১০ মে ২০২০, রবিবার, ৫:০৪

প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বৃহস্পতিবার

কর্মহীন ৫০ লাখ পরিবার পাচ্ছে ১২৫০ কোটি টাকা

প্রতি পরিবার পাবে ২৫শ’ টাকা, পাঠানো হবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে * জনপ্রতিনিধিদের তালিকার ১০ শতাংশ যাচাইয়ের নির্দেশ * আজ টাকা ছাড় করতে পারে অর্থ মন্ত্রণালয়

করোনাভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া হতদরিদ্র ৫০ লাখ পরিবার নগদ সহায়তা হিসেবে পাচ্ছেন ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। প্রতি পরিবার পাবে ২ হাজার ৫শ’ টাকা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এই অর্থ পাঠানো হবে। সবকিছু অনুকূলে থাকলে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। আজ রোববার অর্থ বিভাগ থেকে উল্লেখিত অর্থ ছাড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে প্রকৃত উপকারভোগীদের কাছে পৌঁছাতে জনপ্রতিনিধিদের তৈরি তালিকার ১০ শতাংশ যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। সব বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ নির্দেশ দেয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব (সিনিয়র) মো. শাহ কামাল শনিবার যুগান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ৫০ লাখ প্রকৃত প্রাপ্য পরিবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে উপকারভোগীর মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রের বিধান রাখা হয়েছে যাতে অনিয়ম না হয়। এ ছাড়া তাদের পাঠানো তালিকা ১০ শতাংশ হারে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এতে অনিয়ম পাওয়া গেলে তালিকা রি-ভিজিট করা হবে। তিনি আরও বলেন, এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সব কিছু দেখাশোনা করা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট) হাবিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী খুব শিগগিরই এই টাকা ছাড় করা হবে। বিষয়টি সরাসরি তদারক করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এই কর্মসূচির আওতায় পরিবারপ্রতি ৩-৪ জন হিসাব ধরে ৫০ লাখ পরিবারকে এই অর্থ সহায়তা দেয়া হবে। প্রত্যেক পরিবার পাবে ২ হাজার ৫শ’ টাকা। মোবাইলে ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উপকারভোগীদের কাছে এ অর্থ পৌঁছে দেয়া হবে।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এই কর্মসূচি উদ্বোধনের জন্য ১৪ মে বা বৃহস্পতিবার নির্ধারণ করা হয়েছে। সবকিছু অনুকূলে থাকলে প্রধানমন্ত্রী নিজে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ বিভাগকে জানানো হয়। এটি বাস্তবায়নে অর্থ বিভাগের ব্যয় হবে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। পুরো অর্থ দেয়া হবে চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের বাজেটের অপ্রত্যাশিত খাত থেকে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রান্তিক মানুষদের সহায়তা করার ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করে। এ ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন ক্ষতিগ্রস্ত কুলি, দিনমজুর, হকার, শ্রমিক, রিকশা ও ভ্যানচালক, নিু আয়ের উপকারভোগীদের চিহ্নিত করতে পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, উপজেলার চেয়ারম্যান-মেম্বার এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কাউন্সিলর ও মেয়রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সব মিলিয়ে ৫০ লাখ পরিবারের একটি তালিকা করা হয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে বিশাল এই তালিকা প্রণয়নে কোনো ধরনের স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম হচ্ছে কিনা। কিংবা প্রকৃত উপকারভোগীরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কিনা। এই কর্মসূচিতে প্রকৃত অনেক ভুক্তভোগী বাদ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের আগেই জনপ্রতিনিধিদের তৈরি করা তালিকা ১০ শতাংশ হারে যাচাই-বাছাই করতে একটি নির্দেশনা জারি করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, করোনাভাইরাসজনিত দুর্যোগে মানবিক সহায়তার কার্যক্রমের আওতায় জেলা, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে যেসব উপকারভোগী পরিবারের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে সে তালিকার ১০ শতাংশ যাচাই-বাছাইয়ের সত্যয়ন সনদ প্রদানের প্রয়োজন। এ অবস্থায় সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে তালিকা তৈরি করবেন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা। ওই তালিকার কমপক্ষে ১০ শতাংশ যাচাই-বাছাই করে সত্যয়ন সনদ দেবেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। একইভাবে উপজেলার ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের প্রস্তুতকৃত তালিকার ১০ শতাংশ যাচাই-বাছাই করে প্রত্যয়ন সনদ দেবেন ট্যাগ অফিসার। ওই প্রত্যয়ন সনদে স্বাক্ষর করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। পাশাপাশি জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পৌরসভার তৈরি করা তালিকা ১০ শতাংশ যাচাই-বাছাই করে সনদ দেবে। এক্ষেত্রে সহায়তা করবে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা। আজ রোববারের মধ্যে এ তালিকা যাচাইয়ের কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের হিসেবে করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের মানুষের আয়-রোজগার বা ক্রয়ক্ষমতায় ২০ শতাংশ আঘাত করলে নতুন করে ২ কোটি মানুষ হতদরিদ্র ও দরিদ্র রেখা সীমার নিচে নেমে আসবে। আঘাতের পরিমাণ যদি ৫ শতাংশও হয় এতে ৪০ লাখ মানুষ তাদের আগের অবস্থান থেকে ছিটকে পড়বে। এসব মানুষ চলে আসবে হতদরিদ্র ও দারিদ্র্যের তালিকায়। বর্তমানে দেশে দৈনিক ২ ডলারের নিচে আয় করছে এমন জনগোষ্ঠী ২ কোটি ৩৭ লাখ বা ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এরা হতদরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু করোনার ২০ শতাংশ মানুষের আয়-রোজগার বা ক্রয়ক্ষমতায় আঘাতে হতদরিদ্রের হার আরও ৬ শতাংশ বাড়বে। অর্থাৎ নতুন করে আরও ৯৬ লাখ মানুষ হতদরিদ্রের তালিকায় যুক্ত হবে। সূত্র আরও জানায়, ১ দশমিক ৯০ ডলারের ওপরে দৈনিক আয় করছে এমন মানুষের সংখ্যা ৮ কোটি ৮০ লাখ (৫৫ শতাংশ)। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে বলা হয়েছে, ২০ শতাংশ আয়ে আঘাত করলে এই হার ৫৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬২ শতাংশে উঠবে। ওই হিসেবে নতুন করে দরিদ্র হবে আরও ১ কোটি ১২ লাখ লোক। ফলে করোনার প্রতিঘাতে নতুন করে ২ কোটি ৮ লাখ মানুষ দরিদ্র ও হতদরিদ্রের তালিকায় নাম লেখাবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/305678/