করোনাভাইরাসে চলমান সাধারণ ছুটির কারণে পাঁচটি পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এগুলো হচ্ছে - স্থগিত রাখা এইচএসসি, আগামী নভেম্বরে নির্ধারিত পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির দুই সমাপনী এবং আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা।
পরিস্থিতির উন্নতি হলে জুনের মধ্যে নেয়া হবে স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা। কিন্তু পিছিয়ে যেতে পারে আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। আর পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির দুই সমাপনী বা পিইসি-জেএসসি পরীক্ষা সময়মতো নেয়া হলেও কাটছাঁট করতে হবে সিলেবাস। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।
আরও জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় ৪১ দিন বন্ধ রাখার পর এসএসসি পরীক্ষার ফল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে ফল প্রকাশের লক্ষ্য নিয়ে এই কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে। বুধবার দেশের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডে শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর ডেটাবেজে ইনপুট দেয়ার কাজ শুরু হয়।
পাশাপাশি যেসব প্রধান পরীক্ষকের কাছ থেকে নম্বর এখনও বোর্ডে পৌঁছায়নি তাদের তা ডাকঘরের মাধ্যমে পাঠাতে বলা হয়েছে। কাজ নিরবচ্ছিন্ন সম্পন্নের জন্য কর্মকর্তা ও কর্মীদের বোর্ডের ভেতরেই থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এখন পর্যন্ত সৃষ্ট পরিস্থিতি অনুযায়ী আগামী ৩০ মে পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি থাকছে। এতে আড়াই মাস শ্রেণি কার্যক্রম থেকে শিক্ষার্থীরা দূরে আছে। কিন্তু এরপরও যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়, সে ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হতে পারে। যদিও আমরা বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইতোমধ্যে তিনটি বিকল্প নির্ধারণ করে রেখেছি। সেগুলো হচ্ছে : যদি জুনে কার্যক্রম শুরু করা যায় তাহলে ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে। আর যদি জুলাই বা আগস্টে শুরু করতে হয়, তাহলে ক্ষয়ক্ষতি কোন পথে পোষানো হবে, সেটা ধরে আরও দুটি বিকল্প করা হয়েছে। যদি জুনেই শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা যায় তাহলে সংকট আমরা সহজেই উৎরাতে পারব। কিন্তু জুলাই বা আগস্টে শুরু করতে হলে বা সেটি যদি সেপ্টেম্বরে গড়ায় তাহলে সংকট গভীর হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক যুগান্তরকে বলেন, জুনে যদি আমরা শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারি, তাহলে ক্ষতি পোষাতে বেশি বেগ পেতে হবে না। কর্মঘণ্টা বাড়িয়ে এবং কিছু ঐচ্ছিক ছুটি হ্রাস করে তা পোষানো যাবে। বিশেষ করে জেএসসি পরীক্ষা গ্রহণ এবং ২০২১ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের তেমন একটা ক্ষতি হবে না। ইতোমধ্যে তাদের প্রিটেস্ট পরীক্ষা চলে গেছে। বাড়তি ক্লাসের ব্যবস্থা করে যথাসময়ে এখন টেস্ট পরীক্ষা নেয়া যাবে। কিন্তু ছুটি যদি জুলাই আর আগস্ট বা আরও বেশি গড়ায় তাহলে সমস্যা হয়ে যাবে।
তিনি জানান, শিক্ষক ও শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ নিয়ে আমাদের আলোচনা চলছে। ছুটি বেড়ে গেলে বড় সমস্যা হবে জেএসসি পরীক্ষার। এ ক্ষেত্রে আমরা ১৫ মার্চ পর্যন্ত যতটুকু পড়িয়েছি এবং পরীক্ষার আগ পর্যন্ত যা পড়াতে পারব তার মধ্যে নভেম্বরেই পরীক্ষা নেব। কেননা, এক বছর মেয়াদি সেশনের পরীক্ষা পেছানো যাবে না। আর এসএসসি-এইচএসসির সিলেবাস ছোট করা যায় না। গোটা বই থেকেই পরীক্ষা নেয়ার স্বার্থে প্রয়োজনে পরীক্ষা পেছাতে হবে। সে ক্ষেত্রে ২০২১ সালের ফেব্র“য়ারিতে এসএসসি আর এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা হবে না। হয়তো পেছাবে।
এদিকে বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে চলমান সাধারণ ছুটি আর না বাড়ানো হলে মধ্যজুনে স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর চিন্তাভাবনা চলছে। ১৬ মে’র পর বোর্ডগুলো পরীক্ষার সময়সূচি তৈরি করবে। আর ছুটি বাড়ানো হলে ঈদের ছুটির পর সময়সূচি তৈরি করা হবে। সে ক্ষেত্রে জুনের শেষের দিকে শুরু হতে পারে এই পরীক্ষা।
এসএসসির ফল তৈরির কাজ শুরু : এদিকে বুধবার দেশের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডে এসএসসির ফল তেরির কাজ শুরু হয়েছে।
চলতি মে মাসের শেষের দিকে বা ২৭ তারিখের পর এই ফল প্রকাশের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশের বোর্ডগুলো পরীক্ষকদের কাছে জমা থাকা পরীক্ষার উত্তরপত্রের নম্বর বা ওএমআর শিট জমা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের স্থানীয় ডাকঘরের মাধ্যমে ১০ মে’র মধ্যে বোর্ড অফিসে পাঠাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর যাদের সুযোগ আছে তাদেরকে সরাসরি বোর্ডে এসে উত্তরপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। মে মাসের শেষের দিকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশের চিন্তা আছে বলে জানান ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান।
জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান সিস্টেম অ্যানালিস্ট প্রকৌশলী মনজুরুল কবীর যুগান্তরকে বলেন, মঙ্গল-বুধবার আমরা ঢাকা শহরের মধ্যে থাকা ওএমআর শিট সংগ্রহ করে ডেটা এন্ট্রির কাজ শুরু করেছি। ঢাকার বাইরের পরীক্ষকরা ডাকঘরের মাধ্যমে পাঠাবেন। এখন আমরা যদি এই সার্ভিস দ্রুত পাই তাহলে কাজ এগিয়ে যাবে।
মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কামালউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, তারাও ডাকঘরের মাধ্যমে ওএমআর শিট পাঠাতে বলেছেন প্রধান পরীক্ষকদের। তারা মাদ্রাসা বোর্ডের বিভাগীয় আঞ্চলিক অফিসে পাঠাবেন। সেখান থেকে হাতে হাতে বোর্ড অফিসে কর্মকর্তারা নিয়ে আসবেন তা। তিনি বলেন, এ ছাড়া কাজ সুচারুরূপে সম্পন্নের জন্য বোর্ডের ভেতরে কম্পিউটার সেলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেননা, বাইরে গেলে আক্রান্তের ভয় থাকে। দৈনিক পরীক্ষা করতে হবে। একজন আক্রান্ত হলেই গোটা বোর্ড লকডাউন করতে হবে। সেই ঝুঁকি আমরা নিতে চাই না।
এসএমএসে ফল পাঠানোর চিন্তা : জানা গেছে, অন্যান্য বছরের মতো এবারও স্ব স্ব শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে এসএসসি-সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে। পাশাপাশি টেলিটক মোবাইলের মাধ্যমে এসএমএস করে পরীক্ষা ফল জানা যাবে। তবে ঘরের বাইরে না গিয়ে কীভাবে সহজেই শিক্ষার্থীদের কাছে ফল পৌঁছে দেয়া যায়, সে বিষয়টি নিয়েও শিক্ষা বোর্ডগুলো থেকে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে এসএমএসে ফল দেয়ার চিন্তা বোর্ডগুলোর আছে। কিন্তু সেটি এই মুহূর্তে কঠিন বলে মনে করছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এই ছুটিতে প্রত্যেকের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ কঠিন কাজ। তবুও চেষ্টা চলছে।