৭ জুন ২০২০, রবিবার, ১:০৫

নিউ ইয়র্কগামী ফ্লাইটও বোঝাই

করোনাকালে ঢাকা ছেড়েছেন ২০২০ মার্কিন নাগরিক

দীর্ঘ বিরতি এবং করোনার গতি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ শেষে দ্বিতীয় দফায় দু’টি উড়োজাহাজ বোঝাই করে ৮০০ নাগরিককে ঢাকা থেকে সরিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধ ও শুক্রবার কাতার এয়ারের স্পেশাল দুই ফ্লাইটে তাদের ফিরিয়ে নেয়া হয়। সিভিল এভিয়েশনের মুখপাত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভাড়া করা কাতার এয়ারওয়েজের নিউ ইয়র্কগামী শেষ ফ্লাইটটি শুক্রবার সন্ধ্যায় ৩৯৪ যাত্রী নিয়ে গেছে। একই গন্তব্যের দু্থদিন আগে (বুধবারের ফ্লাইটে) ফিরেছেন ৩৯০ জন প্রাপ্ত বয়স্ক এবং ১৬টি শিশু। দুধের শিশুরা মায়ের কোলে চড়ে ঢাকা ছেড়েছে।

সিভিল এভিয়েশনের রেকর্ড এবং মার্কিন দূতাবাসের সরবরাহ করা তথ্য মতে, ৩০ শে মার্চ থেকে শুরু করা প্রথম ধাপের চার ফ্লাইটে ১২২০ আর দ্বিতীয় ধাপের দুই ফ্লাইটে বরাবর ৮০০, সব মিলে এ পর্যন্ত মোট ২০২০ আমেরিকান ঢাকা ছেড়ে গেছেন। যার মধ্যে দোহা হয়ে কাতার এয়ারের (৩০ শে মার্চের) প্রথম ফ্লাইটে গেছেন ২৬৯ জন, ৫ই এপ্রিলের দ্বিতীয় ফ্লাইটে ৩২২ জন, ১৩ এপ্রিলের তৃতীয় ফ্লাইটে গেছেন ৩২৮ জন। ২১শে এপ্রিলের চতুর্থ ফ্লাইটটি ছিল ওমান এয়ার থেকে ভাড়া করা।

ওই ফ্লাইট ৩০১ জন আমেরিকানকে জাপান হয়ে ওয়াশিংটনের ডুলাস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌছে দেয়। মার্কিন দূতাবাসের তথ্য মতে, আগের সব ফ্লাইট ঢাকা টু ওয়াশিংটন হলেও বুধ ও শুক্রবারের ফ্লাইট দু্থটি গেছে নিউইয়র্কে। দূতাবাসের এক মূখপাত্র মানবজমিনকে বলেন, শেষ দু্থটি ফ্লাইট ্তু ডেডিকেটেড ফ্লাইট্থ ছিলো। ক্যাপাসিটির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে যতটা সম্ভব তারা আটকে পড়া মার্কিন নাগরিক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ফিরিয়েছে। শুক্রবারের ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আপাততঃ বাংলাদেশ থেকে আমেরিকানদের উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হলো। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর তার বিস্তার রোধে চীন ছাড়া দুনিয়ার সঙ্গে সব রুটিন ফ্লাইট বন্ধ করে দেয় ঢাকা। এ কারণে মার্কিন নাগরিক, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান (পারমানেন্ট রেসিডেন্ট কার্ডধারী)সহ হাজার হাজার বিদেশি বাংলাদেশে আটকা পড়েন। তাদের উদ্ধারে স্ব স্ব রাষ্ট্র স্পেশাল ফ্লাইট আয়োজন করে। এ পর্যন্ত অন্তত ৮ হাজার বিদেশি স্পেশাল ফ্লাইটে ঢাকা ছেড়ে গেছেন। এর মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশে দায়িত্বরত কূটনীতিক, ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারী, বিদেশি সহায়তায় চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মী, গার্মে
ন্টস ও বায়িং হাউজের প্রতিনিধি, মেডিকেল ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। তবে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও ইউরোপের বিভিন্ন গন্তব্যে ফেরা বিদেশিদের উল্লেখ্যযোগ্য অংশই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ওই সব দেশের নাগরিক বলে নিশ্চিত করেছে সেগুনবাগিচা। পররাষ্ট্র সচিব বা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে তাদের বিদায় জানানো ছাড়াও বিদেশিদের উদ্ধার-ফ্লাইট (ইভাকুয়েশন ফ্লাইট) পরিচালনা সংক্রান্ত বিশাল এবং সিরিজ ওই কর্মযজ্ঞ মনিটর এবং সমন্বয় করেছেন। দূতাবাসগুলোর তরফে প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইমিগ্রেশন ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে।

বিদেশিদের বিশেষত কূটনীতিকদের ঢাকা ছেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন প্রায়শই বলেন, করোনা বিশ্বের অনেক কিছু স্থবির করে দিয়েছে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। প্রাণঘাতি ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ এবং পরস্পরের প্রতি সমব্যথী হতে হবে। মন্ত্রীর মতে, কূটনীতিক ও নানা কাজে বাংলাদেশে থাকা বিদেশি নাগরিকরা নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছেন করোনার এই দুঃসময়ে পরিবার- পরিজনকে সময় ও সাহস দিতে। তারা ব্যক্তিগত আগ্রহ এবং তাদের সরকারগুলোর স্পেশাল অ্যারেঞ্জমেন্টে ফিরেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তারা ঢাকা ফিরবেন বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই সময়ে অনেক বাংলাদেশিও দেশে ফেরেছেন এবং ফিরছেন। নানা কারণে তাদের ফেরাতে হচ্ছে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=230002