২০ মে ২০২০, বুধবার, ৩:২৭

ঘূর্ণিঝড় আমফানে চরম ঝুঁকিতে ৫ হাজার পণ্যবাহী জাহাজ

দেশে মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে প্রায় ১০ হাজার পণ্যবাহী জাহাজ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় এসব জাহাজের জন্য নেই কোনো পোতাশ্রয়। ফলে ঘূর্ণিঝড় আমফান ধেয়ে আসলে চরম ঝুঁকিপূর্ণভাবে দেশের জলসীমায় অবস্থান করছে ৫ সহস্রাধিক পণ্যবাহী জাহাজ। ২০১৪ সালে উদ্যোগ নেয়া হলেও এখনো টেন্ডার আহ্বান করতে পারেনি এ সংক্রান্ত নির্মাণ প্রকল্প। তবে প্রাথমিকভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ৬টি স্থানকে চিহ্নিত করে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় একটি প্রকল্পে আন্তর্জাতিক একটি প্রতিষ্ঠানকে ডিজাইনের দায়িত্ব দেয়া হলেও করোনার কারণে তা ফের আটকে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্বের মাঝারি ও বড় প্রায় সব বন্দরে রয়েছে পোতাশ্রয়। পোতাশ্রয় হলো সমুদ্র তীরে পানিবেষ্টিত এলাকা যেখানে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বড় বড় নৌকা বা জাহাজ ভিড় করে মালামাল কিংবা যাত্রী উঠানো ও নামানো ব্যবস্থা থাকে। বন্দরে সাধারণত এক বা একাধিক পোতাশ্রয় থাকে। যেমনÑ মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া বন্দরটি দুইটি পোতাশ্রয়ের সমন্বয়ে তৈরি। পোতাশ্রয় দুইভাবে তৈরি হয়। প্রথমটি প্রাকৃতিক এবং দ্বিতীয়টি মানবসৃষ্ট। সমুদ্র বাঁধ, জেটি নির্মাণ কিংবা ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কৃত্রিম পোতাশ্রয় তৈরি করা হয়। যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোনিয়ার লং বিচ পোতাশ্রয়। অন্য দিকে প্রাকৃতিক পোতাশ্রয় ভূমির অধিক্ষিপ্ত অংশ দ্বারা বেষ্টিত হয়ে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়ে থাকে। যেমন অস্ট্রেলিয়ার সিডনি পোতাশ্রয়। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে প্রাকৃতিকভাবে পোতাশ্রয় তৈরি হবে না। এটি নিজেদের তৈরি করতে হবে।

জানা গেছে, পোতাশ্রয় নির্মাণ করার ২০১৪ সালে উদ্যোগী হয় সরকার। কিন্তু ৬ বছরেও প্রাথমিক কাজ টেন্ডার করতে পারেনি এ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে পোতাশ্রয় নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মাহমুদুল হাসান সেলিম বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ড্রেজিং ও পোতাশ্রয় নির্মাণের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল। কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে ড্রেজিং ও পোতাশ্রয় নির্মাণ পৃথক করা হয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে ডিজাইনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে তারা কাজ করতে পারছে না। আমরা আশা করছি আগামী অর্থবছরে টেন্ডার আহ্বান করতে পারব। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে শ্রমিক ও নৌযান উভয়ই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। বর্তমানে প্রায় দুই হাজার জাহাজ কর্ণফুলী নদীতে অবস্থান করছে। মংলাতেও ৫ শতাধিক জাহাজ ঝুঁকিপূর্ণভাবে অবস্থান করছে। আমরা বেশ কয়েক বছর থেকে সরকারের কাছে পোতাশ্রয় নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠকও করেছি। এখন পর্যন্ত এর দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় আমফান আঘাত হানার আশঙ্কায় কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ঘাটে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে সব ধরনের লাইটারেজ জাহাজ, মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিগুলো জাহাজশূন্য করা হয়েছে। এর আগেই বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে গেছে। বহির্নোঙরে থাকা বড় জাহাজগুলো গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ১৮, ১৫ নম্বর খাল এবং গুপ্তখালের লাইটার-কোস্টার ভ্যাসেলগুলো বাংলাবাজার থেকে শাহআমানত সেতুর উজানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বন্দরের নিজস্ব টাগ ও নৌযানগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে।

নদীতে জোয়ারের পানির উচ্চতা দিনের জোয়ারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্দরকেন্দ্রিক চলাচলরত বিভিন্ন নৌযান ও সুন্দরবন সংলগ্ন সাগর নদীতে মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। মংলা নদীর পূর্ব পাড়ে কয়েক শ’ ট্যুরিস্ট বোট নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া আশপাশের বিভিন্ন খালেও বিভিন্ন নৌযান নিরাপদে নোঙর করে রয়েছে। মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সব জাহাজ নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। চট্টগ্র্রামের কুমিরা ঘাট থেকে সন্দ্বীপ ও হাতিয়ায় নৌযান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। রেড জারি করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। একই সাথে ঘূর্ণিঝড় চলাকালে জাহাজগুলোর ইঞ্জিন চালু রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/503118/