৮ মে ২০২০, শুক্রবার, ৩:৩৪

এপ্রিলের বেতন বিলম্বের জটিলতা হবে বড় ইস্যু

পোশাক খাতে অস্থিরতা বাড়ার শঙ্কা

বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে রাস্তা অবরোধসহ আন্দোলন বিক্ষোভে শামিল হচ্ছেন গার্মেন্ট শ্রমিকরা। এপ্রিল মাসের বেতন তো দূরের কথা, অনেকে এখনও মার্চ মাসের বেতন পাননি। এর মধ্যে কমপ্লায়েন্স প্রতিপালনের শর্ত হিসেবে মাসের সাত কার্যদিবসের মধ্যে আগের মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হল, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্যাকেজের অর্থ কোনো গার্মেন্ট মালিক বা শ্রমিক পাননি। ইতোমধ্যে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পার হয়েছে। তাই শ্রমিক-কর্মচারীদের সময়মতো বেতন-ভাতা দেয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বেশির ভাগ শিল্প মালিক। এর মধ্যে বড় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে সাব-কন্ট্রাক্টে থাকা প্রায় ৪ হাজার কারখানা। এসব কারখানা বিজিএমইএ সদস্য নয়। ফলে ঋণ প্যাকেজ থেকে এখানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পাওয়ার সুযোগ নেই। এই যখন অবস্থা তখন ঈদের আগে বেতন-ভাতার দাবিতে শ্রমিকদের চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বড় পরিসরে রাস্তায় গড়াতে পারে। এমন শঙ্কার বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গার্মেন্ট সেক্টরের ১০ জন নেতা শ্রমিকদের উসকে দিয়ে রাস্তায় নামানোর চেষ্টা করছেন।

এদিকে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত গার্মেন্টের পরিসংখ্যান নিয়েও রয়েছে নানান বিভ্রান্তি। বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে মুখে যা বলা হয়, বাস্তবের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। এছাড়া শিল্প পুলিশের ডাটার সঙ্গে রয়েছে বিস্তর ফারাক। অনেকে মনে করেন, গার্মেন্ট কারখানা ও শ্রমিক সংখ্যার প্রকৃত তথ্য নিয়ে শুরু থেকেই এক ধরনের লুকোচুরি করা হয়। করোনা সংকটের উত্তাপে যার গোমর এবার অনেকটা ফাঁস হতে চলেছে। তাদের মতে, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। কেননা যে কোনো সংকট ভালোভাবে মোকাবেলা করতে হলে সরকারের কাছে কারখানা ও শ্রমিক সংখ্যা নিয়ে সঠিক তথ্য থাকাটা জরুরি।

শিল্প পুলিশের তথ্য মতে, দেশে মোট ৭ হাজার ৬০২টি পোশাক কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৮৮২টি। যদিও বিজিএমইএ’র ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য মতে, সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ৪ হাজার ৩৭৬টি। তবে সংগঠনটি বলছে, এসবের মধ্যে সচল আছে ২ হাজার ২৭৪টি। অন্যদিকে বিকেএমইএ সদস্যভুক্ত কারখানা রয়েছে এক হাজার ১০১টি, বিটিএমএ’র কারখানা ৩৮৯টি এবং বেপজার ভেতরে রয়েছে ৩৬৪টি। কিন্তু এর বাইরে আরও ৩ হাজার ৮৬৬টি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানা সাধারণত বড় কারখানা থেকে অর্ডার নিয়ে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করে।

কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে বিদেশি ক্রেতা ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সাব-কন্ট্রাক্টিং অনুমোদন না করলেও গার্মেন্ট মালিকরা নিজেদের স্বার্থে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করায়, যা নিয়মবহির্ভূত।

প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বুধবার পর্যন্ত বিজিএমইএ’র ১ হাজার ৮৮২টি কারখানার মধ্যে এক হাজার ২৩২টি কারখানা খুলেছে। কিন্তু সাব-কন্ট্রাক্ট বা বিজিএমইএ-বিকেএমইএ’র সদস্যবহির্ভূত ৩ হাজার ৮৬৬টি কারখানার মধ্যে খুলেছে মাত্র এক হাজার ২৮৭টি। বাকি আড়াই হাজারের বেশি কারখানা বন্ধ আছে। অর্থাৎ অর্ডার না থাকায় এসব কারখানা খোলেনি মালিকরা, তাই শ্রমিকরাও বেকার বসে আছে।

এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানতে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হকের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। মুঠোফোনে কথা বলা সম্ভব না হওয়ায় ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। এর জবাবে বিজিএমইএ’র জনসংযোগ কমিটির চেয়ারম্যান খান মনিরুল আলম জানান, ‘শুধু সদস্যভুক্ত কারখানাগুলো নিয়ে বিজিএমইএ কাজ করে। এর বাইরে অন্য কারখানার সমস্যা দেখার দায়িত্ব বিজিএমইএ’র নয়।’

কেসস্টাডি : নারায়ণগঞ্জের বিসিকে অবস্থিত স্কাইলাইন নিট ফ্যাশন একটি রফতানিমুখী পোশাক কারখানা। কিন্তু কারখানাটি বিজিএমইএ বা বিকেএমইএ’র সদস্য নয় বিধায় কারখানার মালিক সরকার ঘোষিত ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে ঋণ নিতে পারছে না। ধারদেনা করে ফেব্র“য়ারি মাসে শ্রমিকদের বেতন দিয়েছেন। মার্চ-এপ্রিলের বেতন কীভাবে দেবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে মালিকের।

এ কারখানার মালিক মিশেল শেখ বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, তিনি সিএন্ডএফের মাধ্যমে ফিলিপাইনে পোশাক রফতানি করেন। কিন্তু করোনা সংকটে রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন বেকায়দায় পড়েছেন। শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছেন না। আর সরকারের কাছ থেকেও কোনো সহায়তা পাননি। তিনি জানান, শুধু নারায়ণগঞ্জের বিসিকে এ ধরনের ২৫টি কারখানা আছে। যাতে ৫ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করে। প্রত্যেক মালিকই দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন।

এ তো গেল ছোট কারখানার কথা। সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করা কারখানাগুলো এপ্রিলের বেতন-ভাতা দিতে পারেনি। উপরন্তু বেড়েছে করোনার প্রকোপ। এ কারণে শ্রমিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাই ঈদের আগে তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। কারণ ছোট ও সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করা কারখানা রফতানিমুখী না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তহবিল থেকে এ ধরনের কারখানা সহায়তা পাবে না। আর ঋণ সহায়তা না পেলে শ্রমিকদের এপ্রিলের বেতন দিতে পারবে না। ইতোমধ্যেই শ্রমিক অসন্তোষের শঙ্কার কথা জানিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে সরকারের উচ্চ মহলে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে গার্মেন্ট সেক্টরে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারেন অন্তত ১০ জন নেতা। এদের নজরদারিতে আনার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সুপারিশ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

বিকেএমইএ’র জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, আমলাতান্ত্রিক মারপ্যাঁচে পড়ে বিজিএমইএ-বিকেএমইএ’র অনেক সদস্যই তহবিল থেকে টাকা পাচ্ছে না। এই দুই সংগঠনের বাইরে যেসব কারখানা আছে তারা শ্রমিকদের নিয়ে বিপদে পড়বে, বেতন দিতে পারবে না। তখন শ্রমিকরা রাস্তায় নামলে সবাই বিজিএমইএ-বিকএমইএ-কে দোষারোপ করবে। তাই তাদের বিষয়টি বিবেচনা করতে সরকারের উচ্চ মহলে জানানো হয়েছে।

করোনার প্রভাব মোকাবেলায় সরকার রফতানিমুখী পোশাক খাতকে ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল দিয়েছে। এ তহবিল থেকে শুধু বিজেএমইএ এবং বিকেএমইএ-র সদস্যরা ঋণ পাবেন, যা দিয়ে শুধু কারখানার শ্রমিকদের বেতন দেয়া হবে। এর বাইরে টেক্সটাইল খাত ও প্রচ্ছন্ন রফতানিকারক এক্সেসরিজ শিল্পও ওই তহবিল থেকে টাকা পাবে না। অর্থাৎ বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-র বাইরে অন্য কারখানার শ্রমিকদের জন্য বেতন দেয়া হবে না। প্যাকেজ ঘোষণার সময় রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়ার কথা বলা হলেও পরবর্তী সময়ে দফায় দফায় নীতিমালা সংশোধন করে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়।

জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংকটে শ্রমিকদের বেতন দিতে সরকার যে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল করেছে, সেখান থেকে ঋণ নিতে আবেদন করেছেন ২ হাজার ২০০ কারখানার মালিক। এর মধ্যে বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৬১৫টি; বিকেএমইএভুক্ত ৫৫০টি। বাকি ৩৫টি ইপিজেড এলাকায় অবস্থিত পোশাক কারখানা। ৪৬টি ব্যাংকের মাধ্যমে এই কারখানাগুলোর মালিকদের ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ঋণ পেতে আবেদন জমা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। আবেদনের বিপরীতে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হিসাবে ২ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হযেছে। এখন ব্যাংকগুলো এসব অর্থ শ্রমিক-কর্মচারীদের হিসাবে ছাড় করবে। কিন্তু সব শ্রমিকের অ্যাকাউন্ট না থাকা ও বিভিন্ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকায় টাকা ছাড় করা নিয়ে বড় সংকট দেখা দিয়েছে। তবে গার্মেন্ট মালিকদের অনেকে জানিয়েছেন, কোনো ঋণ এখন পর্যন্ত তারা পাননি। যেহেতু এটি ঋণ এবং দিতে হবে শিল্প মালিককে, তাই এই ঋণের অর্থ তো আগে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের হিসাবে ঢুকতে হবে। তারপর সরকার বা ব্যাংক তার গাইডলাইন অনুযায়ী বিলি-বণ্টন করবে। কিন্তু কোনো কিছুই এখনও দৃশ্যমান নয়। অর্থাৎ মাসের প্রথম সপ্তাহ শেষ। ১০ তারিখ পার হলে তো বেতন না পাওয়ার আন্দোলন রাস্তায় গড়াবে। তখন কী হবে জানি না।

জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি যুগান্তরকে বলেন, এখনও অনেক কারখানায় মার্চ মাসের বেতন দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করা কারখানা বেতন ও ঈদ বোনাস দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। শুনেছি, এসএমই প্রণোদনা তহবিল থেকে এ ধরনের মালিকদের ঋণ দেয়া হবে। কিন্তু সেটা কতদিনে তারা পাবেন, আর শ্রমিকদের কখন দেবেন, তা দেখার বিষয়। শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

মদদ ও উসকানিদাতাদের নজরদারিতে রাখার সুপারিশ : সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে ঈদুল ফিতরকে ঘিরে গার্মেন্ট সেক্টরে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে তৎপর রয়েছে ১০ শ্রমিক নেতা। শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে তারা মে মাসের বেতন এবং ঈদ বোনাস একসঙ্গে প্রদানের জন্য আন্দোলনে নামাতে পারেন। ওই নেতারা গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন, সম্মিলিত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সঙ্গে জড়িত। এদের সবাইকে নজরদারিতে রাখতে হবে। প্রতিবেদনের একটি কপি যুগান্তরের হাতে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাঁদ দেখাসাপেক্ষ ২৪ মে ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হতে পারে। ঈদের আগে মাস পূর্ণ না হওয়ায় শ্রমিকদের শুধু ঈদ বোনাস দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন গার্মেন্ট মালিকরা। কিন্তু শ্রমিক নেতারা বেতন-বোনাস একত্রে দেয়ার জন্য শ্রমিকদের আন্দোলনে নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে অন্দোলনে নামার প্রস্তুতির বিষয়টি যুগান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট নেতারাও। তবে তারা শ্রমিকদের ভুল বোঝানোর বিষয়টি অস্বীকার করেন।

জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি আমিরুল ইসলাম বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে কেউ অসচেতন নয়। সবাই সচেতন। তাই কাউকে ভুল বোঝানোর সুযোগ নেই। শ্রমিকরা যদি তাদের ন্যায্য অধিকার না পায়, তাহলে তারা আন্দোলনে নামতেই পারেন।

গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোশরেফা মিশু যুগান্তরকে বলেন, শ্রমিকদের অবশ্যই মে মাসের বেতন এবং ঈদ বোনাস একসঙ্গে দিতে হবে। আমি আশা করি, মালিকরা এটা করবেন। আর যদি তা না করেন, তাহলে শ্রমিকরা রাস্তায় নামবে। আন্দোলন করবে। এরই মধ্যে কোনো কোনো জায়গায় আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশে লকডাউন চলাকালীন গার্মেন্ট শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করে কিছু মালিক উল্টো শ্রমিক ছাঁটাই করছেন, যা অনভিপ্রেত। উদাহরণস্বরূপ আশুলিয়ার ইউসুফ মার্কেটে অবস্থিত সিগমা ফ্যাশন লিমিটেড। এখানে মোট শ্রমিক সংখ্যা ১৪০০ জন। ২৫ এপ্রিল ওই কারখানার ৭০৯ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। এ নিয়ে কারখানার গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। যদিও বিজিএমইএ, বিকেএমইএ প্রকাশ্যে বলেছে, তারা করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করবে না। শ্রমিক ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে গার্মেন্ট সেক্টরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা।

সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকদের কারখানাগুলোয় কাজ করার কথা। বেশকিছু গার্মেন্ট তাদের মেশিনারিজ একধাপ সরিয়ে সামাজিক দূরত্বের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তবে কিছু কিছু কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এরূপ কর্মকাণ্ড ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, শ্রমিকদের আবাসস্থল এবং চলাচলের পথে কারখানার মালিকদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। শ্রমিকরা নিজেদের মতো চলাচল ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের কারণে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।

প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে-শ্রমিকদের সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি পালনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারখানার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের আনানেয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত। যেসব কারখানা মালিকের সামর্থ্য আছে, তাদের উচিত শ্রমিকদের নিজস্ব আবাসনের জন্য ডরমিটোরির ব্যবস্থা করা। করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের উপস্থিতি যেন কোনোভাবেই ৫০ শতাংশের বেশি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। যেসব শ্রমিক গ্রামের বাড়িতে আছে তারা যাতে কারখানায় আসার সুযোগ না পায়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি সন্দেহভাজন শ্রমিক নেতাদের নজরদারিতে রাখতে হবে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বিষয়ে বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কেউ শ্রমিকদের ইন্ধন না দিলে পোশাক খাতে অসন্তোষ ঘটবে না। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কিছু শ্রমিক নেতা এ খাতকে অস্থির করার অপতৎপরতা চালাচ্ছেন। অতীতেও তারা শ্রমিক অসন্তোষ ঘটিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের সংকটকালে যদি কেউ শ্রমিকদের মদদ ও উসকানি দিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, তাহলে সরকারের উচিত হবে কঠোর হস্তে তাদের দমন করা।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/305206/