১৯ মে ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:২৩

আজ এনইসিতে নতুন এডিপি উঠছে

পদ্মা সেতুসহ মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ছে

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী * বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে : পরিকল্পনা সচিব * প্রকল্পের গতি বাড়াতে হবে : ড. শামসুল আলম

আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অর্থ বরাদ্দে সাতটি মেগা প্রকল্প সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে। ফাস্টট্র্যাকভুক্ত এসব প্রকল্পে বরাদ্দ প্রায় দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ৩১ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা। নতুন এডিপিতে প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৪ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলো হল- পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর এবং দোহাজারী-গুনদুম ডুয়েলগেজ রেল ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। তবে অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি করোনার ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় এগুলোর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।

এদিকে আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকার এডিপির খসড়া উপস্থাপন করা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। করোনার কারণে এবারই প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতিতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এনইসি সদস্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবরা থাকবেন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব মো. নূরুল আমিন সোমবার যুগান্তরকে বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়া মেগা প্রকল্পগুলো যাতে কোনোভাবেই বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এসব প্রকল্প অনুকূলে যে অর্থের চাহিদা দেয়া হয়েছে আমরা সেভাবেই বরাদ্দ নিশ্চিত করেছি।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, সার্বিকভাবে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে চাহিদার তুলনায় ঘাটতি থাকছে ৩১ হাজার ৭৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের প্রথম কল নোটিশ অনুযায়ী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো থেকে প্রাথমিক চাহিদা পাওয়া যায় ২ লাখ ৩৬ হাজার ২২৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক লাখ ৬০ হাজার ২৮১ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭৫ হাজার ৯৪১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা আসে। আর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনকে এডিপির যে সিলিং নির্ধারণ করা হয় সেটি হলো ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ লাখ টাকা আসে। ফলে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ নিশ্চিত করা যায়নি।

সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে চার হাজার ১৫ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে প্রস্তাব করা হচ্ছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। ফলে সংশোধিত এডিপির তুলনায় বরাদ্দ বাড়ছে ৯৮৫ কোটি টাকা। এছাড়া মেট্রোরেল প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে চার হাজার ৩২৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য ধরা হয়েছে চার হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ছে ৪৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ১৪ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে প্রস্তাব করা হচ্ছে ১৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। ফলে বাড়ছে ৮৪৫ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে তিন হাজার ২৯৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আগামী এডিপিতে প্রস্তাব করা হচ্ছে তিন হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা, বাড়ছে ৩৮৭ কোটি টাকা। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৬৪০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করা হচ্ছে ৩৫০ কোটি টাকা। ফলে এ প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে ২৯০ কোটি টাকা। মাতারবাড়ি আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎ প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে তিন হাজার ২২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। নতুন এডিপিতে প্রস্তাব করা হচ্ছে তিন হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে বাড়ছে ৪৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের অনুকূলে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল এক হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে প্রস্তাব করা হচ্ছে দেড় হাজার কোটি টাকা। ফলে বরাদ্দ বাড়ছে ৩৬৫ কোটি টাকা।

সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম যুগান্তরকে বলেন, মেগা প্রকল্পগুলো অর্থনীতির মৌলভিত্তিসম্পন্ন প্রকল্প। এগুলো বাস্তবায়ন হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে। এছাড়া করোনার ক্ষতিকর আর্থিক প্রভাব মোকাবেলা বিশেষ ভূমিকা রাখবে। অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি প্রকল্পগুলোর গুণগত বাস্তবায়নের গতি ত্বরান্বিত করতে হবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/308459