৭ মে ২০২০, বৃহস্পতিবার, ২:৫৫

গবেষণা প্রতিবেদন

দুর্বিষহ উত্তাপের শিকার হবেন বাংলাদেশের ৯০ লাখ মানুষ

আগামী ৫০ বছরের মধ্যে দুর্বিষহ উত্তাপের শিকার হবেন বাংলাদেশের প্রায় ৯০ লাখ মানুষ। ভারত ও পাকিস্তানে এর কবলে পড়বেন যথাক্রমে ১২০ কোটি ও প্রায় ২ কোটি মানুষ। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ হুশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, এর প্রভাবে বিশ্বের অনেক জনবহুল অঞ্চলের তাপমাত্রা মানুষের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠবে।

উত্তাপের যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে অনেকেই নিজের বাসস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হবেন। আর যারা এ অবস্থায় কোথাও চলে যেতে পারবেন না, তাদের প্রচণ্ড উত্তাপের কারণে দীর্ঘ ক্ষরা, অনাহার এবং অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়তে হবে।

প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ বৃদ্ধির প্রবণতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকলে, বর্তমানে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বসবাস করেন এমন অঞ্চলের তাপমাত্রা ২০৭০ সাল নাগাদ সাহারা মরুভূমি অঞ্চলের সবচেয়ে উত্তপ্ত এলাকাগুলোর মতোই হবে।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইন্দোনেশিয়া এবং আফ্রিকার সুদানের প্রায় শত কোটি মানুষের ওপর ওই ভয়াবহ উত্তাপ হানা দেবে। এর মধ্যে ভারতে ১২০ কোটি, নাইজেরিয়ায় ৪ কোটি ৮০ লাখ, পাকিস্তানে ১ কোটি ৮০ লাখ, ইন্দোনেশিয়ায় ১ কোটি ৪০ লাখ, সুদানে ১ কোটি, নাইজার, ফিলিপিনস ও বাংলাদেশে ৯০ লাখ করে এবং থাইল্যান্ডে ৬০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হবেন।

 

গবেষণায় উঠে এসেছে, সবচেয়ে ইতিবাচক পরিস্থিতিতেও ১২০ কোটি মানুষ অপেক্ষাকৃত বৈরী জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হতে চলেছেন। বিগত ৬ হাজার বছর ধরে আবহাওয়ার মৌসুমি পালাবদলের জেরে উষ্ণতা হ্রাস-বৃদ্ধির যে চক্র মানবজাতি উপভোগ করেছে, সেটাকে ভাঙবে জলবায়ু পরিবর্তন।

এসব তথ্য উঠে আসায় গবেষণাপত্রের লেখকরা নিজেরাই ব্যাপক মানসিক উদ্বেগে পড়েছেন বলে জানান। কারণ, মানবজাতির অস্তিত্ব এত সহজে বিপন্ন হতে পারে, এমনটা তাদের কল্পনার বাইরে ছিল।

তাদেরই একজন এক্সিটার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী টিম লেনটন বলেন, গবেষণায় উঠে আসা আসন্ন পরিবর্তন আমাকে বাকরুদ্ধ করেছে। প্রথম যখন আমি তাপমাত্রার তথ্যসারণি দেখি তখন রীতিমতো দু’বার তা পরীক্ষা করে দেখেছি। এ পরিবর্তন আসলে মহাদুর্যোগেরই অপর নাম, যা এবার আমাদের বাসস্থানের দিকে শক্ত আঘাত হেনেছে। এটা মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টির হুমকি দিচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনকে শুধু পদার্থ বিজ্ঞান বা অর্থনৈতিক প্রভাবের চোখে না দেখে সাম্প্রতিকতম গবেষণায় একে মানবজাতির বসবাসের পরিবেশে তা কেমন প্রভাব ফেলবে সেটাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। যেসব অঞ্চলে বাৎসরিক তাপমাত্রা গড়ে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস মূলত সেসব অঞ্চলেই দীর্ঘদিন ধরে মানুষের বসতি গড়ে উঠেছে।

অর্থাৎ বসবাসের জন্য এমন তাপমাত্রাই মানুষের স্বাস্থ্য এবং খাদ্য উৎপাদনের পক্ষে সহনীয়। কিন্তু তাপমাত্রার এ হাজার হাজার বছর স্থায়িত্ব এখন বদলে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত কমছে অনুকূল তাপমাত্রার আওতায় থাকা অঞ্চলের পরিমাণও। ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষকে এখন ‘প্রাণসংহারক’ তাপমাত্রায় নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে।

মানবজাতি ডাঙ্গায় বসবাস করায় ঝুঁকির মাত্রাও বেশি। কারণ সমুদ্রের তুলনায় স্থলভাগের তাপমাত্রা উচ্চগতিতে বাড়ছে। পাশাপাশি আগামী দিনে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা বাড়বে আফ্রিকা এবং এশিয়ার উষ্ণতম অঞ্চলগুলোতে।

জনসংখ্যার ঘনত্ব, প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থানের বিপর্যয় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসময় সাড়ে ৭ ডিগ্রি পর্যন্ত অতিরিক্ত তাপ বাড়তে পারে। অবশ্য বিশ্বের তাপমাত্রা যখন ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে, শুধু তখনই ভূপৃষ্ঠে সাড়ে ৭ ডিগ্রি বাড়তি উত্তাপের কবলে পড়তে চলেছে মানুষ।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/304920/