জে নমুনা জমা হয়েছে ৫ হাজার ১৭৫টি। পরীক্ষা হয়েছে ৪ হাজার ৩৫০টি। রিপোর্ট আসেনি ৮২৫টি নমুনার। মৌলভীবাজারে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। এখনও রিপোর্ট আসেনি প্রায় ৬০০টির।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান জানান, সিলেটে নমুনা জট তৈরি হওয়ায় কিছু নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সিলেটে আরও কিছু পিসিআর মেশিন এলে এমন জট থাকবে না।

তিনি জানান, হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের জন্য একটি ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পিসিআর মেশিন স্থাপনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এছাড়া জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মাধ্যমে সিলেট বক্ষব্যাধি হাসপাতালে একটি এবং সুনামগঞ্জে একটি পিসিআর মেশিন স্থাপন করা হবে।

সংক্রমণ ও মৃত্যুর চিত্র : বিভাগের চার জেলার মধ্যে সিলেট জেলায় সংক্রমণ সবচেয়ে ভয়াবহ। জেলায় মে পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত ছিল ৫৫৫ জন। কিন্তু এ মাসের ১১ দিনেই আক্রান্ত হয়েছের ৬৮২ জন। এর মধ্যে মঙ্গলবার ওসমানী মেডিকেল কলেজ ল্যাবে মাত্র ৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি দু’জনের একজন করোনা আক্রান্ত।

সিলেট বিভাগে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ৫ এপ্রিল। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের একজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হন। ১৫ এপ্রিল তিনি মারা যান। প্রথমে শনাক্তের হারে ধীরগতি থাকলেও মে মাসের শুরু থেকে এ সংখ্যা বাড়তে থাকে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্যমতে, সিলেট বিভাগে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২ হাজার ৬১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৩৭ জন, সুনামগঞ্জে ৪১৯ জন, হবিগঞ্জে ২২৭ জন ও মৌলভীবাজার জেলায় ১৭৮ জন।

প্রস্তুত হচ্ছে দুই হাসপাতাল : বিভাগে করোনা শনাক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেটে আরও দুটি সরকারি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। খাদিমনগরের সিলেট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে করোনা আইসোলেশন হাসপাতাল করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও কিডনি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রবাসীদের সহযোগিতায় এখানে করোনা রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট কিডনি ফাউন্ডেশনের কোষাধ্যক্ষ জুবায়ের আহমদ চৌধুরী।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/315271/