ছবি: সংগৃহীত
১ জুন ২০২০, সোমবার, ৭:৫২

কৃষ্ণাঙ্গ যুবক হত্যা

যুক্তরাষ্ট্রে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ

কৃষ্ণাঙ্গ যুবক হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে কারফিউ জারি করা হয়েছে। তবে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।

পঞ্চম দিনের মতো মিনেপোলিস, সিয়াটল, নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো ও আটলান্টাসহ দুই ডজন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে।

লস অ্যাঞ্জেলেস ও নিউইয়র্কে পুলিশের একাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ফিলাডেলফিয়ায় দোকানপাট ভাংচুর; লস অ্যাঞ্জেলেসে এটিএম বুথ-শপিংমলে হামলা, লুটপাট করা হয়েছে।

পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ মুহুর্মুহু টিয়ার শেল-স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

নিউইয়র্কে বিক্ষোভকারীদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিয়েছে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর শরণাপন্ন হয়েছে নয়টি রাজ্য।

মিনোসোটায় ১০ হাজার ৮০০ সেনা এবং কোথাও কোথাও ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের বাইরে সিক্রেট সার্ভিস সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে।

এদিকে, বিক্ষোভকারীদের কঠিন পরিণতির হুশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর বিবিসি, এপি, সিএনএন, রয়টার্স, লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস, আলজাজিরা ও গার্ডিয়ানের।

পুলিশ হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর জেরে বিক্ষোভকারী এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েকটি শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশটির ১৬টি অঙ্গরাজ্যের ২৫টি শহরে কারফিউ জারি করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, ইলিনয়েস, কেনটাকি, মিনেসোটা, নিউইয়র্ক, ওহিয়ো, ওরেগন, পেনসিলভানিয়া, সাউথ ক্যারোলিনা, টেনেসি, উতাহ, ওয়াশিংটন এবং উসকনসিন অঙ্গরাজ্যের ২৫টি শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

শিকাগোতে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে বিক্ষোভকারীরা। জবাবে পুলিশও পাল্টা টিয়ার শেল ছোড়ে। শনিবার বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়।

লস অ্যাঞ্জেলেসে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়ার পর বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তাদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ।

জর্জিয়া, আটলান্টায় শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা ভাংচুর চালানোর পর জানমালের নিরাপত্তায় সেখানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।

মিনেপোলিস, নিউইয়র্ক, মায়ামি, আটলান্টা এবং ফিলাডেলফিয়ায় বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। অন্যান্য শহরের সঙ্গে মিনেপোলিস, আটলান্টা, লস অ্যাঞ্জেলেস, ফিলাডেলফিয়া, পোর্টল্যান্ড এবং লুইসভিলে রাতভর কারফিউ জারি করা হয়েছে।

অনেক শহরে বিক্ষোভকারীরা কারফিউ ভেঙে ব্যাপক হারে লুটপাট চালিয়েছে।

শনিবার সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ফ্লয়েডের মৃত্যু আমেরিকাবাসীকে ভয়, ক্রোধ এবং শোকে নিমজ্জিত করেছে। শান্তিপ্রিয় প্রতিটি আমেরিকানের সামনে বন্ধু হিসেবে দাঁড়াব আমি। ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে টেলিভিশনে ভাষণে একথা বলেন তিনি।

লুটেরা এবং বিশৃঙ্খলাকারীদের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, এ ধরনের কাজ ফ্লয়েডের স্মৃতিকে অসম্মান করবে। তিনি বলেন, যা প্রয়োজন ছিল তা হল- ঘৃণা নয় বরং আরোগ্য লাভ করা, বিশৃঙ্খলা নয় বরং ন্যায়বিচার।

তিনি বলেন, আমি ক্ষুব্ধ জনগণের কর্মকাণ্ড সহ্য করব না। এটা চলবে না। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার জন্য মিনেপোলিসের মেয়রকে দোষারোপ করেছেন। তিনি বলেন, বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করা না হলে ন্যাশনাল গার্ডের সেনারা সেটি নিয়ন্ত্রণে নেবে।

এদিকে, ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন অভিযোগ তুলেছেন, গোঁড়ামির পালে ট্রাম্প হাওয়া দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ফ্লয়েডের হত্যার ঘটনায় দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।

বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সিক্রেট সার্ভিসের সংঘর্ষ : দ্বিতীয় দিনের মতো ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের বাইরে অবস্থান নিয়েছেন অনেক বিক্ষোভকারী।

শনিবার রাতে সেখানে সিক্রেট সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ৫ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি চলে।

বিক্ষোভকারীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে চিৎকার করে ও পানির বোতলসহ অন্য বস্তু নিক্ষেপ করে এবং ধাতুর বেষ্টনি ভেঙে সামনে এগোনোর চেষ্টা করেন।

একপর্যায়ে তারা ধাতুর বেষ্টনি তুলে ফেলে এবং সিক্রেট সার্ভিসের কর্মকর্তাদের ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। সিক্রেট সার্ভিসের কর্মকর্তারা পুরো সময় ধরে বারবার প্রতিবন্ধক স্থাপন করে আর বিক্ষোভকারীরা ধস্তাধস্তি করে তাদের সরানোর চেষ্টা করে।

এ সময় কয়েকজন সামান্য আঘাতও পান। একপর্যায়ে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ওপর পিপার স্প্রে ব্যবহার করে হটানোর চেষ্টা করে। পুরো সময়জুড়ে বিক্ষোভকারীরা ফ্লয়েডের পক্ষে স্লোগান দেন ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এটিএম বুথ-শপিংমলে হামলা, ব্যাপক লুটপাট : ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ক্রমেই লুটপাট আর সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে।

শনিবার রাতে বিক্ষোভের আড়ালে লস অ্যাঞ্জেলসে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। শহরের বেশ কয়েকটি মার্কেট ও সুপারশপের গেট ভেঙে লুটপাট করা হয়েছে।

শনিবার বেভারলি হিলস ও ফেয়ারফ্যাক্সে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। মেলরোজ অ্যাভিনিউয়ে একটি এটিএম বুথ ভেঙে সেটি নিয়ে যেতে দেখা গেছে লুটেরাদের।

অন্যরাও বেশ কয়েকটি দোকান ভাংচুর করেছেন। শহরের গ্রুভ এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।

এ সময় পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সেখানে পুলিশের একটি কিয়স্কে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শনিবার রাত ৮টা থেকে ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয় লস অ্যাঞ্জেলসে।

বেভারলি হিলসে রাতভর টহল দিয়েছেন বাড়তি পুলিশ সদস্যরা। এ সময় সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানান শহরের মেয়র লেস্টার ফ্রায়েডম্যান।

লস অ্যাঞ্জেলসের পুলিশ প্রধান মিশেল মুর বলেছেন, তিনি মানুষের রাগ ও হতাশা বুঝতে পারছেন। তা সত্ত্বেও শহরের নিরাপত্তা বজায় রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/311214