১৮ মে ২০২০, সোমবার, ৩:০৪

তলানিতে রফতানি আয় সঙ্কটে উদ্যোক্তারা

বৈদেশিক মুদ্রায় দায় পরিশোধে বাড়তি সুবিধা দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক

রফতানি আদেশ স্থগিত ও বাতিল হওয়ায় উদ্যোক্তারা স্থানীয় আমদানি দায় পরিশোধ করতে পারছেন না। এতে বৈদেশিক মুদ্রায় দায় বেড়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য রফতানি উন্নয়ন তহবিল ব্যবহারের সীমা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে রফতানিমুখী উদ্যোক্তারা রফতানি উন্নয়ন তহবিল থেকে বাড়তি ৫০ লাখ ডলার ব্যবহার করতে পারবেন। আর এ সুযোগ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ভোগ করতে পারবেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগে প্রতি মাসেই আড়াই বিলিয়ন অর্থাৎ ২৫০ কোটি ডলারের ওপরে রফতানি আয় হতো। গত মার্চ মাসে তা মাত্র ৫৬ লাখ ডলারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে প্রায় ৮০ শতাংশ রফতানি আয় কমে গেছে। বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাবে রফতানি আদেশ স্থগিত হওয়ায় ও অনেক ক্ষেত্রে বাতিল হওয়ায় চলমান রফতানি ব্যাহত হয়েছে। এতে অনেক উদ্যোক্তাই সঙ্কটে পড়ে গেছেন। যেমন, রফতানি আদেশ পাওয়ার পর স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে পণ্য কিনে রফতানির পণ্য তৈরির কাজ চলছিল। কিন্তু হঠাৎ রফতানি আদেশ স্থগিত হওয়ায় প্রাপ্ত আয় থেকে বঞ্চিত হন উদ্যোক্তারা। আবার অনেকেই রফতানি আদেশ অনুযায়ী পণ্যও উৎপাদন করেছেন। কিন্তু পণ্য বিদেশে পাঠানোর আগেই তা স্থগিত হয়ে যায়। এভাবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তহবিল আটকে যায় উদ্যোক্তাদের। এভাবে বৈদেশিক মুদ্রায় ব্যবসায়ীদের দায় বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, কয়েক দফা বাড়িয়ে তৈরী পোশাক খাতের একজন উদ্যোক্তাকে রফতানি উন্নয়ন তহবিল থেকে একবারে আড়াই কোটি ডলার পর্যন্ত ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। সাধারণত, ব্যবসায়ীরা এ তহবিল ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করে যে পরিমাণ রফতানি আয় হতো তা দিয়ে এ তহবিলের দায় পরিশোধ করতেন। কিন্তু রফতানি আদেশ স্থগিত হয়ে যাওয়ায় ইডিএফের দায়ও পরিশোধ করতে পারছেন না তারা। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রকৃত অনেক রফতানিকারকের ইডিএফ লিমিট পূরণ হয়ে গেছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে ২ কোটি ৪০ লাখ ডলার পর্যন্ত ব্যবহার হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় ঈদকে সামনে রেখে বৈদেশিক মুদ্রায় স্থানীয় দায় পরিশোধ করতে পারছেন না। উদ্যোক্তাদের কথা ভেবেই ইডিএফ থেকে বাড়তি তহবিল ব্যবহারের জন্য সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে এটি একেবারেই সাময়িক সময়ের জন্য। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুযোগ ভোগ করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। এরপর রফতানি যথাযথভাবে চালু হলে আগের অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। এ দিকে রফতানি আয় কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের মতো ব্যাংকগুলোর ডলার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ওষুধপত্রসহ জরুরি প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে ব্যবসায়ীরা এলসি খুলছেন। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রায় এলসির দায় পরিশোধে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। অনেক ব্যাংক করপোরেট ডিলিংয়ের মাধ্যমে ডলার কিনছে বেশি দামে। বাংলাদেশ ব্যাংক বেঁধে দেয়া দরে বেশির ভাগ ব্যাংকেই এখন আর ডলার লেনদেন হচ্ছে না। আগাম চাহিদা সৃষ্টি করে করপোরেট ডিলিংয়ের মাধ্যমে ডলার সরবরাহ করছে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো। কিন্তু এতেও অনেকেই ডলার সংস্থান করতে পারছে না।

এ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে শুধু বিপিসির জ্বালানি তেল, এলএনজি আমদানির দায় পরিশোধ করতে সরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। কিন্তু ফলে দিন দিন ডলারের সঙ্কট বেড়ে চলছে। এ পরিস্থিতিতে রফতানিকারকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। সঙ্কটে পড়ে রফতানি আয় যাতে ব্যাহত না হয় সে জন্য নানা সুবিধা দেয়া হচ্ছে। ইডিএফ তহবিল বাড়ানোসহ ব্যাক টু ব্যাংক এলসির দায় মেটানোর জন্যও ইডিএফ থেকে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, রফতানি আয় বাড়ানোর মাধ্যমেই বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমানো সম্ভব হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/502718