২৩ মে ২০২০, শনিবার, ৪:৪১

আমফানে রাজশাহীতে ১২০ কোটি টাকার আমের ক্ষতি

ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন যাবে মন্ত্রণালয়ে

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনে কিছুটা দুর্বল হয়ে উত্তরাঞ্চল অতিক্রম করে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আমফানের আঘাতে রাজশাহী জেলায় শুধু আমের ক্ষতিই হয়েছে প্রায় ১২০ কোটি টাকার । তবে খুব বেশি গতি নিয়ে রাজশাহীতে আঘাত না হানলেও আম নামানোর আগ মুহূর্তে বাতাসের এই ঝাপটাই ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। আমফানে জেলাজুড়ে ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র তুলে ধরে শুক্রবার প্রতিবেদন আকারে সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা রয়েছে জেলা প্রশাসনের। বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো: হামিদুল হক সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলার প্রত্যেক উপজেলায় কৃষি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা করা হয়। যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আমচাষিরা। সর্বনি¤œ দর ধরে হিসাব করলেও প্রায় ১২০ কোটি টাকার আমের ক্ষতি হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘মৌসুমী ফল আম ও লিচু ছাড়াও কিছু কৃষি ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে। সেটা খুব বেশি নয়। বোরো ধান জমিতে নুইয়ে পড়েছে। তবে ধান পেকে যাওয়ায় কৃষক এখন দ্রুত কেটে নিতে পারলে বেশি ক্ষতি হবে না। আর বসতভিটা-ঘরবাড়িও তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।’

এ দিকে ঝরে পড়া আমচাষিদের থেকে কিনে ত্রাণ হিসেবে দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে হামিদুল হক বলেন, ‘রাজশাহীর মানুষকে ত্রাণ হিসেবে আম দেয়ার বিষয়টি কেমন হয়ে যায়! এখানে মৌসুমে আমের তো অভাব নেই। বরং আম প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে কিভাবে রাজশাহীর কৃষকদের ঝরে পড়া আম বিক্রির ব্যবস্থা করা যায়, সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।’ জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শামসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঝড়ের পরপরই খোঁজখবর নিয়ে আমরা ধারণা করছিলাম ২০ শতাংশ আম হয়তো ঝরে পড়েছে। তবে মাঠের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। আমরা ঘুরে দেখেছিÑ জেলায় গড়ে ১৫ শতাংশ আম ঝরে গেছে। স্বাভাবিক বাজারমূল্যে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার ১৫ শতাংশ ক্ষতি ধরে হিসাব করে মোট ক্ষতি বের হয়ে আসবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কৃষি ফসলের মধ্যে বোরো ধান নুইয়ে পড়েছে। অধিকাংশ ক্ষেতের ধান পেকে যাওয়ায় কৃষকরা কেটে নিতে পারবেন। হয়তো শ্রমিক আগের চেয়ে কিছুটা বেশি লাগতে পারে। এ ছাড়া লিচু, ভুট্টা, পানবরজের স্বল্প পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি বছর রাজশাহী জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৭৮ মেট্রিক টন। সেই হিসেবে ১৫ শতাংশ হারে প্রায় ৪৪ হাজার মেট্রিক টন আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার বাঘা, চারঘাট, পুঠিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় গাছে যে পরিমাণ আম ধরেছিল, তাতে সহজে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন জানান, বুধবার রাত ২টা ৫৫ মিনিটে আমফান পাবনা অঞ্চল হয়ে রাজশাহীতে প্রবেশ করে। আমফানে যে গতিবেগ ছিল তা রাজশাহী পৌঁছার আগেই দুর্বল হয়ে পড়ে। ঝড় হিসেবেই রাজশাহী ও তার পাশের এলাকায় প্রবেশ করে আমফান। ওই সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫৯ কিলোমিটার। এর স্থায়িত্ব ছিল মাত্র তিন মিনিট। এর আগে আমফানের প্রভাবে বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাজশাহীতে শুরু হয় দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৮১ মিলিমিটার।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/503695/