১৮ মে ২০২০, সোমবার, ৩:০৬

গড় বিলের ফাঁদে বিপাকে পবিস’র ২ কোটি গ্রাহক

দুই মাসের ভুতুড়ে বিল ছয় মাসের সমান ; পরিশোধ করতে পাড়া মহল্লায় মাইকিং

করোনার এই দুর্যোগের সময়ে গড় বিলের ভুতুড়ে ফাঁদে পড়েছে পল্লী বিদ্যুতের দুই কোটি গ্রাহক। দেশব্যাপী অচলাবস্থায় সব শ্রেণী-পেশার মানুষের আয় উপার্জনের পথই যেখানে বন্ধ রয়েছে সেখানে বিদ্যুতের তিন মাসের গড় বিলের কাগজ হাতে পেয়ে অনেকেরই দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা। মহামারীর এ সময়ে কোনো রকমে খেয়ে পরে থাকাই যেখানে দুষ্কর, সেখানে বিদ্যুতের প্রকৃত ব্যবহারের দ্বিগুণ বা তিনগুণেরও বেশি গড় বিল করে গ্রাহকদের তা প্রদানে চাপ দিচ্ছে পল্লী বিদ্যুতের সংশ্লিষ্ট সমিতি।

গত মার্চ মাসের শেষ দিকে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছিল যে, করোনার এ সময়ে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হলেও শিগগিরই তা আদায় করা হবে না। এ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বকেয়া বিলের কোনো জরিমানাও ধরা হবে না। তখন থেকেই অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল এই তিন মাসের বিদ্যুতের বিল আদায়ও বন্ধ ছিল। এমনকি যত দিন করোনা পরিস্থিতি ভালো না হবে তত দিন পর্যন্ত জরিমানা ছাড়াই বকেয়া এই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা যাবে এমন আভাসও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকেই বকেয়া বিল পরিশোধ করতে গ্রাহকদের চাপ দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি মোবাইলে এসএমএস ছাড়াও গ্রামে বা পাড়া মহল্লায় মাইকিং করে চলতি মে মাসের মধ্যেই সব বকেয়াসহ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের তাগিদ দেয়া হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) অনেক গ্রাহক অভিযোগ করছেন, দুই বা তিন মাস ধরে পল্লী বিদ্যুতের বিল কালেকশন বুথ বা বিল কালেকশন করে এমন সব ব্যাংকই বন্ধ। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই বিল দিতে পারেননি। অন্য দিকে এই তিন মাসের বিদ্যুতের রিডিং লেখাও বন্ধ ছিল। করোনার কারণে গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার রিডাররা কোনো রিডিং করেননি। ফলে চলতি মাসের শুরু থেকে সমিতির সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে অনুমাননির্ভর (পবিস’র ভাষায় গড় রিডিং) ভুতুড়ে বিল তৈরি করে গ্রাহকের বাসায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এখানে দু-তিন মাসের মোট মিল একত্রে করে দেয়া হয়েছে।

পবিস’র অনেক গ্রাহকই টেলিফোনে এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন, এবার দুই মাসের বিল একত্রে দেয়া হলেও এর টাকার পরিমাণ গত চার বা পাঁচ মাস কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছয় মাসের মোট বিলের সমতুল্য। এটি কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর আগে কোনো সময়েই এমন ভুতুড়ে বিলের হিসাব দেখিনি। এ ছাড়া মিটারে যে রিডিং বহাল আছে তার সাথে প্রস্তুতকৃত বিলের কপির সাথেও কোনো মিল নেই। এ ছাড়া আমরা ইচ্ছা করে বিল বকেয়া করিনি। করোনা পরিস্থিতির কারণেই বিল তৈরি করতে পারেনি পবিস। আর সেই কারণে আমরাও বিল পরিশোধ করতে পারিনি।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রি-পেইড মিটার স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম গতকাল রোববার নয়া দিগন্তকে জানান, দেশে দুই কোটি ৭০ হাজার গ্রাহক পল্লী বিদ্যুতের সেবা নিচ্ছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ১০ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করে বিদ্যুতের সেবা নিচ্ছে। এর বাইরে এক কোটি ৯০ লাখ ১০ হাজার গ্রাহক এখনো আগের পোস্ট পেইড মিটার ব্যবহার করছেন। তারাই মূলত এখন গড় বিলের একটি সমস্যার কথা বলছেন। তবে তিনি আরো জানান, গড় বিলে গ্রাহকদের সাময়িক কষ্ট হলেও পরের মাসগুলোতে তারাই লাভবান হবেন। গড় বিলে যদি বেশি বিল দেয়া হয়েও থাকে তা হলে পরের মাসে গ্রাহকদের বিদ্যুতের বিল পর্যায়ক্রমে কম আসবে। এ দিকে ঢাকা পবিস-১-এর জোনাল অফিসের (জামগোড়া) ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল এই তিন মাসের বিল জরিমানা ছাড়া আদায় করা হচ্ছে। তবে মে মাসের জরিমানা মওকুফের কোনো সিদ্ধান্ত আমরা এখনো পাইনি। তিনি আরো জানান, বিল পরিশোধের জন্য তাগিদ হচ্ছে এই কারণে যে, সামনে জুন মাস। আর্থিক বছরের হিসেবে জুন মাসে আমাদর কাছে ক্লোজিং সময়। এই জুন মাসের মধ্যে আমাদের বিগত এক বছরের সব হিসাব ক্লোজ করতে হয়। তাই প্রত্যেক গ্রাহককেই আমরা অনুরোধ করছি তারা যেন জুন মাসের মধ্যে সব বকেয়া বিল পরিশোধ করে আমাদের হিসাবের কাজকে সহজ করতে সহায়তা করেন।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/502708/