টঙ্গীতে পোশাক শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ : নয়া দিগন্ত -
১৫ মে ২০২০, শুক্রবার, ১২:৩৯

দু’টি পোশাক কারখানা বন্ধের জেরে দিনভর অবরোধ

শ্রমিক বিক্ষোভে অচল টঙ্গী

ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাপক শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছে টঙ্গীতে। গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী বিসিকের দু’টি বৃহৎ পোশাক কারখানা পূর্ব ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ বন্ধ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গোটা টঙ্গী শিল্প এলাকায় এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। কারখানা দু’টির আন্দোলনরত শ্রমিকরা অন্যান্য কারখানায় গিয়ে কর্মরত শ্রমিকদেরকে বের করে নিয়ে আসে। টঙ্গীর মিল বাজার হা-মীম শিল্প গোষ্ঠীর পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বহিরাগতদের আন্দোলনের ডাকে সাড়া না দেয়ায় সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। বহিরাগত শ্রমিকদের হামলায় সেখানে কর্মরত দুই শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ৫ জনকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।

এ দিকে একইসাথে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-কালীগঞ্জ-নরসিংদী সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সব সড়ক বন্ধ করে দিনব্যাপী তাণ্ডব চালিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। এ সময় সড়কগুলোতে মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলসহ কোনো ধরনের যানবাহন চলতে দেয়নি তারা। বিক্ষোভ চলাকালে পরিবহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে মেতে উঠে শ্রমিকরা। বিক্ষোভের ভিডিও ও ছবি ধারণ করার অজুহাতে পথচারীদের মোবাইল ফোনও কেড়ে নেয়া হয়েছে। অবরোধের কারণে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত প্রায় আট ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-কালীগঞ্জ-নরসিংদী সড়ক ও টঙ্গী বিসিকের প্রধান সড়কসহ সকল শাখা রোডে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। এতে হাজার হাজার মানুষ প্রখর রোদে হেঁটে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হন। টঙ্গী স্টেশন রোড মোড়, চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ড ও বোর্ড বাজার এলাকায় অবরোধ করে অবস্থান নেয় শ্রমিকরা।

জানা গেছে, টঙ্গী বিসিকের রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠান পেট্রিয়টিক ইকো লিমিটেড ও রেডিসন গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার সকালে কাজে যোগদান করতে এসে কারখানা বন্ধ পেয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। বকেয়া বেতন, ছুটি ও ঈদ বোনাসের দাবিতে একপর্যায়ে তারা বিসিকের প্রধান সড়ক বন্ধ করে অবস্থান নেয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরাও একই দাবিতে তাদের সাথে যোগ দেয়। পরে তারা বিসিক ও শিল্প এলাকার অন্যান্য পোশাক কারখানায় গিয়ে উৎপাদন বন্ধ করে শ্রমিকদেরকে বের করে নিয়ে আসে। অপর দিকে বেলা ১২টার দিকে শ্রমিকদের অপর একটি অংশ টঙ্গী চেরাগআলী মার্কেট ও বোর্ড বাজার এলাকায় অবস্থান নিয়ে আশপাশের শাখা সড়কগুলোতেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এ সময় চেরাগআলী মার্কেটের দোতলা থেকে দোকান কর্মচারীরা মোবাইলে ছবি ধারণ করায় শ্রমিকরা মার্কেটে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। বিসিকের আন্দোলনরত শ্রমিকরা টঙ্গী শিল্প এলাকার মেঘনা রোড, শহীদ সুন্দর আলী রোড, স্কুইব (বেক্্িরমকো) রোডসহ বিভিন্ন এলাকার পোশাক কারখানায় গিয়ে হামলা চালিয়ে শ্রমিকদেরকে তাদের সাথে আন্দোলনে নামতে বাধ্য করে। তবে বেশ কয়েকটি কারখানায় গিয়ে বহিরাগত শ্রমিকরা প্রতিরোধের মুখেও পড়ে। টঙ্গীর স্কুইব রোডের কাঠালদিয়া এলাকায় একটি কারখানা বন্ধ করতে গেলে সেখানকার শ্রমিক ও এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে আন্দোলনরতরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। অপর দিকে মিল বাজার শহীদ সুন্দর আলী রোডের হামীম শিল্প গোষ্ঠীর ‘দ্যাট ইস গার্মেন্টস’ নামের কারখানায় বহিরাগত শ্রমিকরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। কারখানাটির এজিএম মিজানুর রহমান জানান, বিভিন্ন অবকাঠামো ও মেশিনপত্রসহ তাদের কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

এ দিকে জিএমপি ও টঙ্গী শিল্প পুলিশ সূত্র জানায়, হা-মীম শিল্প গোষ্ঠীর কারখানায় ভাঙচুরের সময় বহিরাগত ৩৫ জন শ্রমিককে পুলিশ আটক করেছে এবং বিসিকের পেট্রিয়টিক ইকো লিমিটেড ও রেডিসন গার্মেন্ট কারখানার নিরাপত্তায় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ দিকে ঈদ বোনাস ও বেতন ভাতার দাবিতে গাজীপুর মহানগরির বোর্ড বাজার এলাকায়ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।

পেট্রিয়টিক ইকো লিমিটেড ও রেডিসন গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা জানান, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করেই বুধবার রাতে কারখানায় বন্ধের নোটিশ টানিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন। কারখানা দুটিতে নিরাপত্তা প্রহরী ছাড়া আর কাউকে তারা পাননি। কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও দায়িত্বশীলদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ অবস্থায় তারা উপায়ন্তর না পেয়ে দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নেমে আসে।

টঙ্গী শিল্প পুলিশের পরিদর্শক রাজ্জাকুল হায়দার নয়া দিগন্তকে এ বিষয়ে জানান, দিনব্যাপী আন্দোলনে ক্লান্ত শ্রমিকরা বেলা আড়াইটার দিকে মহাসড়ক ছাড়তে শুরু করে। বিকেল ৩টার পর থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং যান চলাচল শুরু হয়। হা-মীম শিল্প গোষ্ঠীর কারখানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/502134