১০ মে ২০২০, রবিবার, ৫:১৩

ঈদের আগেই ট্রেন চলাচল

স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের শর্তারোপ প্রস্তুত থাকতে পরিবহনসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে রেলের নির্দেশনা

ঈদের আগেই যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। এ জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে রেলওয়ে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিধি মেনে ট্রেন চালানোর নির্দেশনা পাওয়ার পর দেশের সব স্টেশন ও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে রেলের পরিবহন ও বাণিজ্যিক বিভাগ।

জানা গেছে, রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেল ভবনের নির্দেশনার পর গত বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনে চিঠি পাঠান বাণিজ্যিক বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও-ঢাকা) মো. শওকত জামিল মোহসীর পাঠানো পত্রে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ঈদের আগে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়। চিঠিতে ট্রেনগুলো জীবাণুমুক্ত করা ছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের আগে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলে প্রস্তুত থাকতে পরিবহনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

রেলের কর্মকর্তারা জানান, এখনই সব ট্রেন চালানোর মতো পরিস্থিতি নেই। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মেইল ট্রেনসহ কয়েকটি ট্রেন চালানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলেও নির্ধারিত কয়েকটি ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা হচ্ছে। তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেন চলাচলের অনুমতি মিলতে পারে। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই স্ট্যান্ডিং টিকিট অর্থাৎ আসন সংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হবে না। তবে সবকিছু নির্ভর করছে মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত নির্দেশনা আসার ওপর।

জনস্বার্থে অতীব জরুরি রেলের পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের শর্তে ঈদুল ফিতরের আগে সীমিত পরিসরে ট্রেন চলাচলের অনুমতি আসতে পারে। ফলে অনবোর্ড পরিচালিত ট্রেনগুলোর দরজা-জানালা, হাতল, সিট, হেড বেল্ট কভার, টয়লেট, মেঝে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে। ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানকে খাবার গাড়ি সুষ্ঠুভাবে পরিচ্ছন্ন করে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে মানসম্মত খাবার পরিবেশন করতে হবে। ট্রেনে ভ্রমণকালে প্রত্যেক যাত্রীকে আবশ্যিকভাবে মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহারে স্টেশনগুলোর মাইকে ঘন ঘন ঘোষণা দিতে হবে, বড় অক্ষরে লিখে কাউন্টারের সামনে সাঁটিয়ে দিতে হবে। ইস্যুকৃত টিকিটের ওপর ‘ট্রেনে ভ্রমণকালে প্রত্যেক যাত্রীকে আবশ্যিকভাবে মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে’ মোটা সিল মেরে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। সর্বোপরি স্টেশনের দায়িত্ব পালনকালে প্রত্যেক কর্মচারীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রায় দেড় মাস ধরে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে একাধিকবার ট্রেন চালানোর প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু দফায় দফায় সাধারণ ছুটি বৃদ্ধির কারণে ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়। তবে এবার ঈদের আগে হাতেগোনা কয়েকটি ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে অবশ্যই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া রেলের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ১৪টি শর্ত পালন সাপেক্ষে ট্রেন চলাচলের অনুমতি আসতে যাচ্ছে।

এর আগে গত ১ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে জনস্বার্থে ও সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার স্বার্থে রিকশা-ভ্যানসহ যানবাহন, রেল ও বাস সার্ভিস চালু করা হবে বলে জানানো হয়। মূলত এ প্রজ্ঞাপনের পর ট্রেন সার্ভিস চালুর বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন রেলের শীর্ষ কর্মকর্তারা। ওই বৈঠকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে সীমিত পরিসরে যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তবে সাধারণ ছুটি বাড়ানোর কারণে সেটি বাস্তবায়ন হয়নি ওই সময়ে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, মার্চের শেষ দিকে ৪৯ ও ৫০ নং বলাকা (ঢাকা-জারিয়াজাঞ্জাইল), ৫১ আপ ও ৫২ ডাউন (জামালপুর কমিউটার), ৩৩ ও ৩৬ নং তিতাস (ঢাকা-আখাউড়া), ৩৪ ও ৩৫ নং তিতাস (ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ট্রেন চালু করতে চেয়েছিল রেলওয়ে। এছাড়াও সাগরিকা এক্সপ্রেস (এক্সপ্রেস ট্রেন) অথবা মেঘনা এক্সপ্রেস (আন্তঃনগর ট্রেন) ট্রেনের যেকোনো একটি চালু হতে পারে। এছাড়াও পূর্বাঞ্চলের ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের চার জোড়া আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে দুই জোড়া চালু করার বিষয়ে নির্দেশনাও দেয়া হয় পরিবহন বিভাগকে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। এর আগে ২৪ মার্চ সন্ধ্যা থেকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। খাদ্যশস্য, জ্বালানি ও কনটেইনার ছাড়াও ১ মে থেকে চালানো হচ্ছে পার্সেল ট্রেন। যদিও তাতে উল্লেখযোগ্য সারা মেলেনি।

https://www.dailyinqilab.com/article/290619