২০ মে ২০২০, বুধবার, ৩:২৬

গার্মেন্টের বেতন-বোনাস নিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা

ঈদুল ফিতরের আগে এক হাজার ৩৯৬ পোশাক কারখানায় বেতনভাতা-বোনাস সময়মতো পরিশোধ করতে সমর্থ হবে না। এতে চরম শ্রমিক অসন্তোষের কারণে আইনশৃঙ্খলার বিঘœ ঘটতে পারে। এমনকি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ারও শঙ্কা রয়েছে।

গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানী ও এর আশপাশের টঙ্গী-গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গার্মেন্ট সেক্টরে বেতনভাতার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এ দেশে করোনার আঘাত শুরুর পরই একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল গার্মেন্ট সেক্টর অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। গতকালও রাজধানীর উত্তরাসহ কয়েকটি স্থানে গার্মেন্ট শ্রমিকরা তাদের বেতন-বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।

সম্প্রতি দেয়া এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বছরই ঈদের আগে বিভিন্ন শিল্পকারখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ হয়ে থাকে। এ বছর করোনার এক মাস বন্ধ থাকার পর গত ২৫ এপ্রিল থেকে সীমিত আকারে গার্মেন্ট কারখানা চালু হয়েছে। তবে বেতন ও বোনাস নিয়ে এরই মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু পোশাক কারখানায় ওভারটাইম ও বকেয়া বেতনভাতার দাবিতে সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর কারখানার সামনে অবস্থান ধর্মঘট এমনকি মালিকের বাসা ঘেরাও করার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী কয়েক দিনে এক হাজার ৩৯৬ কারখানার শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস সময়মতো পরিশোধ করতে কর্তৃপক্ষ সমর্থ হবে না বলে সংশয় রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭৩টি কারখানা অধিক সংশয়যুক্ত, ৪৭৬টি সংশয়যুক্ত এবং সাধারণ ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে ৪৪৭টি কারখানা। এদের মধ্যে বিজিএমইএভুক্ত কারখানা রয়েছে ৫৯৬টি, বিকেএমইএভুক্ত ১৭৯টি, বিটিএমইএভুক্ত ৫১টি, বিজেএমসিভুক্ত তিনটি এবং সাব কন্ট্রাক্টের কারখানা রয়েছে ৫৬৭টি। এসব কারখানায় বেতন পরিশোধ করতে না পারলে রাস্তা অবরোধ, যানবাহন ভাঙচুর,অগ্নিসংযোগসহ নানা ধরনের নাশকতা চলতে পারে। আর এতে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটবে।

এমন পরিস্থিতিতে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে গত ৭ মে বিজিএমইএ নেতাদের সাথে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল ও গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের বৈঠক হয়। সেখানে শ্রমিক নেতাদের মধ্যে, অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোস, বাবুল আখতার, নাজমা আখতার, রুহুল আমিন, কল্পনা আক্তার, জলি তালুকদার, আমিরুল হক আমিন, ফজলুল হক মন্টু, বদরুদ্দোজা নিজামসহ গত ১৫ বছর ধরে যারা নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তাদের প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ছুটিতে থাকা শ্রমিকদের ৬৫ শতাংশ ও কর্মরতদের শতভাগ বেতনভাতা পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়। একই সাথে চলতি মাসে কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করা যাবে না বলেও জানানো হয়। কিন্তু পরের দিন গার্মেন্ট শ্রমিক অধিকার আন্দোলন এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে। তারা দাবি করে রাষ্ট্রের অন্য শ্রমিকদের বেতন কাটা না হলেও নি¤œ আয়ের মানুষের বেতন কাটা মালিকদের অন্যায় পদক্ষেপ। এ কারণে তারা পূর্ণ বেতন ও বোনাস দাবি করে বিবৃতি দেয়। এমন পরিস্থিতিতে তাদের উসকানি ও ইন্ধনে আশুলিয়ায় দি রোজ ড্রেসেস লি:, নাভা নিট কম্পোজিট, ম্যাগপাই কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড, স্টারলিং এ্যাপারেলস লিমিটেড ও এজিক্স লিমিটেডের শ্রমিকরা শতভাগ বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ ভাঙচুর ও বিক্ষোভ করে। এর পেছনে ওই সংগঠন দায়ী বলে জানানো হয়েছে।

এই প্রেক্ষিতে কিছু শ্রমিক নেতা এবং বিদেশী এনজিওর প্রতি নজর রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস নিয়ে চাপা উত্তেজনা ও অস্থিরতা রয়েছে। এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারে স্বার্থান্বেষী মহল শ্রমিক সংগঠন ও সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এ পর্যন্ত এক হাজার ৩৯৬ কারখানার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেলেও আরো অনেক কারখানায় বেতন বোনাস না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে সবাই জোটবন্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে আসতে পারে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/503129/