রাজধানীর ফুটপাতেও বিক্রি হচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডার। নেওয়া হচ্ছে বাড়তি দাম। শুক্রবার মগবাজার এলাকা থেকে তোলা ছবি - মাহবুব হোসেন নবীন
৬ জুন ২০২০, শনিবার, ১২:৫৪

অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম বেড়েছে তিন গুণ

করোনাভাইরাস আতঙ্কে অক্সিজেন সিলিন্ডার এখন 'সোনার হরিণ'। হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট হওয়ায় অনেকে এটা সংগ্রহ করে বাসাবাড়িতে রাখছেন। বিপদে যেন ব্যবহার করা যায়। চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়ে এখন তিনগুণ হয়েছে। করোনা সংক্রমণ তীব্রতর হলে রোগীর শ্বাসকষ্ট হয়। তখন এই অক্সিজেন ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রচুর চাহিদার কারণে হোম সার্ভিস হিসেবে অক্সিজেন সিলিন্ডার ডেলিভারির বেশকিছু প্রতিষ্ঠানও এরই মধ্যে দাঁড়িয়ে গেছে। আগের চেয়ে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ দামেও বিক্রি হচ্ছে একেকটি সিলিন্ডার। পাশাপাশি স্বল্প সময়ের জন্য ভাড়াও দেওয়া হচ্ছে সিলিন্ডার। সিলিন্ডারের পাশাপাশি পোর্টেবল অক্সিজেন ক্যান, পোর্টেবল ভেন্টিলেটর এবং শরীরে অক্সিজেন লেভেল পরিমাপের জন্য 'পালস অক্সিমিটার'ও দেদার বিক্রি হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়াই অক্সিজেন সিলিন্ডারের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহারে প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

রাজধানীতে অক্সিজেন সিলিন্ডার হোম ডেলিভারি দেওয়ার জন্য গত দুই মাসে এক ডজনেরও বেশি অনলাইন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এবং ফেজবুক পেজ চালু হয়েছে। এগুলোতে সিলিন্ডারের পরিমাণ, দাম এবং জরুরি নম্বর দেওয়া আছে। এ ধরনের একটি ফেসবুক পেজ 'এমসিএল ভার্চুয়াল হাসপাতালে'র অ্যাডমিন মাহবুব আলম সমকালকে জানান, দুই মাসে অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা এত বেশি বেড়েছে যে, দাম প্রতিদিন বাড়ছে। এক হাজার ৫০০ লিটার পরিমাণের সিলিন্ডারের দাম সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা ছিল, সেটা এখন ২৬ হাজার টাকা। দাম আরও বাড়তে পারে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ অনেকে করোনা আতঙ্কে সিলিন্ডার কিনে স্টক করছে। তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা অক্সিজেন সিলিন্ডার ভাড়া দেওয়ারও ব্যবস্থা চালু করেছেন। জরুরি প্রয়োজনে খুব কম সময়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করা হবে, রোগীর প্রয়োজন শেষ হলে আবার ফেরত নিয়ে আসা হবে। ভাড়া ব্যবস্থা জনপ্রিয় হলে অযথা সিলিন্ডার স্টক করার প্রবণতা কমবে।

অনলাইনে দেখা যায়, সিলিন্ডারের পাশাপাশি ১২ লিটারের পোর্টেবল অক্সিজেন বারও বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রায় সব অনলাইনেই সিলিন্ডার 'আউট অব স্টক' দেখা যায়। এ ব্যাপারে দুটি অনলাইন শপের জরুরি নম্বরে ফোন করলে জানানো হয়, এই বারের চাহিদা আকাশচুম্বী। কয়েক দফায় আমদানি করেও চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। এখন একটিও স্টকে নেই। তারা আরও জানান, অক্সিজেনের পরিমাপের ফলোমিটারের দামও আগের চেয়ে পাঁচ-ছয় গুণের বেশি বেড়েছে।

সংশ্নিষ্টরা আরও জানান, অক্সিজেন ব্যবহারের সময় পরিমাপের জন্য ব্যবহূত ফলোমিটারও পাওয়া যাচ্ছে না। দেড় হাজার টাকার ফলোমিটার এখন বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। তারা আরও জানান, হোম ডেলিভারির জন্য রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দোকান ভাড়া নিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখার অস্থায়ী গোডাউনও তৈরি হয়েছে।

চিকিৎসকরা জানান, সাধারণ দু'ভাবে অক্সিজেন দেওয়া হয়। একটি মাস্কের সাহায্যে। অন্যটি ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে। দুটি পদ্ধতিতেই চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন। কারণ দেহের অক্সিজেন লেভেল পরিমাপের পরই প্রতি মিনিটে কতটুকু অক্সিজেন প্রবাহ প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করা হয়। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হাসান শাহরিয়ার কল্লোল সমকালকে বলেন, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বা স্যাচুরেশন ৯৩ শতাংশের নিচে নেমে গেলে প্রথমে অল্প মাত্রায় অক্সিজেন দিতে হয়। এতেও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অক্সিজেনের মাত্রা দ্বিগুণ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, অক্সিজেন বেশি মাত্রায় নিলে ক্ষতির ঝুঁকি আছে। তবে সেটা খুব বড় ঝুঁকি নয়। কিন্তু কখনও কখনও ছোট ঝুঁকি থেকেই বড় সংকটের সৃষ্টি হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অংশে বিরূপ প্রভাব দেখা দিতে পারে। এ জন্য অক্সিজেন নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুসরণ করেই তা দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, বাসায় সিলিন্ডার স্টক করা হলে অগ্নিকাণ্ডের একটা ঝুঁকি থাকে। কারণ সিলিন্ডারে উচ্চ চাপে অক্সিজেন ভরে রাখা হয়। ফলে একটি বিস্ম্ফোরণ হতে পারে।

https://samakal.com/bangladesh/article/200625694/