লকডাউনের দৃশ্যটি চীনের একটি শহরের। ফাইল ছবি
১১ মে ২০২০, সোমবার, ৪:৩৭

লকডাউন তুলতেই বিপদ বাড়ল বিশ্বে

চীন, জার্মানি ও দ. কোরিয়ায় করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা * তথ্য গোপন করতে চেয়েছিল চীন

করোনায় নাকি ক্ষুধায় মৃত্যু- বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের সামনে এখন এ প্রশ্ন। লকডাউনে ঘরে থাকলে না খেয়ে মৃত্যু। আর আয়-রোজগারের জন্য বের হলে করোনায় মৃত্যুর ভয়।

লকডাউন আর অর্থনীতির চাকা এ দুটির মধ্যে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করেছে অনেক দেশ। লকডাউনের কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করে নিয়ম মেনে দোকানপাট, স্কুল-কলেজ এমনকি মদের বার ও নাইট ক্লাবও খুলে দিয়েছে কোনো কোনো দেশ। আর এতেই নতুন করে বিপদে পড়ছে বিশ্ববাসী। যেসব দেশে করোনা সংক্রমণ অনেকটা শূন্যের কোঠায় নেমেছিল সেসব দেশেও ফের শুরু হয়েছে সংক্রমণ। এর ফলে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানিতে লেগেছে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা।

নতুন এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, চীনে করোনার কবল থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন যারা তাদের ৫ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষ ফের এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। সংবাদ মাধ্যম ‘ব্লুমবার্গ’র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আর এ তথ্যই চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের চিকিৎসকদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিভাগের পরিচালক ওয়াং গুইকিয়াং জানান, লকডাউন শিথিলের সংক্রমণ বেড়েছে।

তবে বিভিন্ন অঞ্চলে করোনা মুক্ত রোগীর ফের এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার হার ভিন্ন। কোথাও ৫ শতাংশ, আবার কোথাও ১৫ শতাংশ। তাছাড়া যারা দ্বিতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের অনেকের মধ্যেই রোগের কোনো উপসর্গ ছিল না। যা বেশ উদ্বেগজনক। রোববার চীনে নতুন করে ১৪ জনের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবর দিয়েছে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। ২৮ এপ্রিলের পর একদিনে এটাই সর্বোচ্চ সংক্রমণ। অথচ আগের দিনও মাত্র একজন আক্রান্ত ছিলেন। ১০ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ নতুন আক্রান্তের দু’জন বিদেশ থেকে সংক্রমিত। বাকি ১২ জনের সংক্রমণ স্থানীয়। একজন ছাড়া প্রত্যেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রদেশ জিলিনের। অন্যজন করোনার উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশের।

এদিন জিলিন প্রদেশ শুলান শহরের করোনা ঝুঁকির মাত্রা মাঝারি থেকে সর্বোচ্চ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্যমতে, ১ মের পর সর্বোচ্চ উপসর্গহীন নতুন আক্রান্ত পাওয়া গেছে ২০ জন। তবে মৃত্যুর হার শূন্যেই আছে।

চীন চেয়েছিল মহামারীর সতর্কতা দেরিতে আসুক : মহামারী করোনা নিয়ে তথ্য গোপন করতে চেয়েছিল চীন। সে কারণে দেশটির প্রেসিডেন্ট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছিলেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে আহ্বান জানিয়েছিলেন যেন, বৈশ্বিক মহামারী সতর্কতা আরও দেরিতে জারি করা হয় এবং মানুষ থেকে মানুষে করোনার সংক্রমণের বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করা না হয়।

জার্মানির ডের স্পিজেল সাময়িকীতে দেশটির ফেডারেল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে চীন সম্পর্কে এমন বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ওই সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২১ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানের সঙ্গে আলাপ করেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সে সময়ই তিনি করোনা নিয়ে এসব তথ্য তখনই যেন প্রকাশ না করা হয় সেজন্য অনুরোধ করেছিলেন।

এমন বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসতেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফ থেকে এক বিবৃতি দেয়া হয়েছে। সেখানে এ ধরনের তথ্যকে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

দ. কোরিয়ায় নৈশক্লাব ফের বন্ধ : দক্ষিণ কোরিয়ায় গত সপ্তাহে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক অঙ্কের ঘরে। কিন্তু হঠাৎ করেই বেড়ে গেল সংক্রমণের হার, যার উৎস সিউলের নৈশক্লাবগুলো। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩৪ জন কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, যা ১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। কোরিয়ান রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (কেসিডিসি) বলেছে, পরীক্ষামূলক মূল্যায়নে দেখা গেছে ৩৪ জন নতুন রোগীর ২৬ জন স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত, বাকিরা বাইরের।

কোরিয়ান বার্তা সংস্থা দ্য ইয়নহাপ বলেছে, এক মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথমবার একদিনে ৩০ জনের বেশি করোনায় আক্রান্ত হলেন। এ সংক্রমণ ঠেকাতে ২ হাজার ১শ’র বেশি নৈশক্লাব ফের বন্ধ করেছে সিউল কর্তৃপক্ষ। কিছু দিন আগে বিধিনিষেধ শিথিল করে এসব ক্লাব খুলে দেয়া হয়েছিল।

জার্মানিতে লকডাউন শিথিলের পর বাড়ছে সংক্রমণ : লকডাউন শিথিলের কয়েক দিনের মাথায় জার্মানিতে বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। দেশটির কর্মকর্তাদের আশঙ্কা এখনই পদক্ষেপ না নিলে মহামারী নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় ৬৬৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এতে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১ লাখ ৭১ হাজার ৩২৪। মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৫৪৯ জনের।

অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে ১৬টি অঙ্গরাজ্যের নেতাদের চাপের মুখে গত সপ্তাহে লকডাউন শিথিল করেন অ্যাঞ্জেলা মার্কেল। খুলে দেয়া হয় দোকানপাট ও স্কুল-কলেজ।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/305982/